Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ বার ‘চলো পুরুলিয়া’

এ বার খাস জেলা সদরে এসে তাঁরা মুকুল রায়ের ছায়া সঙ্গীর ভাই শুভজিতের মুক্তি এবং তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোয় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের গ্রেফতারের দাবি তুলতে চাইছেন।

ডাক: জেলা সদরে সার্কিট হাউসের পাশেই হয়েছে দেওয়াল লিখন। নিজস্ব চিত্র

ডাক: জেলা সদরে সার্কিট হাউসের পাশেই হয়েছে দেওয়াল লিখন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৫৭
Share: Save:

স্কুল শিক্ষক শুভজিৎ মাহাতোর মুক্তির দাবি ক্রমশ গণআন্দোলনের আকার নিচ্ছে। যত দিন গড়াচ্ছে, ততই সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষ ওই দাবিতে সরব হচ্ছেন। এ বার রাজনৈতিক স্লোগানের ধাঁচে ‘পুরুলিয়া চলো’ ডাক দিয়ে দেওয়াল লিখে, পোস্টার সাঁটিয়ে সুর আরও চড়াল শুভজিতের মুক্তির দাবিতে গড়ে ওঠা পুরুলিয়া নাগরিক কমিটি। আজ, শুক্রবার পুরুলিয়া শহরে ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে বড় জমায়েত করতে চলেছে কমিটি।

ওই সংগঠন অরাজনৈতিক বলে দাবি করা হলেও, স্কুল-কলেজের পড়ুয়া, বেকার যুবক, গৃহবধূ, ব্যবসায়ী, দিনমজুরদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাও জড়িয়ে পড়েছেন। গাঁজা পাচারের অভিযোগে ধৃত স্কুল শিক্ষক শুভজিৎ মাহাতোকে ছাড়াতে তাঁরা ইতিমধ্যেই চাষমোড়ে পথে নেমে নিজেদের শক্তি দেখিয়েছেন। এ বার খাস জেলা সদরে এসে তাঁরা মুকুল রায়ের ছায়া সঙ্গীর ভাই শুভজিতের মুক্তি এবং তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোয় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের গ্রেফতারের দাবি তুলতে চাইছেন।

২৯ নভেম্বর মুকুল রায়ের ছায়া সঙ্গী সুরজিৎ মাহাতোর ভাই জয়পুরের বাঁধডি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শুভজিৎকে গাঁজা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতারের খবর ছড়াতেই পুলিশের বিরুদ্ধে অসন্তোষ শুরু হয় জেলায়। রাজনৈতিক স্বার্থে তাঁকে গ্রেফতার করেছে বলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেন।

রবিবার পুরুলিয়া মফস্সল থানার গাড়াফুসড় গ্রাম পঞ্চায়েত সংলগ্ন মাঠে শুভজিতের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বড় সভা করে নাগরিক কমিটি চাষ মোড় এলাকায় মিছিল করে। সে দিনই ঘোষণা করা হয়েছিল, ৮ ডিসেম্বর পুরুলিয়ায় পুলিশ সুপার ও জেলাশাসককে তাঁরা স্মারকলিপি দেবেন। পরে ঠিক হয়, ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে প্রতিবাদ সভাও করা হবে।

সে জন্য জেলার বিভিন্ন গ্রামে দেওয়াল লেখা থেকে পোস্টার পড়তে শুরু করেছে। পুরুলিয়া থেকে চাষমোড় হয়ে জয়পুর পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন জায়গায় দেওয়াল লেখা হয়েছে— ‘নির্দোষ শুভজিতের মুক্তির দাবিতে পুরুলিয়া চলো’, পুলিশের শাস্তি চেয়েও দেওয়াল লেখা দেখা গিয়েছে। পুরুলিয়া শহরের সার্কিট হাউসের কাছেই একটি বাড়ির দেওয়ালে, বাসস্ট্যান্ডের অদূরেও এমন দেওয়াল লেখা হয়েছে। প্রচারপত্রের তলায় লেখা, ‘আজকে শুভজিৎ, কালকে কার পালা? এটাই কি পুরুলিয়া জেলা?’

আদিবাসী কুড়মি সমাজের শাখা সংগঠন কুড়মি সেনার মুখপাত্র নৃপেন মাহাতো বলেন, ‘‘বিবেকের তাগিদেই এই নাগরিক কমিটি গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন দিকে মানুষজন নিজেরাই দেওয়াল লিখছেন।’’

সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। অনেকে হোয়্যাটসঅ্যাপে নিজেদের ডিপি (ডিসপ্লে পিকচার) বদলে কালো প্যাকগ্রাউন্ডে লিখছেন— ‘‘নির্দোষ শুভজিতের মুক্তি চাই’। নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক জন্মেঞ্জয় মাহাতো বলেন, ‘‘সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ শুভজিতের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।’’

২৯ নভেম্বর ভোরবেলায় শুভজিৎকে গ্রেফতার করে পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার পুলিশ। পুলিশের দাবি ছিল, পুরুলিয়া-রাঁচি রাস্তায় নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে নম্বর প্লেটহীন একটি মোটরবাইকে শুভজিৎ-সহ দু’জনকে প্রচুর গাঁজা-সহ গ্রেফতার করে।

যদিও তাঁর পরিবারের দাবি, ভোরবেলায় পুলিশ বাড়িতে এসে স্কুলে চুরি হয়েছে বলে তাঁকে থানায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। পরিবারের অভিযোগ, মুকুল রায়-যোগ থাকার জন্যই মিথ্যা অভিযোগে শুভজিৎকে ধরা হয়েছে।

মুকুলবাবুও অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘কয়েক হাজার যুবক যুবতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নেই বলে তাঁদের নারকোটিক কেস দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুরুলিয়াতেও তাই হয়েছে।’’ তিনি শুভজিৎ এবং যে পুলিশকর্মীরা তাঁকে গ্রেফতার করেছেন, তাঁদের মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন। শুভজিতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন পুরুলিয়া জেলার বহু মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, শুভজিৎ নোংরা রাজনীতির শিকার। তাই অবিলম্বে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছেন তাঁরা।

আন্দোলনে থাকা আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা অজিত মাহাতো বলছেন, ‘‘যে ভাবে বিভিন্ন স্তরের মানুষজন প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন, তাতে স্পষ্ট ইতিমধ্যেই এই দাবি গণআন্দোলনের চেহারা নিতে চলেছে। শুক্রবার আমরা সভা করে প্রশাসনের কাছে শুভজিতের মুক্তির
আবেদন জানাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE