Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দক্ষিণের কড়চা

‘আমি প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞাপন জগতের কারিগর। সেই সূত্রেই সত্যজিৎ রায়ের সাথে পরিচয়।... ফেলুদার ছবি আঁকার সুযোগ এলো এর অনেক দিন পরে। তখন তিনি ঘরে-বাইরের কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন। তখনকার দেশের সম্পাদক সাগরময় ঘোষকে তিনি অনুরোধ করেন, আমার নাম করে আমাকে দিয়ে অলংকরণ করাতে বলেন।’

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০০:২৬
Share: Save:

ছবির দেশে, কবিতার দেশে

‘আমি প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞাপন জগতের কারিগর। সেই সূত্রেই সত্যজিৎ রায়ের সাথে পরিচয়।... ফেলুদার ছবি আঁকার সুযোগ এলো এর অনেক দিন পরে। তখন তিনি ঘরে-বাইরের কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন। তখনকার দেশের সম্পাদক সাগরময় ঘোষকে তিনি অনুরোধ করেন, আমার নাম করে আমাকে দিয়ে অলংকরণ করাতে বলেন।’

বাঁধানো হাতের লেখায় এক তরুণ আঁকিয়েকে চিঠিটি লিখেছিলেন প্রবীণ ইলাস্ট্রেটর সমীর সরকার, ২০০৬ সালে। ওই চিঠি এবং প্রয়াত শিল্পীর বেশ কিছু কাজ এক জায়গায় সাজিয়ে দিয়েছেন চিঠির প্রাপক অর্ক পৈতণ্ডী। তার প্রায় সবই একটা দীর্ঘ পর্ব ধরে শারদীয় দেশ বা আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত। কার লেখা নেই? সমরেশ বসুর ‘বিবর’ থেকে শংকরের ‘নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি’ বা ‘সীমাবদ্ধ’, নীললোহিতের ‘ফুলমণি উপাখ্যান’, পরশুরামের ‘রাজমহিষী’, তারাশঙ্করের ‘সখীঠাকরুণ’, সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘স্বর্গের স্বাদ’, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বিষ’। তাঁর হাতে ফেলুদার শুরু ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’ দিয়ে, শেষ ‘শকুন্তলার কণ্ঠহার’-এ। দেখতে-দেখতে বাংলা সাহিত্যের কয়েক দশকের সৃজনপর্ব এক লহমায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে যেন। গোড়ায় সমীরের একটি পোর্ট্রেট এঁকে কার্যত গুরুদক্ষিণাও দিয়েছেন অর্ক।

‘পূর্ব-পশ্চিম‘ বইয়ের প্রচ্ছদের খসড়া। ডানদিকের প্রচ্ছদটি প্রকাশিত।

কিন্তু সেই মুখে পৌঁছনোর আগেই অবশ্য এক বার দাঁড়িয়ে যেতে হয় নরেশ গুহর ‘তাতার সমুদ্র ঘেরা’ কাব্যগ্রন্থের একটি কপিতে কবিরই করা কিছু কাটাকুটি, অদলবদল দেখে। আলগোছে শুরু হয়ে যা কিছুটা ভিন্ন পাঠ যেন এনে দেয় কখনও-কখনও। কেন করেছিলেন কবি এই কাটাকাটি? পরে কি ফের ছাপতে চেয়েছিলেন? তা হলে কেন তা ফেলে গেলেন ছোট পত্রিকার সম্পাদকের ঘরে? বহু দিন পরে ধুলো ঝেড়ে তার ‘উজ্জ্বল উদ্ধার’ করেছে সেই পত্রিকা, অহর্নিশ, গ্রীষ্ম ১৪২২ সংখ্যায়।

কমনীয় হলদে মলাটের চওড়া বইটিতে আর যিনি প্রবল ভাবে উপস্থিত, তিনি কবি গণেশ বসু। যিনি এক ঝটকায় বলে দেন ‘শাসক উন্মাদ হলে উন্মাদ আশ্রমগুলি শূন্য হয়ে যায়’। যাঁর জন্য চিঠিতে সতেরো পঙ্‌ক্তির পদ্যে বিষ্ণু দে লিখছেন ‘তোমার কবিতা ওঠে জ্ব’লে জ্ব’লে ফসফরাসরাশি’। লিখছেন, ‘তোমার বিবাহপত্র পেয়ে খুশি হয়েছি। বিয়ে করাটা না করার চেয়ে ভালো।’ কিন্তু শুধুই এই সব অপ্রকাশিত চিঠি বা তেজস্ক্রিয় পঙ্‌ক্তিমালা নয়। বন্ধু, ছাত্র, গুণমুগ্ধদের বেশ কয়েকটি লেখা নিয়ে গোছানো এই ‘সম্মাননাপত্র’।

আর রয়েছেন প্রয়াত আর কে লক্ষণ, কার্টুনিস্ট দেবাশীষ দেবের ছবি আর লেখায়। এ ছাড়া আগাথা ক্রিস্টি ১২৫ বছরে, শতবর্ষে বিজন ভট্টাচার্য এবং ইত্যাদি। তার মধ্যে তরুণতরদের কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ সবই রয়ে গেল। রইল কৌশিক মজুমদারের করা চোখ টানা প্রচ্ছদটিও। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থেকে প্রায় বছর কুড়ি হেঁটে আসা, হোঁচট খাওয়ার পাশে ‘সম্পাদক’ নামে কোনও মশাই নেই, এই ভিন্নতা স্বস্তি দেয়, অস্বস্তিও। সঙ্গে সমীর সরকারের করা কিছু প্রচ্ছদ, তাতার সমু্দ্র ঘেরা-র একটি পৃষ্ঠায় কবি নরেশ গুহর করা কাটাকাটি ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব-পশ্চিম উপন্যাসের প্রচ্ছদের তিনটি খসড়া (সব ক’টিই অহর্নিশের এই সংখ্যায় প্রকাশিত)।

আবর্তে ফের

নানা জেলা থেকে যত পত্রপত্রিকা বেরোয়, তার একটা বড় অংশ লোককথা ও আঞ্চলিক ইতিহাস নির্ভর। কিন্তু তার পাশাপাশি কবিতা, ভ্রমণকথা, স্মৃতি আলেখ্য, সাধারণ জ্ঞান, বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ এমনকী ধারাবাহিক উপন্যাসও ছাপে বাঁকুড়ার খাতড়া থেকে প্রকাশিত ষান্মাসিক দক্ষিণাবর্ত পত্রিকা। এ বছরের গ্রীষ্ম সংকলনে দেউলপাড়ার বুদ্ধমন্দির বা বাণিজ্য কুঠির স্মৃতির পাশে রয়েছে বেশ কিছু কবিতা, প্রতি বারের মতোই। মুদ্রণ প্রমাদও অব্যাহত। তবে সবচেয়ে চোখ টানে দু’টি জিনিস। বইয়ের একেবারে শেষে বাৎসরিক গ্রাহক তালিকা, যা প্রায় কোনও পত্রিকাতেই দেখা যায় না। আর একেবারে শুরুতে প্রচ্ছদে যামিনী রায়ের আঁকা পটচিত্রে যোদ্ধা।

শেষ নাহি যে

আবু সৈয়দ আইয়ুব, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় থেকে হাল আমলের সুনীল গঙ্গেপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ—বাংলা সাহিত্যের দিক্‌পাল গবেষক ও সাহিত্যিকরা প্রত্যেকেই নিজের মতো করে রবীন্দ্রচর্চায় নিয়োজিত থেকেছেন বারবার। কিন্তু এ পথের ‘শেষ নাহি যে...।’ তাই সেই চর্চার ধারাতেই নতুন সংযোজন হুগলির শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলন, হারাধন রক্ষিত সম্পাদিত রবীন্দ্রচর্চা বইটি। অরুণকুমার বসু, প্রণতি মুখোপাধ্যায়, অভ্র বসুর মতো প্রাতিষ্ঠানিক গবেষকদের পাশাপাশি বেশ কয়েক জন ভিন্ন পেশার রবীন্দ্র অনুরাগীর লেখাও সংকলিত হয়েছে বইটিতে। তবে অজস্র মুদ্রণ প্রমাদ বিষয়ে সম্পাদকের আরও একটু সচেতন হওয়া দরকার ছিল।

সরশঙ্কা

এক বুক শাপলা নিয়ে পড়ে থাকা, তা কি নিছকই এক জলাশয়, না কি আরও কিছু, যার ব্যাপ্তি ছড়িয়ে আছে ইতিহাসের গভীর ওঠা-পড়ায়, স্থানীয় গালগল্প আর ধানিজমি-মাটি, আটপৌরে মানুষের কথনে। দাঁতনের ভট্টর কলেজের সহযোগিতায় সেই সরশঙ্কা দিঘিকেই জীবনের নানা কোণ থেকে দেখেছে বিবিধ পত্রিকা। আকারে শীর্ণ, কিন্তু চিন্তাভাবনায় নিষ্ঠার ছাপ স্পষ্ট। জৈষ্ঠ্যের এই বিশেষ সংখ্যাটি সম্পাদনা করেছেন অতনুনন্দন মাইতি।

বুনো ছবি

ঝরা পাতার উপরে নিঃশব্দে পা ফেলে এগিয়ে আসছে কেউ, কোথাও বা ঝোপের আড়ালে শীতল দু’টি চোখ— টানটান দেওয়াল জুড়ে মায়াবী আলোর তলায় সেই সব ছবির পিছনে অবশ্য লুকিয়ে আছে আদ্যন্ত এক গল্প। উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ, কখনও বা আরও দূরের। এমনই সব জল-জঙ্গলের এক রাশ বুনো ছবির প্রদর্শনী হয়ে গেল হোটেল আইটিসি সোনার-এ। আয়োজক ‘সোসাইটি ফর হেরিটেজ অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল রিসার্চ’। জয়দীপ ও সুচন্দ্রা কুণ্ডুর সঙ্গে প্রদর্শনীতে ছিল ধীমান ঘোষ এবং শিলাদিত্য চৌধুরীর তোলা ছবিও। উত্তর-দক্ষিণের বন-জঙ্গলের সেই সব ছবির পিছনে চুপ করে থাকা বুনো সুঘ্রাণও উঠে এল তাঁদের গল্পে।

নেশার ছলনে

কারও আসক্তি মদে, কারও মাদকে। কারও তামাকে সুখ, কারও কাশির সিরাপে। পান-দোক্তা কবেই সেকেলে হয়ে গিয়েছে। বর্তমান প্রজন্ম মত্ত টুইটারে-ফেসবুকে। চিকিৎসক ও মনোবিদদের মতে সে সবও নেশার জিনিস বই কী! এ রকম হরেক নেশা ও আসক্তিই শ্রমজীবী হাসপাতালের মুখপত্র ‘শ্রমজীবী স্বাস্থ্য’র সাম্প্রতিক সংখ্যার মূল আলোচ্য। নেশাজনিত বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনার কথা বিশদে তুলে ধরেছেন চিকিৎসকেরা।

ছবিকর

উপেন্দ্রকিশোর থেকে সুকুমার— বাঙালির ফটোগ্রাফি নিয়ে আগ্রহের সূচনা ১৯ শতকের গোড়া থেকেই। তিনিও সেই পথেরই পথিক। বর্তমানে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের ডেপুটি ম্যানেজার পদে কর্মরত। তবে নেশা ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়া। তাই পেশার চাপ সামলেও যে কোনও ছুটির ভোরে তাঁকে ক্যামেরা হাতে ঘুরতে দেখা যায় গাঁয়ে-গঞ্জে। লেন্স বন্দি করেছেন দুর্গাপুরের গ্রাম, অন্ধ্রপ্রদেশের পাহাড় থেকে শুরু করে বেনারসের গঙ্গার ঘাট। চলচ্চিত্রের ছাত্র হিসেবে পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে পড়াকালীন সংস্পর্শে এসেছেন অমল পালেকার, সুরেশ সাবারিয়ার মতো ব্যক্তিত্বের। হাতে-কলমে শিখেছেন আলোকচিত্রী দিলীপকুমার বসুর কাছে। সব মিলিয়ে পেশায় না থেকেও ছবি তোলার জগতে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন কল্লোল মজুমদার। ইতিমধ্যে কোরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, কানাডা-সহ প্রায় ৪০টি দেশে তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের ফটোগ্রাফি বিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালাতেও তাঁকে নিয়মিত দেখা যায়। স্বীকৃতির তালিকাটিও দীর্ঘ। ইউনেস্কো স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট থেকে মিলেছে ‘আর্টিস্ট ফিয়াপ’ সম্মান। ফেলোশিপ পেয়েছেন ‘ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ফটোগ্রাফি’ থেকেও। ছবি তোলার পাঠ নিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি বইও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE