Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কারও জ্বর হয়েছে? দোরে পড়ুয়া

স্বাস্থ্য দফতর, পঞ্চায়েত, পুরসভা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য ছাড়াই নিজেদের বাড়ির আশপাশে ডেঙ্গি-বিরোধী ওই কাজে সামিল চিনপাই উচ্চবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির শ’খানেক পড়ুয়া।

সমীক্ষা: ডেঙ্গি খুঁজতে পড়ুয়াদের সেই তালিকা। ছবি: নিজস্ব চিত্র

সমীক্ষা: ডেঙ্গি খুঁজতে পড়ুয়াদের সেই তালিকা। ছবি: নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১৬
Share: Save:

ডেঙ্গি রুখতে গ্রামে গ্রামে ঘুরছে স্কুলের পড়ুয়ারা।

দুবরাজপুরের চিনপাই ও তার সংলগ্ন ৮-১০টি গ্রামে এমনই অভিযান চালাচ্ছে তারা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমীক্ষা চালাচ্ছে। গ্রামবাসীদের কাছে পরিবারের লোকেদের খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি জানতে চাইছে হরেক প্রশ্ন— ডেঙ্গি কী ভাবে হয়, তার মশা কোথায় জন্মায়, বাড়িতে কোথাও জল জমে রয়েছে কি না, নিকাশি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় কি না, রাতে মশারি টাঙানো হয় কি?

স্বাস্থ্য দফতর, পঞ্চায়েত, পুরসভা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য ছাড়াই নিজেদের বাড়ির আশপাশে ডেঙ্গি-বিরোধী ওই কাজে সামিল চিনপাই উচ্চবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির শ’খানেক পড়ুয়া। তাদের পাশে রয়েছেন শিক্ষিক-শিক্ষিকা, জাতীয় সেবা প্রকল্পের ‘প্রোগ্রাম অফিসার’।

বীরভূমে ডেঙ্গি-আতঙ্ক ছড়িয়েছিল জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে। অগস্টে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে অনেকগুণ। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে, অগস্টের শেষ সপ্তাহেই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছিল শ’দুয়েকে। উদ্বেগের কেন্দ্রে ছিল দুবরাজপুর পুরসভা। দুবরাজপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৪ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। ডেঙ্গি নিয়ে ক্রমাগত প্রচারে জেলায় রোগের প্রকোপ কমলেও উদ্বেগ থামেনি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রী আড়ি জানিয়েছেন, এ মাস পর্যন্ত সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে। এখনও পর্যন্ত কাগজে-কলমে কেউ ডেঙ্গিতে মারা না গেলেও উদ্বেগ কাটেনি। সেই ব্লকের একটি স্কুলের পড়ুয়াদের ওই উদ্যোগে খুশি স্বাস্থ্যকর্তারা।

ডেঙ্গির প্রকোপ রুখতে তৎপর ছিল প্রশাসন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর শুধু রোগ নিয়ে প্রচারেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। চিকিৎসা শিবির, মশার বংশবৃদ্ধি রুখতে রাসায়নিক ছড়ানোর পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য নিয়েছে পুরসভা, পঞ্চায়েতের। ঘরে ঘরে বার্তা পৌঁছতে প্রচারে সামিল করতে চেয়েছে স্কুলপড়ুয়াদেরও। স্কুলে স্কুলে মিছিল, প্রার্থনার সময় ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। যাতে ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি ফিরে পরিজনদের সতর্ক করতে পারে।

তেমন প্রচার চলেছে দুবরাপুরের চিনপাই স্কুলেও। তবে মিছিল, প্রার্থনার বাইরে সচেতনতা প্রচারের বৃত্ত আরও একটু বাড়িয়ে নিয়েছে সেই স্কুলের পড়ুয়ারা।

স্কুলপড়ুয়া মহম্মদ জাহির আক্তার, আরজিনা খাতুন, মোহিনী দলুই, রাহুল সিংহ জানায়— তাদের স্কুলে অনেক পড়ুয়াই জাতীয় সেবা প্রকল্পের সদস্য। ওই স্কুলে সেবা প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার বিমলেন্দু সাহা এবং প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ মজুমদার একটি ছাপানো তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন। অবসর সময়ে তা নিয়ে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে পড়ুয়ারা নিজেদের বাড়ির আশপাশে ঘুরে সমীক্ষা চালাচ্ছে। জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শও দিচ্ছে তারা।

অভিযানে সামিল ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছে, হুসেনবাজার, এলেমা, তাপাসপুর, বিশালপুর. দেচাঁদরা গ্রামেও সমীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎবাবু এবং জাতীয় সেবা প্রকল্পের বিমলেন্দুবাবুর বক্তব্য— ছাত্রছাত্রীরা জাতির ভবিষ্যৎ। সমাজের প্রতি ওদেরও কিছু কর্তব্য রয়েছে। সেই কথাই ওদের বলা হয়েছে। ওরা নিজেদের ইচ্ছায় তা পালন করছে। ইতিমধ্যেই শ’পাঁচেক বাড়িতে ঘুরেছে পড়ুয়ারা। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওই সব পরিবারের মধ্যে ৫০টি বাড়ির লোক মশারি ব্যবহার করেন না বা তাঁদের কাছে কোনও মশারি নেই।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রিবাবু বলেন, ‘‘চিনপাই স্কুলের পড়ুয়ারা ঠিক কী ভাবে কাজ করছে তা জানি না। তবে পড়ুয়ারা যদি ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা প্রচারে সামিল হয়, তা অবশ্যই খুব ভাল উদ্যোগ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE