Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দক্ষিণের কড়চা

ডাকে চিঠি এসেছে উত্তর কলকাতার সেই গঙ্গা-জলের গন্ধ-ভাপা গলিতে—‘তোমরাও এসো গো’। এ বারের মা-দুগ্গার পুজোয় সোনাগাছির মেয়েদের নেমন্তন্ন। লালমাটির দেশ থেকে আসা সেই চিঠিতে কী ঘোর আন্তরিকতা। সোনাগাছির মেয়েরা বলছেন—চিঠি পড়লেই কান্না পেয়ে যায়।

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৩৩
Share: Save:

ডাকে এসেছে চিঠি ‘তোমরাও এসো’

ডাকে চিঠি এসেছে উত্তর কলকাতার সেই গঙ্গা-জলের গন্ধ-ভাপা গলিতে—‘তোমরাও এসো গো’। এ বারের মা-দুগ্গার পুজোয় সোনাগাছির মেয়েদের নেমন্তন্ন। লালমাটির দেশ থেকে আসা সেই চিঠিতে কী ঘোর আন্তরিকতা। সোনাগাছির মেয়েরা বলছেন—চিঠি পড়লেই কান্না পেয়ে যায়।

অনেক কান্না জমে রয়েছে বিষ্ণুপুরের সেই ছোট্ট পল্লিতেও। এ-পাড়ার ছেলেপুলেরা শহরের মণ্ডপে পুজো দেখতে গেলে বাঁকা চোখে ছ্যাছ্যা তো কম শোনেনি। এ বার তাই পুজোটা নিজেরাই করবেন বলে ঠিক করেছেন ওঁরা। মণ্ডপ, প্রতিমা, পুজোর আর পাঁচটা জোগাড়-যন্তর সবই নিজে হাতে সামাল দিচ্ছেন বিষ্ণুপুরের মালা, মঞ্জু, পদ্মারা। বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জ পাওয়ার হাউস রোডর ওঁরা সব মিলিয়ে প্রায় দুশো জন। চাঁদা দিয়েছেন সকলেই, কেউ বা প্রতিমার পুরো দামটাই ধরে দিয়ে বলছেন—‘‘একান্ত আমাদের পুজো। তবে নেমন্তন্ন সকলের।’’

ভোরের রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ গলা ছাড়তেই জল ভরা চোখে ওঁরা নেমে পড়েছেন কাজে। আর যে মাত্র সাতটা দিন। মণ্ডপ বাঁধা থেকে পুজোর উপাদান জোগাড়। সঙ্গে চলছে পুজোর ক’টা দিন নাচ-গান-আবৃত্তিতে সান্ধ্য আসরের মহড়া।

পুজো তাঁদের দ্বিতীয় বছরে পড়ল। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির পক্ষে দীপা দাস জানান, ওঁদের ছেলেমেয়েরা ‘ভদ্রপাড়া’য় ঠাকুর দেখতে গেলেই রেরে করে তেড়ে আসতেন ‘বাবু’রা। গত বছর সেখান থেকেই জেদটা দানা বেধেছে। সে বার নমো নমো করে পুজো হলেও এ বার বাজেট প্রায় দু’লক্ষ। মালারা বলছেন, ‘‘আমাদের উদ্যোগ দেখে ভদ্রপাড়ার লোকজনেরাও এগিয়ে এসেছেন সাহায্য করতে। পুজোর দিনগুলিতে মণ্ডপেই থাকছে পাত পেড়ে খাওয়ার আয়োজনও। আমরা সকলকেই নেমন্তন্ন করেছি। চিঠি গিয়েছে সোনাগাছি অন্য সব পল্লিতে।’’

তবে পুজোকে ঘিরে খানিকটা যেন বেঁচে থাকার লড়াইটাও ঝালিয়ে নিতে চাইছেন মঞ্জুরা। কথায় কথায় বলে চলেন, বছর দু’য়েক আগে আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে পুজোর অনুমুতি আদায় করে নিয়েছে সোনাগাছির মেয়েরা। সেই শুরুটা ধরে রাখতেই এ বার বিষ্ণুপুরও পায়ে পায়ে হাঁটা শুরু করেছে।

বাস্তবের দেবীরা

ওঁরা সকলেই সমাজের অন্ধকার থেকে আলোয় উঠে আসা সাধারণ মেয়ে। তবু লড়াইয়ের গুণে ওঁরা অনন্যা। পুজোর আগে দুই মেদিনীপুরের এমনই কয়েক জন সংগ্রামী নারীর জীবনকথা নিয়ে প্রকাশিত হল ‘দুই মেদিনীপুরের দুর্গারা’। গত ৮ অক্টোবর পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের চাঁদকুড়িতে ‘কথা-মেঘ’ সাহিত্য পত্রিকার কার্যালয়ে এই বিশেষ শারদ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়। ২০১০ সাল থেকে বছরে দু’বার শান্তনু অধিকারী এবং গৌতমকুমার পাত্রের যুগ্ম সম্পাদনায় এই সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। এ বারের শারদ সংখ্যায় দুই মেদিনীপুরের ৩০ জন লড়াকু মহিলার কথা ঠাঁই করে নিয়েছে। পত্রিকা প্রকাশে উপস্থিত ছিলেন সবংয়ের প্রত্যন্ত গ্রামের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত মাদুর শিল্পী পুষ্পরানি জানা। সংগ্রামী মেয়েদের কথা প্রাণ পেয়েছে ভাস্করব্রত পতি, চন্দন রাউথ, প্রলয়কান্তি হাজরাদের কলমে। রয়েছে কলেজে পাঠরতা জামবনির দরিদ্র বধূ ছবি দাস, দেশপ্রাণের সমাজকর্মী সবিতা মাল, সবংয়ের সাঁতারু সাগরিকা হাজরা, ঘুঁটেকুড়ানি থেকে রামায়ণ গানের বেতার শিল্পী হয়ে ওঠা বন্দনা দাস অধিকারীর জীবন কাহিনি।

বাজাও বাঁশি

জঙ্গলে পশুপাখিদের সঙ্গে ভীষণই সখ্য ছিল বাঁশিওয়ালা রাখাল বালকের। রাখালের বাঁশির সুরে জঙ্গলে বারোমাস আনন্দময় পরিবেশে দিন কাটত বন্যপ্রাণদের। সেই সুরে আকাশের তারাও হেসে উঠত। এ দিকে, রাজপ্রাসাদে যুদ্ধক্লান্ত রাজামশাইয়ের দীর্ঘ দিন ঘুম আর আসে না। শেষ পর্যন্ত রাখালের বাঁশির সুর শুনে ঘুমিয়ে পড়েন রাজা। কেবল রাজামশাইয়ের জন্য ঘুমপাড়ানি বাঁশি বাজাতে গিয়ে প্রাসাদ-বন্দি বাঁশিওয়ালার বাঁশিতে আর সুর ওঠে না। এ দিকে, রাখাল না থাকায় সুরহীন জঙ্গলে মন ভাল নেই পেঁচা, ময়না, টিয়া, হরিণের। আকাশে তারাও আর ওঠে না। শেষ পর্যন্ত রাখালবন্ধুকে প্রাসাদের কয়েদ থেকে মুক্ত করে ফিরিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গলের বন্ধুরা। ভুল বুঝতে পেরে রাজামশাইও নিজের মুকুট খুলে ফেলেন। সঙ্গীদের নিয়ে হাজির হন জঙ্গলে। প্রকৃতির মাঝে রাখালের বাঁশিতে ফের বেজে ওঠে হারানো সুর। সকলে গেয়ে ওঠে শিল্পীর স্বাধীনতার গান। মঞ্চজুড়ে ৬৮ জন খুদের হাতের সঞ্চালনে মঞ্চস্থ হল পুতুল নাটক ‘বাজাও বাঁশি’। ‘ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যাকাডেমি’র কর্মশালা ভিত্তিক এই প্রযোজনাটি সংস্থার রামকিঙ্কর মঞ্চে মঞ্চস্থ হল পর পর দু’দিন। গত ১০ ও ১১ অক্টোবর রামকিঙ্কর মঞ্চে বিভিন্ন স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের কোনও প্রবেশ মূল্য ছাড়াই পুতুল-নাটকটি দেখানো হল। বিশিষ্ট কবি শুভ দাশগুপ্তই এর নাট্যকার, গীতিকার ও সুরকার।

ছকভাঙা

সত্তরের দশকে বাদল সরকারের হাত ধরে একদল তরুণ স্বপ্ন দেখেছিল থিয়েটার হবে ‘হাটে মাঠে ঘাটে— যেখানে মানুষ, সেখানে’। কিছু জেদি তরুণ-তরুণী আজও সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে সেই স্বপ্ন দেখে চলেছেন। সেই স্বপ্নের ফসল উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ার নবীন নাট্যগোষ্ঠী ‘চেনা আধুলি’। চেনা ছকের বাইরে দাঁড়িয়ে ওই গোষ্ঠীই আয়োজন করল ‘তৃতীয় ধারার নাট্যোৎসব ২০১৫’। গত ২-৪ অক্টোবর ওই উৎসব আয়োজিত হল হালিশহরের রামপ্রসাদ বিদ্যাপীঠে। প্রথম দিন অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ‘চেনা আধুলির’ গানে। এর পরে অভিনয় হয় ‘হালিশহর আবহমান’-এর ‘ভবঘুরে’ এবং ‘পরিচয়’ গোষ্ঠীর নাটক ‘এলাদিদি’র। ভিন্নতার ছাপ ছিল দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানেও। লোকগানের পরে ছিল নাটক ‘অন্ধকারের নদী’। পরিবেশনায় ‘হালিশহর সাংস্কৃতিক সংস্থা’। শেষ দিনে কথোপকথনে ছিলেন জিতেন নন্দী। তবে, সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় ‘চেনা আধুলি’র নিজস্ব প্রযোজনা ‘খেলনা নগর’। নবারুণ ভট্টাচার্যের এই উপন্যাসকে সংস্থা তৃতীয় ধারার নাটকে এক অভিনব শৈলীতে পরিবেশিত করে। শুধু ব্যতিক্রমী নাট্য পরিবেশনাতেই নয়, ব্যতিক্রম ছিল উৎসবের মেজাজেও। কোনও প্রবেশ মূল্য, বিজ্ঞাপন ও প্রাতিষ্ঠানিক অনুদান ছাড়াই এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। অন্য ধারার এই উৎসবে কিছু তরুণ-তরুণীর চেনা স্রোতের উল্টো হাঁটার এই প্রতিস্পর্ধা এলাকার সংস্কৃতি কর্মীদের মন জয় করেছে।

অযান্ত্রিক

প্রাগার্য সভ্যতার উপাসিত দেবী থেকে দুর্গাপুজোর উৎপত্তির ইতিহাস, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন আমেরিকার গোপন বিমানঘাঁটি থেকে শুরু করে রামায়ণের খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জমজমাট ‘অযান্ত্রিক’ পত্রিকার আগমনি সংখ্যা। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় আক্ষেপ করেছিলেন, বাংলায় চিত্রকলার ইতিহাস নিয়ে তেমন চর্চা হয় না বলে। ‘পটচিত্রকলা’ প্রবন্ধটি পটুয়া শিল্পীদের সম্যক পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঋত্বিক ঘটকের গল্পগুলি নিয়েও আলোচনা রয়েছে। অশোকনগর থেকে প্রকাশিত, নিরুপম চক্রবর্তী সম্পাদিত পত্রিকাটির কবিতা বিভাগে রত্নেশ্বর হাজরা, হিন্দোল ভট্টাচার্য, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, আব্দুস শুকুর খানেরা ছুঁতে চান নাগরিক ও গ্রাম্য জীবনের মারপ্যাঁচ। উপরি পাওনা পাঠ অভিজ্ঞতা ও ফিরে দেখা বিভাগ দু’টি।

দূর গাঁয়ের দুগ্গা

কয়েক দশক আগেও পিতৃ তর্পণের দিনটিতে আপামর বাঙালির ঘুম ভাঙত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠে। রেডিওতে ‘জাগো দুর্গা’-র রেশ মিলিয়ে যেতে না যেতেই পুজোতলায় ঢাকি ঢাকে কাঠি দিয়ে জানান দিত মায়ের আগমনি বার্তা। সে দিন গিয়াছে। এখন মহালয়ার ভোর মানেই ডিজিটাল প্রযুক্তি আর কোটি কোটি টাকার স্পনসরসিপ নিয়ে চ্যানেলে চ্যানেলে দেবী দুর্গার আবাহন-অনুষ্ঠান। সে অনুষ্ঠান শুধু আর মহানগরের স্যাটেলাইট চ্যানেলে নয়, জেলার প্রত্যন্ত এলাকার কেবল চ্যানেলেও। উন্নত মানের প্রযুক্তি, দামি ক্যামেরা বা এডিটিং মেশিনের সুবিধা ছাড়াও ১৯৯৬ সাল থেকে ফি বছর মহালয়ার ভোরে সাঁইথিয়ার কেবল চ্যানেল ‘মিত্র ভিশন’ তাদের নিজস্ব কেবল নেটওর্য়াকে সাঁইথিয়ার বাসিন্দাদের দেখিয়ে আসছেন আগমনি অনুষ্ঠান। কখনও নাটকের আঙ্গিকে, কখনও গীতিনাট্যর সাহায্যে আবার কখনও বা সরাসরি প্রচার করে। এ বার তাদের নিবেদন ছিল সংস্থার প্রযোজনায় স্থানীয় ‘নীলমেঘ অ্যাকাডেমি’-র ব্যবস্থাপনা ও সহযোগিতায় ‘দূর গাঁয়ের দুগ্গা’।

পথের সন্ধানে

গুরুর থেকে ঠিক কী কী নিয়েছেন শিষ্য? শ্রীরামকৃষ্ণের কোন ভাবের উপর দাঁড়িয়ে আছেন বিবেকানন্দ? ওই আত্মজিজ্ঞাসা থেকেই নরেন থেকে বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার সন্ধান করেছেন ড. অমৃতকুমার নন্দী তাঁর ‘শ্রীরামকৃষ্ণের বিবেকানন্দ’ গ্রন্থে। তবে, নিছক কোনও জীবনীগ্রন্থ নয়। ‘কমলিনী প্রকাশন’ থেকে প্রকাশিত ওই গ্রন্থ প্রকৃত পক্ষেই হয়ে উঠেছে শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবধারার দর্পণে বিবেকানন্দকে অবলোকন। ওই গ্রন্থের আগেই অবশ্য নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আবাসিক মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ঝাড়গ্রাম ননীবালা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃতবাবু ডুব দিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃতের নির্যাস নির্মাণে। যা পূর্ণ রূপ পায় তাঁর ‘সংসার সংসারী শ্রীরামকৃষ্ণ’ গ্রন্থে। যে বই এক কথায় সংসারী মানুষের জীবনশৈলীর শিক্ষা দেয়। ভক্তিভাব থেকে কর্মযোগ, সেখান থেকে মুক্তি— এক জটিল জীবন রহস্যকে ঝরঝরে ভাষায় উপলব্ধির পথ নির্দেশ করেছেন লেখক।

পরিধি ছাড়িয়ে

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘পদ্মানদীর মাঝি’তে কুবের মাঝিদের বিশিষ্ট ভাষার সন্ধান দিয়েছিলেন। সেই ভাষাই যেন গান হয়ে ওঠে ভাটিয়ালির সুরে। সেই ঐতিহ্যের হদিস মেলে ইপ্সিতা, সায়ন্তন, সোহম, সৌপ্তিক, বিশ্বজিৎ, সানি, অচীনদের প্রথম অ্যালবাম ‘পরিধি’তে। ৭টি গানে ‘দিবস রজনী’ জুড়ে রমণী ভাবনা, পূর্ববঙ্গের বিশিষ্ট ‘নাইয়ার’দের জীবন-কথা স্থান পেয়েছে। সাজনা, ইনসানিয়াৎ, বুঁদ নামে তিনটি হিন্দি গানে প্রচলিত ‘ফিউশনের’ কারিকুরি ধরা পড়ে। ভাল লাগে ইপ্সিতা ও সায়ন্তনের ডুয়েট বা সৌপ্তিকের ভায়োলিন, পিয়ানোর সুর। তবে ‘ফেরা যায় না’ গানটির কথা জোরাল হওয়ার দাবি রাখে। অ্যালবামটির ‘বাঁচার আশা’ গানটি ঝুমুর, ভাদু, ভাটিয়ালি-সহ লোকগানগুলি ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করে।

বুনো কিস্‌সা

সবে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। কর্মস্থল কোচবিহারের শালবাড়ি। খবর ছিল প্রচুর চোরাই কাঠ আসছে। সব শালকাঠ সিজ করলেন ওই তরুণ অফিসার। রাতে আবাসনে ঘুমোচ্ছেন, এমন সময় দরজায় ঠক ঠক। দরজা খুলতেই কপালে ঢেকল আগ্নেয়াস্ত্র। অফিসারকেই অপহরণ করল কাঠ মাফিয়ার লোকজন। বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিতে হল সব কাঠ। রেঞ্জার হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল সমীর মজুমদারকে। তার পর উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বর্তমানে পুরুলিয়ায় এডিএফও হিসেবে কর্মরত। টানা তিরিশ বছরের কর্মজীবনে জঙ্গলকে দেখেছেন কাছ থেকে। অপহরণকারীদের হাত থেকে রেহাই মিলেছে। ঝুঁকি নিয়ে কাঠ পাচারকারীদের ধরতে ঘন জঙ্গলে অপেক্ষা করেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ঝাড়গ্রামে লোকালয়ে ঢুকে বাইসনকে তাড়াতে গিয়ে জখমও হয়েছেন। তেমনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হওয়া হাতির দাঁত কাটতে কাটতে রাত হয়ে যাওয়ায় হাতির দলের ঘেরাওয়ে পড়ে কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন। জঙ্গল জীবনের তাঁর এমন রঙিন সব অভিজ্ঞতা সমীরবাবু পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন ছোটগল্পের মোড়কে। নিজের জীবন থেকে তুলে আনা গল্পগুলি নিয়ে তিনটি ছোটগল্পের সংকলনও প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি সেই তিনটি সংকলন নিয়েই কলকাতার একটি প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ করল— ‘নাম জঙ্গল রহস্য’। অফিসের কাজ, জঙ্গলে ঘোরা সব সামলেও কোনও দিন কলম থামাননি। মেদিনীপুরের বাসিন্দা, একদা একটি দৈনিকের সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা সমীরবাবুর কথায়, ‘‘প্রথম প্রথম ধাতস্থ হতে সময় লেগেছিল। পরে মনে হয়েছিল, অভিজ্ঞতার কথা লিখে যাই। যাঁরা কাজ করতে আসবেন, তাঁদের ভাল লাগবে। যাঁরা জঙ্গলকে ভালবাসেন, তাঁদেরও ভাল লাগবে।’’

আশ্রয়দাতা

আসানসোল খনি শিল্পাঞ্চলের প্রথম দৈনিক পত্রিকার পথ চলা শুরু তাঁর হাত ধরেই। উঠতি সাংবাদিকেরা স্নেহের ঠাঁই পেতেন তাঁর সেই পত্রিকাতেই। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ৭৬ বছর বয়সে কলকাতার ঢাকুরিয়ায় নিজের বাসভবনে মারা গেলেন সেই সত্যরঞ্জন কর্মকার। সম্প্রতি জেলার প্রবাদ প্রতিম ওই সংবাদকর্মীকে স্মরণ করল আসানসোলের ‘দাঁড়াও পথিকবর’ দেওয়াল পত্রিকা। তাঁর স্মরণে অনুষ্ঠান করলেন আসানসোল সংবাদকর্মীরাও। দু’টি সভাতেই প্রয়াত সম্পাদককে স্মরণ করলেন দীর্ঘ দিনের সঙ্গী সত্যসুন্দর বক্সির মতো কয়েক জন। সেখানেই শহরের একটি রাস্তা তাঁর নামে রাখার দাবিও উঠল। ১৯৫৬ সালে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা ও সম্পাদনার কাজ শুরু করেন সত্যরঞ্জনবাবু। ১৯৮০ সালে বাংলা দৈনিক এবং পরে একটি ইংরেজি পত্রিকাও প্রকাশ করতেন। ‘দাঁড়াও পথিকবর’-এর সম্পাদক বিদ্যুৎ দাসের কথায়, “সব বয়সের মানুষের সঙ্গে অনায়াসে মিশতে পারতেন সত্যরঞ্জনবাবুর।’’ সত্যসুন্দরবাবুরা জানান, সত্যরঞ্জনবাবুর সম্পাদিত ‘দৈনিক লিপি’ পত্রিকাতেই আসানসোলের বহু সাংবাদিকের হাতেখড়ি। তাঁর নামে রাস্তা হওয়ার দাবিতে সায় দিয়ে বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বছর চৌত্রিশ আগে আসানসোল থেকে সত্যরঞ্জনবাবুর নেতৃত্বে ওই দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হতে শুরু করে। মনে হয়েছিল শহরের মর্যাদা যেন কয়েক গুণ বেড়ে গেল। ওঁর নামে অবশ্যই রাস্তা হওয়া দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE