কাছাকাছি: ওন্দার রামসাগরে বিজেপি-র পার্টি অফিসের সামনে ভাঙা চেয়ার।
সভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে মাইক হাতে বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি বললেন, ‘‘পুলিশ অফিসারদের বলছি, তৃণমূলকে কিন্তু গ্রেফতার করা চলবে না। বিজেপি মার খাবে। জিভ কেটে নেবেন। হাত পা ভেঙে দেবেন। আর কোনও রেয়াত নেই। আমরা বুঝে নেব।’’ তার মিনিট দশেক পরেই মঞ্চ থেকে একশো মিটার দূরে বিজেপি-র পার্টি অফিসে হামলার অভিযোগ উঠল। মঞ্চে তখন বক্তৃতা দিচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শুক্রবার দুপুর ৪টে। ঘটনাস্থল ওন্দার রামসাগর।
বিজেপি-র অভিযোগ, জেলা সভাধিপতির বক্তৃতায় প্ররোচিত হয়ে তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। সন্ধ্যায় সভা ফেরত তৃণমূলের লোকজন বাঁকুড়ার জয়পুরের রাউতখণ্ডেও বিজেপি-র পার্টি অফিস ভেঙে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
তবে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বিজেপি-ই হামলা করেছে। সভা চলাকালীন পার্টি অফিসের সামনে একা পেয়ে তাঁদের এক কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ঝামেলা আমরা শুরু করিনি। ঝামেলা করেছে বিজেপি। জেলায় এসে ওঁদের রাজ্য সভাপতি প্ররোচনা দিয়ে গিয়েছেন। তার পরেই অশান্তি করার পরিকল্পনা করে ওরা।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খানের বক্তব্য, বিজেপি-র পার্টি অফিসে ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতীরা। তারা দলের কেউ না।
ওন্দা জেলার মধ্যে বিজেপি-র গড় হিসেবে পরিচিত। বাঁকুড়ার শুধু রামসাগর প়ঞ্চায়েতই বিজেপি-র দখলে রয়েছে। বৃহস্পতিবার রামসাগর অঞ্চল ক্রীড়া উন্নয়ন সংস্থার মাঠে সভা করেছিল বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সেখানে বলেছিলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল নমিনেশন তুলতে পারবে তো?’’ ঠিক তার পরের দিনই পাল্টা সভা ডাকে তৃণমূল। একই মাঠে।
জাতীয় সড়ক ৬০ ধরে বিষ্ণুপুর থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার সময়ে রামসাগরে ঢোকার মুখে পড়ে সিংহাটিপাড়া। রাস্তার উপরেই বিজেপি-র পার্টি অফিস। সড়ক ধরে আরও একশো মিটার গেলে সভার মাঠ। সকাল থেকেই মাঠে ছিল পুলিশি পাহারা। পুলিশ মোতায়েন ছিল তালা-বন্ধ পার্টি অফিসের সামনেও। দুপুর ২টো নাগাদ সভা শুরু হয়। তৃণমূলের হিসাবে, লোক হয়েছিল প্রায় হাজার তিরিশেক। গোড়া থেকেই নেতাদের বক্তৃতার মেজাজ ছিল কিছুটা চড়া। তারই মধ্যে অরূপ চক্রবর্তী এই সমস্ত কথা বলে মঞ্চ ছাড়েন।
মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ছবি: শুভ্র মিত্র
অরূপবাবুর পরেই বক্তৃতা দিতে ওঠেন ব্রাত্য বসু। কন্যাশ্রী, সবুজসাথী ইত্যাদি নিয়েই কথা বলছিলেন তিনি। মিনিট দশেক পার হতেই মাঠের পিছনের দিকে শুরু হয় শোরগোল। একটু একটু করে লোকজন উঠতে শুরু করে। মাইক্রোফোনেই মন্ত্রী মঞ্চে উপস্থিত দলের জেলা সভাপতি অরূপ খানকে বলেন, ‘‘আপনার কি মানুষজনের উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই?’’ সভাপতি মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বক্তৃতা চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেন।
তার পরে আরও মিনিট দশেক বক্তৃতা দেন মন্ত্রী। সভা ভেঙে যায়। বিজেপি-র পার্টি অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সামনে পড়ে ভাঙা চেয়ার। জানলার কাচের শার্সি ভাঙা। বিজেপি-র বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘পার্টি অফিসে কেউ ছিলেন না। সেই সুযোগে ওরা বেপরোয়া ভাঙচুর চালিয়েছে। প্রচুর ইট ছুঁড়েছে। তাতে সাধারণ মানুষও আহত হয়েছেন।’’ তাঁর দাবি, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বিজেপি কর্মীদের হুমকি দিচ্ছিল তৃণমূল। বিজেপি-র পতাকাও ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছিল। বিজেপি-র রাজ্য নেতা সুভাষ সরকার এ দিন বলেন, ‘‘আগে হুমকি দিচ্ছিল। এখন সভার নামে লোক জড়ো করে বিরোধীদের উপরে হামলা করছে তৃণমূল।’’
গোলমালের পরে এলাকায় র্যাফ নামে। বিজেপি-র পার্টি অফিসের পাশেই একটি পাড়া রয়েছে। এ দিন বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এলাকা পুরুষ শূন্য। স্থানীয় বাসিন্দা সরস্বতী বাগদি, টুম্পা বাগদি, শ্যামলী বাগদিরা বলেন, ‘‘আমরা কোনও দল করি না। দিন আনি দিন খাই। আমরা আতঙ্কিত হয়ে রয়েছি।’’ তাঁদের দাবি, ইটের ঘায়ে পাড়ার কয়েক জন চোট পেয়েছেন।
জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘তৃণমূলের তরফ থেকে তাঁদের এক কর্মীকে মারধর করার অভিযোগ পেয়েছি। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দশ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি-র তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। এলাকার পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy