Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলেই পেন, খাতার দোকান খুলল পড়ুয়ারা

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নানুরের প্রত্যন্ত ওই গ্রামে ১৭২টি পরিবারের বাস। অধিকাংশই কৃষিজীবি বা দিনমজুর। গ্রামে রয়েছে ছোট্ট দু’টি মুদিখানা। কিন্তু সেখানে পড়ুয়াদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী মেলে না বললেই চলে।

পসরা: ‘আমাদের দোকান’-এ স্কুলপড়ুয়ারা। নানুরে। —নিজস্ব চিত্র।

পসরা: ‘আমাদের দোকান’-এ স্কুলপড়ুয়ারা। নানুরে। —নিজস্ব চিত্র।

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৬
Share: Save:

‘পাঠশালাটি দোকানঘরে, গুরুমশাই দোকান করে’— কবিতার সেই ছবি অনেকটা বাস্তব হতে চলেছে নানুরের উকরুন্দি–চিৎগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে দোকান খোলা হচ্ছে স্কুলে। পড়ুয়ারা সেখানে পড়াশোনার জিনিস কিনতে পারে। পড়ুয়াদের পরিচালিত সেই দোকানের নাম ‘আমাদের দোকান’। আজ চালু হল সেই দোকান।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নানুরের প্রত্যন্ত ওই গ্রামে ১৭২টি পরিবারের বাস। অধিকাংশই কৃষিজীবি বা দিনমজুর। গ্রামে রয়েছে ছোট্ট দু’টি মুদিখানা। কিন্তু সেখানে পড়ুয়াদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী মেলে না বললেই চলে। ওই গ্রাম থেকে নানুর বা কীর্ণাহার বাজারের দূরত্ব ৬-৮ কিলোমিটার। অনেক সময়ই কাজ ফেলে ছেলেমেয়েদের জন্য সময়মতো পড়াশোনার জিনিস কিনে এনে দিতে পারেন না অভিভাবকেরা। তাই পড়ুয়াদের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকারাও পড়েন সমস্যায়। দিনের পর দিন কারও খাতা থাকে তো থাকে না পেনসিল। কারও কাছে পেনসিল থাকলেও ভাঙা স্লেট।

সমস্যা মেটাতে স্কুলেই দোকান খোলার পরিকল্পনা করা হয়। প্রাথমিক ভাবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেন ২ হাজার টাকা। সেই পুঁজি সম্বল করেই শুরু হচ্ছে দোকান। কী মিলবে সেই দোকানে? পড়ুয়ারাই জানায়— খাতা, পেনসিল, মলাট, রাবার থেকে শুরু করে মিলবে গল্পের বই, চকোলেটও। তা মিলবে খোলা বাজারের থেকে অনেক কম দামেই। ঠিক করা হয়েছে, দোকানের লাভের টাকায় বছরে এক বার শিক্ষামূলক ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হবে। মিড-ডে মিলের পর ক্লাস শুরু হওয়ার আগে এবং ছুটির পর ১৫ মিনিট দোকান খোলা থাকবে। প্রতি দিনের আয়-ব্যয়ের হিসেব লিখে রাখবে পড়ুয়ারা।

এ দিন দোকান সাজানোর ফাঁকে চতুর্থ শ্রেণির নন্দিনী বাগদি, তৃতীয় শ্রেণির করবী হাজরা, প্রিয়ঙ্কা মণ্ডল, চতুর্থ শ্রেণির সুজয় দাস, সুমিত হাজরা বলে— ‘‘ভাবতেই পারছি না যে আমরাই এই দোকান চালাব। আবার আমরাই জিনিস কিনব। আগে খাতা, পেনসিল কিনতে গিয়ে অনেক সময় অসুবিধায় পড়তে হত। এ বারে যে সমস্যা কাটল।’’ খুশি অভিভাবকেরাও। উত্তম হাজরা, সপ্তম দাস, সুমিত্রা হাজরা, শর্মানি হাজরা বলেন— ‘‘দিন আনি দিন খাই। ছেলেমেয়েরা বার বার তাগাদা দিলেও অনেক সময় ওদের প্রয়োজনমতো জিনিস কিনে দিতে পারি না। কখনও কখনও সময়ও থাকে না। এ বার সেই সমস্যা আর হবে না।’’

স্কুলের শিক্ষিকা নাজমা খাতুন, শিক্ষক আবীর মণ্ডল বলেন, ‘‘৫ টাকার কোনও জিনিস বাইরের দোকানে মেলে ৭-৮ টাকায়। সেটাই স্কুলের দোকানে কেনা যাবে ৬ টাকায়। পড়ুয়ারা কম দামে দরকারের জিনিস হাতে পেল, লাভের টাকায় বছরে এক বার শিক্ষামূলক ভ্রমণও হয়ে যাবে।’’

প্রধান শিক্ষক তরুণকান্তি ঘোষ জানান, দোকান চালাতে গিয়ে হাতেকলমে কাজ শিখবে ছাত্রছাত্রীরা। অঙ্ক শেখাও সহজ হবে। অভিজ্ঞতা বলে, অঙ্কে কাঁচা হলেও ছেলেমেয়েরা টাকা-পয়সার হিসেব দ্রুত রপ্ত করে নেয়।’’ নানুর দক্ষিণ চক্রের অবর স্কুল পরিদর্শক শুভেন্দু চৌধুরী বলেন, ‘‘খুব ইতিবাচক পদক্ষেপ। সফল হলে অন্য স্কুলেও এই ব্যবস্থা চালুর কথা ভাবা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nanur School নানুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE