Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বেলুটিতে সরস্বতীর বরে কালীদাস হন মহাকবি

কথিত রয়েছে— গুপ্তযুগে ওই গ্রামের একটি কুণ্ডে সরস্বতীর পূর্ণাবয়ব শিলামুর্তি পাওয়া গিয়েছিল। তা প্রতিষ্ঠা করে পুজোর প্রচলন হয়। পরে কোনও সময়ে হানাদারের হামলায় সেই মুর্তি চূর্ণবিচূর্ণ হয়।

বন্দনা: সরস্বতী মন্দিরে পুজো দিতে ভিড়। সোমবার নানুরের বেলুটি গ্রামে। ছবি:কল্যাণ আচার্য

বন্দনা: সরস্বতী মন্দিরে পুজো দিতে ভিড়। সোমবার নানুরের বেলুটি গ্রামে। ছবি:কল্যাণ আচার্য

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:০২
Share: Save:

সরস্বতীর মূর্তিপুজো হয় না নানুরের সেই গ্রামে। বেলুটি গ্রামের দু’টি স্কুলেও হয় না বাগ্‌দেবীর আরাধনা। বছরের পর বছর ধরে সরস্বতীর খণ্ডিত প্রস্তরমূর্তিই পুজিত হন ওই গ্রামে। পুজোর দিন সকাল থেকেই মন্দিরে মানুষের ঢল নামে। ভিড় জমান দূরদূরান্তের বাসিন্দারাও।

কথিত রয়েছে— গুপ্তযুগে ওই গ্রামের একটি কুণ্ডে সরস্বতীর পূর্ণাবয়ব শিলামুর্তি পাওয়া গিয়েছিল। তা প্রতিষ্ঠা করে পুজোর প্রচলন হয়। পরে কোনও সময়ে হানাদারের হামলায় সেই মুর্তি চূর্ণবিচূর্ণ হয়। খণ্ডিত সেই মূর্তি ফের মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই সময় থেকেই বেলুটিতে সরস্বতী হিসেবে ওই শিলামূর্তিই পুজিত হন।

গ্রামে একটি প্রাথমিক এবং একটি হাইস্কুল রয়েছে। পড়ুয়ারা ওই শিলামূর্তির সামনেই অঞ্জলি দিতে ভিড় জমায়। সোমবার সকালে ওই মন্দিরে হাজির দশম শ্রেণির মেঘনা ভট্টাচার্য, বৃষ্টি মৈত্র, নবম শ্রেণির তণ্ময় ঠাকুর, ষষ্ঠ শ্রেণির রিম্পি মিস্ত্রি। তারা বলে— ‘‘আমরা প্রতি বার এখানেই অঞ্জলি দিই। সঙ্গে থাকে মা-বাবাও।’’

গ্রামের বাসিন্দারাই শুধু নন, পুজো দিতে দূরদূরান্তের মানুষ রবিবার হাজির হয়েছিল মন্দিরে। কেউ কেউ এসেছিলেন কলকাতা, হুগলি, হাওড়া থেকেও। কেন তাঁরা ওই মন্দিরে আসেন? গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, বাইরের এলাকার মানুষকে মন্দিরে টেনে নিয়ে আসে একটি বিশ্বাস। প্রচলিত রয়েছে, এখানেই নাকি দেবী সরস্বতীর সাধনা করে মহাকবি হয়েছিলেন মূর্খ কালিদাস। প্রামাণ্য কোনও তথ্য বা নথি না থাকুক, ওই বিশ্বাসে ভর করেই বছরের পর বছর ধরে পুজোর দিনে প্রত্যন্ত গ্রামটিতে ভিড় জমান অনেকেই।

এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ দিন পুজোর উপাচার হাতে দেখা মিলল কলকাতার উল্টোডাঙ্গার অরুণাভ রায়চৌধুরী, সিয়ানের সোনালী ভট্টাচার্য, আলিগ্রামের সুদীপ্তা মাহাতোদের। তাঁরা বলেন— ‘‘কালিদাস এখানে সাধনা করেছিলেন কি না, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ভাবতে রাজি নই। পরিচিত অনেকের কাছে শুনেছি এখানকার দেবী খুব জাগ্রত। সন্তানের মঙ্গলকামনায় পুজো দিতে এসেছি। তা ছাড়া বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু, সে কথা তো সকলেই জানে।’’

কেন সরস্বতীর অন্য কোনও মুর্তি পুজো করা হয় না? গ্রামের বাসিন্দা অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ মন্দিরের দেবীকে মানেন। তাঁর অবমাননা হবে ভেবেই বোধহয় কেউ অন্য মূর্তি পুজো করেন না।’’ গ্রামবাসী ঝণ্টু বটব্যাল, ধর্মরাজ সাহা জানান— শুধু বেলুটিই নয়, এক সময়ে আশপাশের ৪-৫টি গ্রামেও সরস্বতীর কোনও মূর্তি পুজো করা হতো না। সবাই মন্দিরেই পুজো দিতে আসতেন। আস্তে আস্তে সে সব গ্রামে পুজো চালু হলেও, অনেকেই আজও এখানে পুজো দিতে আসেন।’’

মন্দিরের সেবাইত নবতিপর বটকৃষ্ণ পাণ্ডা ও বছর আশির শ্যামাচরণ পাণ্ডা বলেন, ‘‘পুরুষানুক্রমে শুনে আসছি, এখানেই কঠোর সাধনা করে সরস্বতীর আশীর্বাদ পেয়েছিলেন কালীদাস। সত্যি হোক বা না হোক, বেলুটিতে দেবীর মন্দির রয়েছে। সারা বছর দু’বেলা পুজো হয়।’’ তাঁদের বক্তব্য, জম্মু-কাশ্মীর ছাড়া অন্য কোথাও সরস্বতীর মন্দিরে দু’বেলা নিত্য পুজো হয় বলে জানা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE