Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গ্রাম পঞ্চায়েতের খরচের ক্ষমতা বাড়ল

রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর শুক্রবার প্রতিটি জেলায় নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানিয়েছে, পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়কেরা এ বার থেকে মাটি কাটার কাজের ক্ষেত্রে সাড়ে চার লক্ষ টাকা ও নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুমোদন দিতে পারবে।

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ০৭:৩০
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের মুখে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির নির্মাণ সহায়কদের আরও বেশি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন করার ক্ষমতা দিল রাজ্য সরকার। এর ফলে কাজের গতি বাড়বে বলেই মত পঞ্চায়েত প্রধানদের। যদিও বিরোধীরা এর মধ্যে রাজনৈতিক সুবিধা দেখছেন।

রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর শুক্রবার প্রতিটি জেলায় নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানিয়েছে, পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়কেরা এ বার থেকে মাটি কাটার কাজের ক্ষেত্রে সাড়ে চার লক্ষ টাকা ও নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুমোদন দিতে পারবে। আগে যা ছিল যথাক্রমে তিন লক্ষ ও দেড় লক্ষ টাকা। বীরভূম জেলা পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘নয়া নির্দেশিকার ফলে পঞ্চায়েতগুলিতে কাজে আরও গতি বাড়বে। পঞ্চায়েত সমিতির উপরেও অনেকখানি চাপ কমে যাবে।’’

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়কদের হাতে বেশি টাকার কাজের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। সে ক্ষেত্রে, প্রকল্প-ব্যয় অনুযায়ী পঞ্চায়েত সমিতির সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অথবা জেলা পরিষদের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অথবা এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অথবা সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ারদের ‘ভেটিং’ বা অনুমোদনের প্রয়োজন হতো।

২০১২ সালের নির্দেশিকা অনুসারে এত দিন কাজ হয়ে আসছিল। কিন্তু পঞ্চায়েতস্তরে কাজের সীমাবদ্ধতা থাকায় উন্নয়নের ব্যাহত হচ্ছিল বলে বিভিন্নস্তর থেকে অভিযোগ উঠছিল। তাই পঞ্চায়েতেই যাতে বেশি টাকার কাজ হতে আর অসুবিধা না হয়, সে জন্য এই নয়া নির্দেশিকা। সাম্প্রতিক নির্দেশে অন্যান্য আধিকারিকদের ওই ক্ষমতা অপরিবর্তিত রেখে নির্মাণ সহায়কদের ‘ভেটিং পাওয়ার’ বাড়ানো হয়েছে।

ওই নির্দেশিকা হাতে পাওয়ার পর পঞ্চায়েত কর্তারা কার্যত হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, বহু প্রকল্প নির্মাণ সহায়কদের ‘ভেটিং’ আওতার ঊর্ধ্বে হয়ে যাওয়ায়, তা অনুমোদনের জন্য মূলত পঞ্চায়েত সমিতিতে ছোটাছুটি করতে হতো তাঁদের। আবার অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতেতে সাব-অ্যাসিন্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বাড়ন্ত। পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব কাজ সামলানোর পরে ওই সব সাব-অ্যাসিন্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়াররা পঞ্চায়েতের প্রকল্প ‘ভেটিং’ করার সময় পেতেন। এর ফলে পঞ্চায়েতের প্রকল্পগুলি ভেটিং হতে দিনের পর দিন পেরিয়ে যেত বলে অভিযোগ।

প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, প্রতিটি পঞ্চায়েত সমিতিতে বিভিন্ন বিভাগে ন্যূনতম চার জন করে সাব অ্যাসিন্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার থাকার কথা। বাস্তবে রয়েছে ১/২ জন। বীরভূমের ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে রয়েছে ন’টি পঞ্চায়েত। সাব অ্যাসিন্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন মোটে দু’জন। একই অবস্থা লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতিতেও। ওই পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে রয়েছে ১১টি পঞ্চায়েত। লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতির অধীনের ঠিবা পঞ্চায়েতের প্রধান রূপা বাগদি এবং ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জগন্নাথ ঘোষ বলেন, ‘‘ভেটিং-এর সমস্যার কারণে অনেক প্রকল্প রূপায়ণে দেরি হচ্ছিল। এ বার সেই সমস্যা অনেকখানিই দূর হয়ে যাবে আশাকরি।’’ একই মত ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তিনি জানান, পঞ্চায়েত সমিতির উপরে ভেটিং-এর চাপ যে নয়া নির্দেশিকার ফলে অনেকখানিই কমে যাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম ও বিজেপি-র রাজ্য কমিটির সদস্য অর্জুন সাহার প্রশ্ন, ‘‘এত দিন ক্ষমতায় থাকার পরে হঠাৎ ভোটের মুখে কাজে গতি আনার কথা মনে হল? এটা দলের লোকেদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক সুবিধাবাদের ফিকির ছাড়া কিছু মনে হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE