Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

একা মহিলা বুদ্ধিবলে রুখে দিলেন ডাকাতি

মাঝরাতে অস্ত্র নিয়ে গৃহস্থ বাড়িতে ঢুকেছিল ডাকাতদল। বিপদ বুঝে একটা ঘরে ঢুকে দরজায় খিল তুলে দেন বাড়ির কর্ত্রী। ফোন করেন পড়শি, আত্মীয়দের। প্রৌঢ়ার উপস্থিতবুদ্ধিতে বানচাল হয় দুষ্কৃতীদের ছক।

আতঙ্ক: ডাকাত হানার পর বাড়িতে লক্ষ্মী চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

আতঙ্ক: ডাকাত হানার পর বাড়িতে লক্ষ্মী চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৭
Share: Save:

মাঝরাতে অস্ত্র নিয়ে গৃহস্থ বাড়িতে ঢুকেছিল ডাকাতদল। বিপদ বুঝে একটা ঘরে ঢুকে দরজায় খিল তুলে দেন বাড়ির কর্ত্রী। ফোন করেন পড়শি, আত্মীয়দের। প্রৌঢ়ার উপস্থিতবুদ্ধিতে বানচাল হয় দুষ্কৃতীদের ছক। তবে মহিলার ফোন পেয়ে ওই বাড়িতে ঢুকে ডাকাতদের মারধরে গুরুতর জখম হন গৃহকর্ত্রীর ছেলের হবু বৌয়ের বাবা, ভাই।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে সিউড়ি শহরের সাজানোপল্লিতে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু ওই দুষ্কৃতী-হানায় আতঙ্কে গোটা এলাকা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭ মাস আগে সিউড়ির কালীবাড়ি সংলগ্ন ভাড়াবাড়ি ছেড়ে সাজানোপল্লিতে একতলা বাড়ি কিনেছিলেন লক্ষ্মী চট্টোপাধ্যায়। স্বামীহারা লক্ষ্মীদেবী পাথরচাপুড়ি স্কুলের শিক্ষাকর্মী। ওই বাড়িতে দোতলা তৈরির কাজ চলছে এখন। প্রৌঢ়ার একমাত্র ছেলে সুদীপ্তশেখর ভিনজেলায় একটি বিএড কলেজের শিক্ষক। বাড়িতে একাই থাকেন লক্ষ্মীদেবী। বৃহস্পতিবার অবশ্য তাঁর দিদি এসেছিলেন। ছিলেন বাড়ির কাজে নিযুক্ত চারজন মিস্ত্রি। তাঁদের তিন জন বাড়ির বাইরে একটি অস্থায়ী ছাউনিতে ছিলেন। বাড়ির সিঁড়ির নীচে ছিলেন এক জন।

পুলিশ জানায়, গভীর রাতে জনাপাঁচেক দুষ্কৃতী বাড়িতে ঢোকে। তাদের মুখ ঢাকা ছিল। প্রথমেই অস্থায়ী ছাউনিতে ঢুকে দুই রাজমিস্ত্রিকে বেঁধে ফেলে তারা। অন্য জনকে বাড়ির লোককে ডাকতে বলে। তাঁর নাম শেখ রাজু। রাজু বলেন, ‘‘কাকিমাকে (লক্ষ্মীদেবী) না ডেকে চিৎকার করে এক প্রতিবেশীর নাম ধরে ডাকতে ডাকি। যদি পাড়ার লোক কিছু বোঝে।’’ চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় সিঁড়ির নীচে ঘুমিয়ে থাকা মিস্ত্রির। বিপদ হয়েছে ভেবে বাড়িতে ঢোকার লোহার দরজা খুলে দেন। কিন্তু লক্ষ্মীদেবীর ঘরে ঢুকতে পারেনি দুষ্কতীরা। ওই মহিলার ঘরের সামনেও তালাবন্ধ লোহার গেট ছিল।

লক্ষীদেবী বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে বারান্দায় বেরিয়ে দেখি রাজুকে নিয়ে ওরা প্রায় ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বুঝে যাই ডাকাত পড়েছে। দরজার তালা ভেঙে ওরা যখন ঘরে ঢুকতে যাচ্ছে, সেই ফাঁকে দিদিকে নিয়ে একটা ঘরে ঢুকে খিল, ছিটকিনি তুলে দিই। ফোন করি পড়শি, আত্মীয়দের।’’ এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা জানিয়েছেন, আগ্নেয়াস্ত্র দেখে ভয়ে কেউ বেরতে পারেননি। কিন্তু পাড়ায় ডাকাত পড়েছে সেটা জেনে গিয়েছিলেন। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা লোহার দরজা খোলার চেষ্টা করে বিফল হয়। প্রৌঢ়ার ফোন পেয়ে ওই বাড়িতে পৌঁছন সুদীপ্তবাবুর হবু শ্বশুর গুরুদাস মুখোপাধ্যায় ও শ্যালক অর্ক। দু’জনেই দুষ্কৃতীদের আক্রমণের মুখে পড়েন। লক্ষ্মীদেবী জানান, লোহার রডের আঘাতে মাথা ফাটে গুরুদাসবাবুর। অর্কের পা ভেঙে যায়। এরপর এলাকা ছেড়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। আহত দু’জন হাসপতালে চিকিৎসাধীন। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে ওই এলাকার কয়েকটি নির্মীয়মান বাড়িতেও হানা দিয়েছিল ডাকাতরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Robbery Miscreants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE