বেহাল: এই সেই স্কুল। নিজস্ব চিত্র
স্কুল আছে, অথচ শিক্ষক নেই। পড়ুয়া আছে, তবে স্কুল ভবনে তালা ঝুলছে। গ্রামবাসীর স্বেচ্ছায় দান করা জায়গায় গড়ে তোলা স্কুল এখন শিক্ষক নিয়োগ অভাবে ধুঁকছে। নলহাটি থানার কাদাশির জুনিয়র হাইস্কুলের অবস্থা এখন এমনই।
২০১৩ সালে স্কুলটির শুরু। জন্মলগ্ন থেকে স্কুলটিতে কোনও স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। তিন জন অতিথি শিক্ষক নিয়ে স্কুলটি ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত চালু ছিল। সেই সমস্ত অতিথি শিক্ষকরা বয়সের ভারে আর স্কুল চালাতে পারেননি। গ্রামবাসী জানাচ্ছেন, স্থায়ী শিক্ষকের অভাবে গত বছরের এপ্রিল মাসে স্কুলের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পড়ুয়াদের স্কুল থেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দেওয়া শুরু করেন। গ্রামবাসীর অনেকেই তখন স্কুল উঠে যাওয়া আটকাতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। স্কুল শিক্ষা দফতরের রামপুরহাট মহকুমা পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দেবাশিস রায় চৌধুরী অবশ্য বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। শিক্ষক নিয়োগের ব্যপারে ডিআইকে জানাতে হবে। আর আবেদন করলেই শিক্ষক দেওয়া সম্ভব নয়। কী পরিস্থিতি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে নলহাটি থানার বাউটিয়া অঞ্চলের কাদাশির জুনিয়র হাইস্কুলের সরকারি অনুমোদন মেলে। তারপরেও পঞ্চম থেকে অষ্টম, কোনও ক্লাসের জন্যই কোনও স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে স্কুল চলছিল। স্কুলের এক সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজি আব্দুল হাফিজ জানান, ৭৩ জন পড়ুয়া। দু’জন শিক্ষককে চারটে ক্লাস নিতে হচ্ছিল। কিন্তু, দু’জনেই বয়সের ভারে আর স্কুল চালাতে পারেননি। স্কুলটি চালু রাখার জন্য এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের রাজি করা যায়নি। ছ’মাস যাবত এ ব্যাপারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে আব্দুল হাফিজ জানান। তাঁর কথায়, ‘‘প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে জানানো হয়েছিল। কিন্তু, কোনও নতুন শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না দেখে স্কুলের পড়ুয়াদের অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য প্রস্ততি নেওয়া হয়। গ্রামবাসীর আপত্তিতে সেটি বন্ধ করা হয়েছিল। পরে তাঁদের দাবি মেনেই পড়ুয়াদের টান্সফার সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। উপায় না দেখে স্কুলে তালাও দেওয়া হয়। স্কুলের চাবি নলহাটি এসআইকে দেওয়া হয়।’’
কাদাশির গ্রামের বাসিন্দা উত্তমকুমার ঘোষ, লক্ষ্মীন্ধর ঘোষ, সর্বেশ্বর মণ্ডল, অসীমা ঘোষ, বিবেক সাহারা জানান, কাদাশির গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ভবানন্দপুর হাইস্কুল। স্কুল যাওয়ার জন্য লাগোয়া রাজ্য ঝাড়খণ্ডের ভিতর দিয়ে আড়াই কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়। এ ছাড়াও রাস্তার উপর দিয়ে সব সময় পাথর শিল্পাঞ্চলের গাড়ি যাতায়াত করে। সে জন্য ভবানন্দপুর হাইস্কুলে ছোট ছেলেমেয়েদের পাঠাতে চান না অভিভাবকেরা। এই অবস্থায় গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করে স্কুলটি যাতে চালু থাকে তার জন্য দাবি রাখা হয়। কিন্তু, তারপরেও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। উপায় না থাকায় ছোট পড়ুয়াদের পাঁচ কিলোমিটার দূরেই গিয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে।
নবম শ্রেণির পড়ুয়া বুবাই ঘোষ, ভূমিকা ঘোষরা বলে, ‘‘যেতে আসতেই সময় চলে যাচ্ছে। পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে।’’ কাদাশির গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া ফুলি ঘোষ, তনুশ্রী মণ্ডলদেরও আর্জি, তাদের মুখ চেয়ে গ্রামের স্কুলেই শিক্ষক পাঠাক স্কুল শিক্ষা দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy