প্রতীকী ছবি।
পারিবারিক অল্প কিছু জমি রয়েছে। চাষবাস করে সংসার চলে খান্দু মাঝির। তাঁর পড়শি মাধাই নাগ একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করেন। গ্রামীণ বিদ্যুদয়ণ প্রকল্পে মাস ছয়েক আগে শালতোড়ার বারকোনা এলাকার এই দুই বাসিন্দা বিনা খরচে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন। গোড়ায় খুশির অন্ত ছিল না। কিন্তু এখন কপালে চিন্তার ভাঁজ।
কেন?
সংযোগ নেওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচের বিল আসেনি। বকেয়া বিলের অঙ্ক বাড়তে বাড়তে কত হয়েছে, জানেন না সেটাও। খান্দু বলেন, “এক লপ্তে বেশি টাকা দেওয়া ক্ষমতা আমার নেই।” মাধাই আক্ষেপ করছেন, “অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বিদ্যুৎ পেয়েছি। এ বার এক সঙ্গে ছ’মাসের বকেয়া চেয়ে বসলে করবটা কী?’’ শুধু এই দু’জনই নয়, বারকোনা গ্রামের অনেক পরিবারই এই সমস্যায় পড়ছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেও বিল না আশায় দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।
গত বছর মার্চে বাঁকুড়া জেলার ১০০ শতাংশ গ্রামীণ মানুষকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। তার পরে পরিষেবা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে সমস্যাটা কোথায়?
বিদ্যুৎ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “বারকোনা এলাকার বহু বিদ্যুৎ উপভোক্তারই এখনও বিলের ‘মাস্টার কার্ড’ তৈরি হয়নি। সেই জন্যই বিল যাচ্ছে না।” উপভোক্তাদের সমস্যাটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন শালতোড়া ব্লক বিদ্যুৎ দফতরের স্টেশন ম্যানেজার বিশ্বনাথ বিশ্বাস।
বিল যায় না বিদ্যুৎ দফতরের সমস্যার জন্য। কিন্তু এই সমস্ত ক্ষেত্রে অনেক সময়ে গ্রাহকদের উপরেই আঁচটা পড়ে। বিল বকেয়া জানিয়ে কেটে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। সম্প্রতি এমনই সমস্যার মুখে পড়েছিলেন বড়জোড়ার দাঁ পাড়ার বাসিন্দা গোবিন্দ দাস।
তিনি জানান, ২০১৪ সালে গ্রামীণ বিদ্যুদয়ণ প্রকল্পে সংযোগ পেয়েছিলেন তিনি। প্রথম বিলটা আসে গত বছর অক্টোবরে। প্রায় আট হাজার টাকা। পেশায় দিনমজুর গোবিন্দবাবু সেই বিল মেটাতে না পারায় কিছু দিনের মধ্যেই তাঁর বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “বারবার বিদ্যুৎ দফতরে ছুটেছি। শেষে কিস্তিতে বিল মেটানোর ব্যবস্থা করে বিদ্যুৎ দফতর।” তাঁর দাবি, একই সমস্যায় পড়েছিলেন দাঁ পাড়ার আরও অনেকে। বারকোনা গ্রামের বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এক লপ্তে মোটা অঙ্কের বকেয়া মেটাতে না পারলে ফের অন্ধকার নেমে আসবে অনেক ঘরে।
এই পরিস্থিতিতে বারকোনার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের পাশে দাঁড়িয়েছে সারা বাংলা বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতি (অ্যাবেকা)। রবিবার বারকোনা গ্রামে গিয়েছিলেন সংগঠনের জেলা সম্পাদক স্বপন নাগ। গ্রাহকদের নিয়ে গ্রামে বৈঠক করেন তিনি। স্বপনবাবু বলেন, “বিদ্যুতের বিল পাচ্ছেন না অনেকে। শীঘ্রই তাঁদের নিয়ে বিদ্যুৎ দফতরে যাব। এক লপ্তে গোটা বিলের টাকা মেটাতে না পারলে কোনও ভাবেই যাতে ওই সমস্ত গ্রাহকের বাড়িতে সংযোগ কেটে দেওয়া না হয় সেই দাবি জানাব।’’
গ্রামীণ বিদ্যুৎ সংযোগের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলার পরে এই সমস্যা কেন?
জেলা বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা বলেন, “গ্রামীণ বিদ্যুদয়ণের কাজ একটি সংস্থাকে দিয়ে করানো হয়েছিল। ওই সংস্থা সমস্ত গ্রাহকদের সঠিক রিপোর্ট পেশ করতে পারেনি বলেই কোথাও বিল যাচ্ছে না। কোথাও মিটার বসানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে।”
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ সুখেন বিদ এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “গ্রাহকেরা সময় মতো বিল পাচ্ছেন না বলে বহু জায়গা থেকেই অভিযোগ উঠছে। এই ধরনের সমস্যা যাতে দ্রুত কাটিয়ে নেওয়া যায় নানা বৈঠকে বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের তা বলেছি।” তাঁর আশ্বাস তাঁর এক লপ্তে বিল মেটাতে না পারলে গ্রাহকদের ধাপে ধাপে বিল মেটানোর সুযোগ করে দেওয়া হবে।
গ্রামীণ বিদ্যুদয়ণ প্রকল্পের জেলা আধিকারিক শ্রীনিবাস রাউত বলেন, “গ্রাহকেরা বিল না পেলে বিদ্যুৎ দফতরে অভিযোগ জানাতে পারেন। তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy