অশান্ত: প্রসূতির মৃত্যুতে পরিজন, এলাকাবাসীর বিক্ষোভ বোলপুরের নার্সিংহোমে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
চিকিৎসার ত্রুটিতে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ উঠল বোলপুরের এক নার্সিংহোমে। বোলপুর পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে পরিজনেরা দাবি করেছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক কেয়া বাগচি এবং নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্যই মারা গিয়েছেন পাপিয়া পাঠক রায় (২৮)। দোষীদের শাস্তির দাবিতে নার্সিংহোমের দরজায় বসে বিক্ষোভ দেখান পরিজনেরা। পুলিশ তদন্তের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। চিকিৎসক, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ গাফিলতির কথা মানতে চাননি। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিকিৎসককে আটক করেছে।
পরিজনেরা জানান, রবিবার সকালে পাপিয়াকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কেয়া বাগচীর অধীনে ছিলেন। পাপিয়ার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিল। তাই প্রসবের নির্ধারিত দিনের দশ দিন আগে, রবিবার তাঁকে ডাক্তারের নির্দেশেই নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। রবিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সিজারের পরে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন পাপিয়া। পরিজনদের অভিযোগ, সিজার হয়ে যাওয়ার পর সেই যে ডাক্তার চলে যান, তারপর আর একবারও প্রসূতিকে দেখতে আসেননি। এ দিকে রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা হতে থাকে পাপিয়ার। বারবার নার্সিংহোমের লোকজনকে জানানোর পরেও তাঁরা কোনও ব্যবস্থা করেননি। মাঝরাত থেকে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।
সেই সময় নার্সিংহোমেই ছিলেন মৃতার মা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘নার্সরা তখন ঘুমাচ্ছিলেন। বারবার ডাকা সত্বেও কেউ আসেননি।’’ সোমবার ভোরের দিকে পাপিয়ার শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে। সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ চিকিৎসক কেয়া বাগচী এসে জানান, প্রসূতি মারা গিয়েছেন। তারপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রসূতির পরিজন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে নার্সিংহোমের দরজায় বসে অবস্থান বিক্ষোভ করেন তাঁরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয় বোলপুর সহ অন্য থানার পুলিশ।
মৃতার স্বামী আনন্দ পাঠকের প্রশ্ন, ‘‘অবস্থা যেখানে প্রথম থেকেই আশঙ্কাজনক ছিল, সেক্ষেত্রে কেন আগে থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না।’’ নার্সদের একাংশের আবার দাবি, রোগীর সমস্যার কথা তাঁরা চিকিৎসককে জানিয়েছিলেন। তারপরেও আসেননি। আনন্দবাবুর কথায়, ‘‘নার্সরা ফোন করলেও ডাক্তার আসে না। এর মানে ডাক্তার-নার্স সম্পর্কও ঠিক নেই। আর কত জনকে এ ভাবে মরতে হবে?’’
অভিযুক্ত চিকিৎসক কেয়া বাগচী অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি জানান, মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী থাকায় তিনি ছিলেন না। তার জন্যই আর আসতে পারেননি। তবে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা করা ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘প্রসূতির অবস্থা এতটা আশঙ্কাজনক জানা ছিল না। তা ছাড়া, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এ সব ক্ষেত্রে একলামসিয়া হয়ে হার্টফেল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখনই একটি ইঞ্জেকশন দিলে মৃত্যুর সম্ভাবনা কমে যায়।’’ পাপিয়ার যে এ রকম অবস্থা হয়েছে সেটা তিনি নার্সদের থেকে সোমবার সকাল ৬টা ৪০ নাগাদ জানতে পারেন বলে দাবি করেছেন। তার পর এসে দেখেন মারা গিয়েছেন প্রসূতি।
চিকিৎসককে নার্সিংহোম থেকে বের করতে গেলে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুলিশকেও। গ্রেফতার করা ছাড়া ডাক্তারকে বের করতে দেওয়া হবে না, এই বলে দরজা আটকান আত্মীয়-পরিজন ও সাধারণ মানুষেরা। এমনকি দেহও প্রথমে বের করতে দেওয়া হয়নি। সকাল দশটা থেকে দু’ঘণ্টা এমনটা চলার পরে পুলিশ কেয়া বাগচীকে আটক করে। দেহ বের করে ময়না-তদন্তের জন্য বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০১৬ সালের ৫ জুন বোলপুরের মিশন কম্পাউন্ডের এই নার্সিংহোমটির উদ্বোধন হয়েছিল। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, এই ঘটনা প্রথম নয়। আগেও তিন বার চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে রোগী-মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ বারও অভিযোগের কাঠগড়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার সহ নার্সিংহোমের মালিক ও কর্তৃপক্ষ। নার্সিংহোমের ম্যানেজার পার্থসারথি কর বলেন, ‘‘পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। গাফিলতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy