Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দুঃস্থ পড়ুয়াদের পাশে প্রাক্তন শিক্ষকেরা

২০১৬ সালে গড়ে উঠেছিল কীর্ণাহার প্রবীণ সমিতি। তার আগে ওই সংস্থার তরফে নিঃসঙ্গ, অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে খোঁজখবর নিতেন ওই সমিতির সদস্যরা।

পড়াশোনা: কীর্ণাহারের স্বেচ্ছা পাঠদান কেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র

পড়াশোনা: কীর্ণাহারের স্বেচ্ছা পাঠদান কেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
কীর্ণাহার শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৬:৪০
Share: Save:

ওঁরা সবাই স্কুল থেকে অবসর নিয়েছেন দীর্ঘদিন আগে। কিন্তু কেউ ছাত্র-দরদী মন হারিয়ে ফেলেননি। সেই টানেই দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের জন্য খুলে ফেলেছেন স্বেচ্ছা পাঠদান কেন্দ্র। তাঁরা সবাই কীর্ণাহার প্রবীণ সমিতির সদস্য। ওই সংস্থার দায়িত্বেই দীঘলডাঙ্গা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে শুরু হয়েছে বিনা খরচের স্বেচ্ছা পাঠদান কেন্দ্রটি।

২০১৬ সালে গড়ে উঠেছিল কীর্ণাহার প্রবীণ সমিতি। তার আগে ওই সংস্থার তরফে নিঃসঙ্গ, অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে খোঁজখবর নিতেন ওই সমিতির সদস্যরা। তা ছাড়া পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়াতে স্কুলে স্কুলে সাবান, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ বিলি করতেন তাঁরা। করা হয় স্বাস্থ্যপরীক্ষা শিবিরও। সম্প্রতি ওই সমিতি শুরু করে স্বেচ্ছা পাঠদান কেন্দ্রটি। সমিতি সূত্রে খবর, আপাতত একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে শুরু হয়েছে পাঠদান কেন্দ্র। ইংরেজি, অঙ্কের পাশাপাশি পড়ানো হচ্ছে সব বিষয়। ইতিমধ্যেই পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। শনিবার ওই কেন্দ্রে পড়ুয়াদের মধ্যে দেখা গেল ময়ূরেশ্বরের মল্লারপুর বালিকা বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা অর্চনা দাস, বর্ধমানের কাঁদরা হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুকুমার দাস, লাভপুরের জামনা-ধুব্রবাটি হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আবুল লায়েশ মহিউদ্দিনের মতো বিভিন্ন স্কুলের ১০ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাকে।

তাঁরা বলেন— ‘দীর্ঘদিন শিক্ষকতার সুবাদে দেখেছি অনেক ছাত্রছাত্রীই পরিবারের প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। তাদের বাড়িতে লেখাপড়ায় সাহায্য করার কেউ নেই। নেই টিউশন নেওয়ার মতো আর্থিক পরিস্থিতিও। সম্ভাবনা থাকলেও ওই ছেলেময়েরা অবস্থাপন্ন পরিবারের পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। সেই সমস্যা দূর করতেই এই উদ্যোগ।

লাভপুর যাদবলাল হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক দীনবন্ধু দাস, কীর্ণাহার হাইস্কুলের রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়, ভালাস হাইস্কুলের সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী জানান— স্কুলে পড়ানোর সময়েই পিছিয়ে পড়া ওই ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু করার তাগিদ ছিল। সময়-সুযোগের অভাবে ইচ্ছা তখন পূরণ হয়নি। এ বার তা হল।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এই উদ্যোগে পড়ুয়া, অভিভাবকেরা খুশি। দ্বাদশ শ্রেণির নিশা দাস, একাদশ শ্রেণির রুম্পা দাস, কৌশিক সাহা বলে, ‘‘এত দিন পড়া বুঝতে অসুবিধা হলে সমস্যায় পড়তাম। বাড়িতে লেখাপড়া বোঝানোর কেউ নেই। নেই টিউশনি পড়ার টাকাও। স্বেচ্ছা পাঠদান কেন্দ্র চালু হওয়ায় সব সমস্যা মিটেছে।’’

পূর্বসূরিদের এই উদ্যোগে গর্বিত বর্তমানেরা। কীর্ণাহার শিবচন্দ্র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নীলকমল বন্দ্যোপাধ্যায়, কীর্ণাহার তারাপদ স্মৃতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শুভশ্রী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁদের পদক্ষেপ প্রশংনীয়। আমরা সব রকম ভাবে পাশে থাকার চেষ্টা করব।’’ প্রবীণ সমিতির সম্পাদক অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কয়েক দিনের মধ্যে অন্য ক্লাসের পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের ব্যবস্থাও করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE