সাজগোজ: উত্তরীয় কিনতে ভিড় শিল্পসদন বিক্রয় কেন্দ্রে। সোমবার শান্তিনিকেতনে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
‘ঘট’ রয়েছে দশ হাজার। আর ‘কাঁঠালি কলা’ মেরেকেটে দেড় হাজার!
কথায় আছে, ‘সর্বঘটে কাঁঠালিকলা’। এ কথা খাটে শান্তিনিকেতনের উত্তরীয় প্রসঙ্গেও। সমাবর্তনের বাজারে সেই কলা, থু়ড়ি উত্তরীয়তেই পড়েছে টান। রীতিমতো ‘কাড়াকাড়ি’ অবস্থা। আগে গেলে, আগে পাবে এই ভিত্তিতে বিক্রি হচ্ছে সমাবর্তনের জন্য তাঁতিদের হাতে তৈরি হলুদ রংয়ের উত্তরীয়।
শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অপরিহার্য অঙ্গ উত্তরীয়। বিশ্বভারতীতে নাচ-গান, নাটক, গীতি আলেখ্য, পাঠ, কবিতা, আবৃত্তির পরিবেশন হোক আর অতিথিদের বরণ— প্রায় সব ঘটেই থাকে উত্তরীয়। তবে সেগুলি বাটিকের। আগামী ২৫ মে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন। সমাবর্তন প্রাপক পড়ুয়াদের ঐতিহ্য অনুসারে একটি নির্দিষ্ট উত্তরীয় নিতে হয়। সেটি তাঁতিদের হাতে তৈরি উত্তরীয়। মেলে বিশ্বভারতী সমবায় সমিতি লিমিটেড থেকে। তবে শিল্পসদন থেকেও উত্তরীয় পাওয়া যাচ্ছে। সেখানেও ঘাটতি রয়েছে। যেহেতু প্রায় পাঁচ বছর সমাবর্তন হয়নি, তাই এ বছর প্রায় দশ হাজার পড়ুয়া সমাবর্তনের জন্য আমন্ত্রিত। কিন্তু, জোগান মেরেকেটে দেড় হাজার!
বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, বেশ কিছু ভবন থেকেও সমাবর্তনে হলুদ উত্তরীয় পড়তে হবে— এমন নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এমন আবহে সমবায় খুলতেই উত্তরীয় কেনার লাইন পড়েছে তা মেনে নিয়েছেন বিশ্বভারতী সমবায় সমিতির সম্পাদক দিলীপ ঘোষ। তিনি বলছেন, ‘‘আগের সমাবর্তনে প্রায় আড়াই হাজার উত্তরীয় লেগেছিল। এ বছর বেশি লাগবে ভেবে দু’মাস আগে তাঁতশিল্পীদের পাঁচ হাজার উত্তরীয় করতে বলা হয়। এখনও পর্যন্ত ৫০০টি উত্তরীয় পাওয়া গিয়েছে। আর
আগে থেকে জমিয়ে রাখা হাজার খানেক উত্তরীয় ছিল। তা দিয়েই কাজ সারতে হচ্ছে।’’
দোকানের কর্মীরা জানাচ্ছেন, সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা ও বিকেল সাড়ে চারটে থেকে সন্ধ্যা সাড়ে আটটা, সমবায় খোলা থাকার এই সময়ে পড়ুয়ারা এসে উত্তরীয়ের খোঁজ করছেন। এক একজন আবার ১০-১২টা করে কিনে তবে ফিরছেন। এক কর্মী আবার যোগ করছেন, ‘‘যে ক’টা ছিল প্রায় সবই বিক্রি হয়ে গিয়েছে।’’
১৯১৮ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বিশ্বভারতী সমবায় সমিতি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সময় নাম ছিল ‘শান্তিনিকেতন সমবায় ভাণ্ডার’। ১৯৬৫ সালে রেজিস্ট্রেশনের পরে নাম হয় সমবায় সমিতি। তখন থেকেই বিশ্বভারতীর বিভিন্ন
ভবনের ছাত্রছাত্রী, কর্মী, আশ্রমিকদের পরিষেবা দিয়ে আসছে এই সমবায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জিনিসের
জোগান এই সমবায় সমিতি দিয়ে থাকে। একই ভাবে সমাবর্তনের অন্য পরিধান (পাঞ্জাবি, পায়জামা) তো সমবায় দিচ্ছেই, উত্তরীয়ও মিলছে কেবল এই জায়গা থেকেই। তার ফলেই টানাটানি।
সমবায় সূত্রের খবর, এক জন তাঁতশিল্পী অনেক পরিশ্রম করে দিনে ১৮-২০টি উত্তরীয় বানাতে পারেন। সমবায়ের নিজস্ব তাঁতি রয়েছেন ছ’জন। সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে এখন আর তাঁতশিল্পী পাওয়া যায় না, কারণ বেশির ভাগই একশো দিনের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘সমাবর্তন যখন থেকে শুরু হয়েছে তখন থেকেই এই হলুদ উত্তরীয় নেওয়া বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য। এই কম সময়ের মধ্যেই চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেওয়ার শেষ চেষ্টা করছে সমবায় সমিতি ও তাঁতশিল্পীরা।’’
হাতে আর দু’দিন। তার মধ্যে সব ‘ঘটে’ উত্তরীয় পড়বে তো? প্রশ্ন আর উদ্বেগটা ঘুরছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy