জমজমাট: চড়িদা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
পাতা ঝরার মরসুমে উৎসবের রঙ লেগেছে বাঘমুণ্ডিতে।
মেলা প্রাঙ্গণ বলতে আস্ত একটা গ্রাম। অযোধ্যাপাহাড়ের অদূরে বাঘমুণ্ডির চড়িদা। ছৌ মুখোশের গ্রাম হিসেবেই গ্রামের নামডাক। শুক্রবার সন্ধ্যায় ধামসা মাদলের ছন্দে সেখানে শুরু হল চার দিনের ছৌ-মুখোশ উৎসব। চতুর্ষ বর্ষের এই মেলার উদ্যোক্তা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সহযোগিতায় রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র, ছোটো ও মাঝারি উদ্যোগ এবং বস্ত্রশিল্প দফতর আর ইউনেস্কো।
যে মুখোশ পরে ছৌ শিল্পীরা মঞ্চ মাতান, তা কী ভাবে তৈরি হয় চাক্ষুষ করতে পারবেন মেলায় আসা লোকজন। সঙ্গে থাকছে মুখোশ কেনার সুযোগ। আয়োজকদের পক্ষ থেকে উৎপল দাস বলেন, ‘‘গোটা গ্রামের সমস্ত শিল্পীরাই এই উৎসবে স্টল দিয়েছেন। অনেকেই বাইরের মেলায় পসরা নিয়ে যেতে পারেন না। তাঁরাও গ্রামের মধ্যেই নিজেদের তৈরি মুখোশ বিক্রি করার একটা সুযোগ পেলেন।’’ তিনি জানান, শিল্পীদের গ্রামকে রসিকদের কাছে পরিচিত করা, রসিকদের চাহিদার সঙ্গে শিল্পীদের পরিচয় করানো আর সব কিছুর মধ্যেই শিল্পীদের বাড়তি আয়ের বন্দোবস্ত করতেই এই আয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ এই মেলায় সহযোগিতা করছে। আজ, রবিবার মেলার শেষ দিন।
মেলার মতো ম্যারাপ বেঁধে রঙচঙে দোকান নয়। শিল্পীদের নিজেদের ঘরের দাওয়াতেই ছোট্ট দোকান। সেখানে শিল্পীর নিপুণ হাতে কাগজের মণ্ডের কাঁচা মুখোশে ফুটে উঠছে পুরাণের বিভিন্ন পালার এক একটি চরিত্রের মুখের আদল। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে উৎসবের আয়োজনে হাত লাগিয়েছেন শিল্পীরাও। গ্রামের শিল্পী ভীম সূত্রধর নিজে মেলার বিক্রির জন্য মুখোশ তৈরি করেছেন। কিন্তু আয়োজনের বিভিন্ন বন্দোবস্ত করতে গিয়ে শনিবার সকাল থেকে দোকানই খুলতে পারেননি। বললেন, ‘‘মহিষাসুরমর্দিনী পালা আর রামায়ণ, মহাভারতের বিভিন্ন অখ্যানের চরিত্রদের মুখোশ তৈরি করেছি। বিক্রিবাটাও হচ্ছে ভালই। এই উৎসব শিল্পীদের সরাসরি ক্রেতাদের কাছাকাছি এনে দিয়েছে।!’’ মনোরঞ্জন সূত্রধর নামে আরেক শিল্পী বলেন, ‘‘বেশ ভালই বিক্রি হচ্ছে। অনেক মানুষ আমাদের গ্রামে আসছেন। তাঁদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে।’’
কলকাতার ঠাকুরপুকুর থেকে প্রথম বার এই মেলায় এসেছিলেন সুমন কুণ্ডু। তিনি বলেন, ‘‘দারুন লাগছে। শিল্পীর বাড়িতে তাঁদের কাজ দেখতে পাওয়া একটা দারুন ব্যাপার। সঙ্গে গ্রামের খাবারদাবার।’’ আমেদাবাদের একটি ডিজাইন ইন্সটিটিউটের ছাত্রী অমৃতা সিংহ রায় মেলা এসেছিলেন ছৌ মুখোশ শিল্পীদের কাজ কাছ থেকে দেখবেন বলে। অমৃতা বললেন, ‘‘আমি কলকাতার মেয়ে। নিজের রাজ্যের এই মেলার খ্যাতি বাইরেও শুনেছি। এসে দেখলাম এটা একেবারে অন্য রকমের অভিজ্ঞতা।’’ কলকাতার অজয়নগরের বাসিন্দা বিমলাপ্রসন্ন সিংহ রায় বলেন, ‘‘বাঘমুণ্ডির মেলায় আসার কথা মেয়েই বলেছিল। প্রথমবার পুরুলিয়া এলাম। এটা সত্যিই একটা বড় পাওনা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy