Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
ইউনিসেফ-এর তথ্যচিত্র

গ্রামের ছবি বদল দুই স্কুলের হাতে

প্রাথমিক স্কুলের পরিবেশ বদলে দিয়ে একে একে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পুরস্কার এসেছে। এ বার সেই সব স্কুলের সাফল্য নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করতে এল ইউনিসেফ। সম্প্রতি মানবাজার থানার গোবিন্দপুর প্রাথমিক স্কুল ও আড়সা থানার কাঞ্চনপুর প্রাথমিক স্কুলকে নিয়ে শ্যুটিং সেরে গেলেন ইউনিসেফের তিন সদস্য।

শ্যুটিং: গোবিন্দপুর স্কুলের সামনে। নিজস্ব চিত্র

শ্যুটিং: গোবিন্দপুর স্কুলের সামনে। নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

প্রাথমিক স্কুলের পরিবেশ বদলে দিয়ে একে একে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পুরস্কার এসেছে। এ বার সেই সব স্কুলের সাফল্য নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করতে এল ইউনিসেফ। সম্প্রতি মানবাজার থানার গোবিন্দপুর প্রাথমিক স্কুল ও আড়সা থানার কাঞ্চনপুর প্রাথমিক স্কুলকে নিয়ে শ্যুটিং সেরে গেলেন ইউনিসেফের তিন সদস্য। তাঁরা ক্যামেরা-বন্দি করলেন স্কুলের পরিবেশ। বদলে যাওয়ার ইতিহাসের কথা শোনাল পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা। ইউনিসেফের সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ১৮টি স্কুল নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

ইউনিসেফের জেলার দায়িত্বে থাকা অনির্বাণ মল্লিক বলেন, ‘‘দেখা যায়, পুরস্কার পাওয়ার পরে অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষের আর তেমন গা থাকে না। যেন পুরস্কারের স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় তাঁরা ছিলেন। যে সমস্ত স্কুল নির্মল বিদ্যালয়, শিশু মিত্র বা যামিনী রায় পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে, তারা পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকতা কতটা বজায় রেখেছেন, এই ফিল্মের মাধ্যমে তা তুলে ধরা হবে।’’ তিনি জানান, এই তথ্যচিত্র প্রদর্শনের পরে স্কুল বা পড়ুয়ার উন্নয়নে নতুন কোনও বার্তা উঠে আসে কি না, তাও দেখা হবে। নতুন ভাবনার সন্ধান পেলে বা নতুন প্রকল্প গড়ে তোলার মতো রসদের খোঁজ মিললে, তা নিয়েও প্রকল্প গড়া যেতে পারে।

তফসিলি প্রধান গ্রাম গোবিন্দপুরের স্কুলটি আগে টালির বাড়ির চলত। পড়ুয়ার নাম অনেক থাকলেও স্কুলে আসত নগন্য। বছর বারো আগে স্কুলের প্রধানশিক্ষক অমিতাভ মিশ্র সেই ছবিটা বদলানো শুরু করেন। এখন স্কুলে এলে আশ্রমের কথা মনে পড়ে যায় অনেকের। চারপাশে মনীষীদের মূর্তি, বাণী লেখা রয়েছে। স্কুলের বাগানে উৎপাদিত আনাজেই চলে মিড-ডে মিল। মেশিন বসিয়ে পরিস্রুত পানীয় জল খায় পড়ুয়ারা। আকাশের গ্রহ-তারা চেনাতে রয়েছে দূরবীক্ষণ। জৈব সারও তৈরি করে পড়ুয়ারা। পড়াশোনার মানও ভাল। এই স্কুলের পড়ুয়ারা বাড়িতে চাপ দিয়ে শৌচাগারও তৈরি করিয়েছে।

ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা যে দিন গোবিন্দপুরে এসেছিলেন, সে দিন স্কুলে এক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি সরকার। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত দেখা যায়, পুরস্কার পাওয়ার পরে সেই স্কুল আর ধারাবাহিকতা বজায় রাখে না। গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশু মিত্র, নির্মল বিদ্যালয় ও যামিনী রায় প্রভৃতি রাজ্য সরকারের পুরস্কার একের পর এক পেয়েছে। এমনকী, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ বিদ্যালয় পুরস্কারের সম্মানও পেয়েছে। ওরা কিন্তু ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে।’’ তিনি জানান, শুধু স্কুলের মধ্যেই নয়, পড়ুয়ারা বাড়িতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে কি না, তাও শিক্ষকেরা নজরে রাখেন। একটা স্কুল গ্রামে তথা সমাজজীবনে কতটা প্রভাব ফেলতে পেরেছে, তা এরা দেখাচ্ছে। তাঁর সঙ্গেও কথা বলেন ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা।

গোবিন্দপুর স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়াদের সাথে কথা বলার পরে ইউনিসেফের সদস্যেরা গ্রামের ভিতরে যান। খাবার আগে এবং পরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া হয় কি না, স্কুল ছুট কমেছে কি না, প্রতি দিনের জীবনচর্চায় স্বাস্থ্যবিধি কতটা মেনে চলা হচ্ছে তাঁরা খোঁজ নেন। স্কুলের প্রধানশিক্ষক বলেন, ‘‘১১৮ জন পড়ুয়ার মধ্যে দৈনিক ১১২-১১৫ জন পড়ুয়া স্কুলে উপস্থিত থাকে।’’

আড়সা থানার কাঞ্চনপুর প্রাথমিক স্কুল আগে জরাজীর্ণঁ ছিল। সলিলকুমার মাঝি বছর দশেক আগে স্কুলের প্রধানশিক্ষকের দায়িত্বে আসার পর থেকে পাল্টাতে থাকে পরিবেশ। মিড-ডে মিলের আনাজ বাজার থেকে আসে না, স্কুলের বাগানেই পডুয়ারা সব্জি ফলায়। খাবারের জন্য সিমেন্টের টেবিল তৈরি হয়েছে। স্কুলের বাগান আনাজ ছাড়া ফল, ফুল চাষ হয়। স্কুলের ক্লাসঘর ও ভবনে মনীষীদের ছবি ও বাণী রয়েছে। খেলাধুলোর জন্য নানা উপকরণও রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কেও পড়ুয়ারা সচেতন। পড়াশোনার মানও যথেষ্ট ভাল। স্কুল ছুট নেই। আত্মীয়েরা বেড়াতে এলে এলাকার অন্যতম দ্রষ্টব্য জায়গা হিসেবে বাসিন্দারা তাঁদের এই স্কুল দেখাতে নিয়ে আসেন। ২০১৩ সালে নির্মল বিদ্যালয়, ২০১৪ সালে শিশু মিত্র এবং ২০১৬ সালে যামিনী রায় পুরস্কার পেয়েছে। স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৯৯ জন। সকলেই তফসিলি সম্প্রদায়ের। প্রায় সবাই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। সেখানকার বদলে যাওয়াও ক্যামেরাবন্দি করেন ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা।

দুই স্কুলের প্রধানশিক্ষক ইউনিসেফের প্রতিনিধিদের জানান, পুরস্কার পাওয়ায় তাঁদের দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র পুথিগত বিদ্যা নয়, পড়ুয়াদের সার্বিক ভাবে প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলাই তাঁদের লক্ষ্য। তাঁরা সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Documentary Schools UNICEF
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE