হাতে-হাতে: প্রশিক্ষণ চলছে। নিজস্ব চিত্র
এত দিন তাঁরা রঘুনাথপুর উপ-সংশোধনাগারের জমিতে ফলিয়েছেন আনাজ, ফুল। সেই আনাজই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে বন্দিদের দৈনিক খাবারে। বন্দিদের চাষের কাজে এহেন উৎসাহ দেখেই এ বার তাঁদের বিভিন্ন অর্থকরী চাষের প্রশিক্ষণ দিতে এগিয়ে এল প্রশাসন ও উদ্যানপালন দফতর। লক্ষ্য, সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে তাঁরা যেন আনাজ বা ফুল চাষ করে সংসার চালাতে পারেন।
মঙ্গলবার রঘুনাথপুর উপ-সংশোধনাগারে শুরু হয়েছে ওই প্রশিক্ষণ। এ দিন দুপুর থেকে বিকেল অবধি ঘণ্টা তিনেক ধরে বন্দিদের ব্রকোলি, লাল বাঁধাকপি, চাইনিজ বাঁধাকপি, লেটুস, মাশরুমের মতো অর্থকরী আনাজ চাষের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন উদ্যানপালন দফতরের কর্মীরা। বাধ্য ছাত্রর মতোই জেলের জমিতে হাতে কলমে চাষ শিখেছেন আশিস পাল, আনন্দ বাউরি, চিন্তাহরণ বাউরি, মনপূরণ মাহাতোর মতো ৫৭ জন বন্দী। পরে তাঁদের চাষের খুঁটিনাটি বুঝিয়েছেন উদ্যানপালন কর্মীরা। ওই দফতরের রঘুনাথপুর মহকুমার আধিকারিক তামসী কোলে জানান, এই উপ-সংশোধনাগারের বন্দিরা এমনিতেই চাষে উৎসাহী। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা জেলের মধ্য চাষ করায় চাষের প্রাথমিক বিষয়গুলি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তিনি বলেন, ‘‘শুধু আনাজ চাষই নয় নার্সারি তৈরি করে ফুল ও মশলার চাষ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো বিষয়গুলি নিয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”
গত কয়েক বছর ধরেই রঘুনাথপুর উপ-সংশোধনাগারের বিচারাধীন বন্দিরা চাষ শুরু করেছেন। ঘাম ঝরিয়ে অনুর্বর রুখা কাঁকুড়ে মাটিকে চাষের উপযুক্ত করে জল সেচের মাধ্যমে সংশোধনাগারের মধ্যেই ফলাচ্ছেন সিম, ঢ্যাঁড়শ, বরবটি, লাউ, কুমড়ো, পালং শাক। সম্প্রতি পরীক্ষামূলক ভাবে আনারস ও রজনীগন্ধার চাষও করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি তামসী কোলে এবং সংশোধনাগারের কন্ট্রোলার অভিজিৎ বিশ্বাসের উৎসাহে জেলের মধ্যেই এক ফালি জমিতে হয়েছে অ্যালো ভেরা, বিশল্যকরণী, তুলসী, থানকুনি, কালমেঘ, পাথরকুচি, পুদিনার মতো ভেষজ চাষ। সব মিলিয়ে সংশোধনাগারের ভিতরের জমির প্রায় সবটাই এখন সবুজে ভরা।
অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘জেলের মধ্যে বিভিন্ন আনাজ, ফুল ও ফলের চাষের বিষয়ে উদ্যানপালন দফতর প্রস্তাব দেওয়ার পরেই আমরা বন্দিদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের উৎসাহিত করেছি। কয়েক বছর ধরে ওঁরা নিজেরাই সাফল্যের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের চাষ করছেন।” মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বিভিন্ন কারণে হয়তো বা সামান্য ভুলে ও অপরাধের জন্য এঁরা এখন জেলে বন্দি। কিন্তু তাঁদের অনেকেই স্বভাবগত অপরাধী নন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যাতে তাঁরা আর পাঁচ জনের মতোই স্বাভাবিক জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই বন্দিদের বিভিন্ন ধরনের অর্থকরী চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি, মহকুমাশাসক, রঘুনাথপুর ১ ও কাশীপুরের বিডিও অনির্বাণ মণ্ডল, মানসীভদ্র চক্রবর্তী, রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণ মাহাতো, পুরুলিয়ার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের কৃষি বিশেষজ্ঞ মানসকুমার ভট্টাচার্য প্রমুখ। উদ্যানপালন দফতরের পুরুলিয়া জেলার আধিকারিক সুদীপকুমার ভকত বলছেন, ‘‘সংশোধনাগারের মধ্যে যে ভাবে আনাজ, ফুলের চাষ করেছেন বন্দিরা, তাতে এটা স্পষ্ট, জেল কর্তৃপক্ষের চোখ রাঙানিতে এটা হয়নি। বন্দিরাই ভালবেসে কাজটা করেছেন। আমরা পরবর্তী সময়েও ওঁদের পাশে থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy