Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সুনসান সাবিরগঞ্জ, তালা বন্ধ বহু বাড়ি

বাম আমলে বোলপুরের শিবপুর মৌজায় শিল্পের নামে ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রতিবাদে সেই সময় আন্দোলনে নামে তৃণমূলই।

আতঙ্ক সুনসান এলাকা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

আতঙ্ক সুনসান এলাকা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৪
Share: Save:

পুলিশকে শাসিয়ে, অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি তুলে রীতিমতো সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমের দৌলতে চাউর হতেই কার্যত পুরুষ-শূন্য হয়ে গিয়েছে শিবপুরের সাবিরগঞ্জ গ্রাম। রাতভর চলেছে পুলিশি অভিযান। বৃহস্পতিবারও গ্রামের পরিবেশ থমথমে। ঘটনার রাতেই বোলপুর এসডিপিও অফিসে জেলা পুলিশ সুপার সুধীর কুমার নীলকান্ত, দুই অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার ও অন্য উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন ডিআইজি
(বর্ধমান রেঞ্জ) রাজেশ সিং। তবে সেই বৈঠক নিয়ে মুখ খুলতে চাননি জেলার পুলিশ সুপার।

বাম আমলে বোলপুরের শিবপুর মৌজায় শিল্পের নামে ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রতিবাদে সেই সময় আন্দোলনে নামে তৃণমূলই। পালাবদলের পর সিদ্ধান্ত বদল করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে ‘গীতবিতান’ আবাসন প্রকল্প, বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথা ঘোষণা করেন। জমিদাতাদের একাংশ এর পরেই ‘শিল্প না হলে জমি ফেরাতে হবে’ এই দাবিতে আন্দোলনে নামেন। বুধবার শিবপুরের সাবিরগঞ্জে অনিচ্ছুক জমিদাতা কৃষকদের নিয়ে সভা করতে আসার কথা ছিল বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের। সভা শুরুর আগেই বোলপুরের তৃণমূল কাউন্সিলর শেখ ওমরের নেতৃত্বে দলের কর্মীরা জড়ো হন। তখনই অনিচ্ছুক চাষিদের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের মারপিট শুরু হয়। জখম হন এক তৃণমূল কর্মী। এমনকী তৃণমূল কর্মীদের আটটি মোটরবাইক আটকে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে।ঘটনায় পরে এলাকায় এসে ডিএসপি কাশীনাথ মিস্ত্রিকে ডেকে হাতের ঘড়ি দেখিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “ক’টা বাজে? ৪.১৫ মিনিট। ৭টা পর্যন্ত সময় দিলাম। ৯টার মধ্যে আমি ঢুকে যাব। এক জনেরও বাড়ি-ঘর রাখব না। তাণ্ডবলীলা খেলে দেব। ভয়ঙ্কর খেলে দেব। আর যারা মেরেছে তাঁদের গ্রেফতার করুন। কোনও কাহিনি শুনব না।’’

ঘটনার গুরুত্ব বুঝে রাতেই বোলপুর এসডিপিও অফিসে জেলা পুলিশ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ)। পরে রাতেই সাবিরগঞ্জ গ্রামে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ। যদিও, অনুব্রতর হুমকির পর থেকেই পুরুষ-শূন্য হয়ে পড়ে সাবিরগঞ্জ। এ দিনও গ্রামে পুলিশ মোতায়েন ছিল। থমথমে গ্রামের পরিবেশ। বেশির ভাগ বাড়িতেই তালা বন্ধ থাকতে দেখা যায়। গ্রামের মহিলাদের মধ্যে পুলিশি ধর পাকড় ও তৃণমূল কর্মীদের হামলার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভয়ে ভয়ে রয়েছেন জমিদাতা পরিবারের অনেকেই। এই সাবিরগঞ্জে প্রায় ১৫০ পরিবারের বাস। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ জনের কম বেশি জমি রয়েছে শিবপুর মৌজায়।

গ্রামের মহিলাদের মধ্যে ফতেমা বিবি, বদরন বিবিরা বলেন, “যে ভাবে কেষ্ট (অনুব্রত মণ্ডল) হুমকি দিয়ে গিয়েছে তারপর বাড়ির পুরুষেরা আর কী ভাবে ঘরে থাকবে। সবাই চলে গিয়েছে। আমরা ভয়ে ভয়ে বাস করছি। জানি না কখন কেষ্টর লোকজন এসে বাড়ি-ঘর ভেঙে দেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mandal Threat Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE