Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দক্ষিণের কড়চা

অনেকেই তো বাড়িতে ঝুলন করেন। সেটা একটা শখ। ওঁরাও করেছেন। ঝুলনে পাহাড় থাকে, ঝরে পড়ে ঝরনা। পাশ দিয়ে বয়ে যায় নদী। ওঁদের ঝুলনেও মাটিতে গড়া পাহাড় আছে। তার ধাপে-ধাপে চা-বাগান। মোটেই মিছিমিছি নয় কিন্তু, সত্যি করে। দার্জিলিং পাহাড় আর তার পায়ের কাছে সোঁদা মেঘের ছায়ায়, হিমেল হাওয়ায় যে চা গাছ একটু-একটু করে বাড়ে, তা এখন মানিয়ে নিতে শিখছে শুকনো গরমের সঙ্গে। তার যে বাসা বদলেছে—দার্জিলিং থেকে সোজা দুর্গাপুর।

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

দুর্গাপুরে দার্জিলিং

চায়ের হাওয়া বদল

অনেকেই তো বাড়িতে ঝুলন করেন। সেটা একটা শখ। ওঁরাও করেছেন। ঝুলনে পাহাড় থাকে, ঝরে পড়ে ঝরনা। পাশ দিয়ে বয়ে যায় নদী। ওঁদের ঝুলনেও মাটিতে গড়া পাহাড় আছে। তার ধাপে-ধাপে চা-বাগান। মোটেই মিছিমিছি নয় কিন্তু, সত্যি করে।

দার্জিলিং পাহাড় আর তার পায়ের কাছে সোঁদা মেঘের ছায়ায়, হিমেল হাওয়ায় যে চা গাছ একটু-একটু করে বাড়ে, তা এখন মানিয়ে নিতে শিখছে শুকনো গরমের সঙ্গে। তার যে বাসা বদলেছে—দার্জিলিং থেকে সোজা দুর্গাপুর।

টেগোর অ্যাভিনিউয়ের সেই বাসার মালিক দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের কর্মী দেবদাস স্বর্ণকার। ক্যারাটের শিক্ষক হিসেবে তাঁর ভাল পরিচিতি আছে। শহরের একাধিক স্কুলের পড়ুয়াদের তিনি ক্যারাটে শেখান। সেই ক্যারাটের দৌলতেই তাঁর চা পাতাদের সঙ্গে পরিচয়।

গল্পটা ছ’বছরের পুরনো। ২০০৮-এ ক্যারাটে শেখাতে এক বার দার্জিলিং গিয়েছিলেন দেবদাসবাবু। সেখানে চা বাগান দেখে এতই আপ্লুত হয়ে পড়েন যে ঠিক করেন, বাড়িতে যে করেই হোক চা বাগান করবেন। ছাত্রেরা খুব বারণ করেছিল। বলেছিল, ঠান্ডা দেশের গাছ দুর্গাপুরের গরমে বাঁচবে না। কিন্তু তিনি নাছোড়। শেষ পর্যন্ত দশটি চারা নিয়ে তবেই তিনি দুর্গাপুরে ফেরেন।

তখন জানুয়ারি মাস। বাড়ি ফিরেই বাগানে মাটি ঢেলে পাহাড়ের মতো ঢাল তৈরি করে নেন দেবদাসবাবু। এমন ঢাল, যাতে জল না দাঁড়ায়। তার পরে একটি-একটি করে পুঁতে দেন চারা। গোড়ায় কোনও গোলমাল হয়নি। কিন্তু ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই রোদের তেজ বেড়ে গেল। চা চারাগুলোর প্রাণ যায়-যায়।

ভেবে-চিন্তে নিজেই একটা উপায় বের করে ফেলেন দেবদাসবাবু। বিছানার মোটা চাদর দিয়ে ছাউনি করে চারার উপরে। দিনে তিন বার করে জল দিয়ে ছাউনি ভেজানো শুরু হয়। এর পরে আর তেমন কোনও সমস্যা হয়নি।

একটা থেকে আর একটা দেড় ফুট করে তফাতে চারা পুঁতেছিলেন দেবদাসবাবু। এখন গুঁড়ি পুষ্ট হয়েছে। কুঁড়ি আর ফুল আসছে। তবে কাঁচা পাতা থেকে খাওয়ার মতো চা তৈরি করার অনেক হ্যাপা। দেবদাসবাবু বা তাঁর স্ত্রী লিলির তাতে উত্‌সাহও বিশেষ নেই। বরং সত্যিকারের চা গাছ দেখতে যে শহরের লোকজন তাঁদের বাগানে উঁকি দেয়, তাতেই তাঁরা খুশি।

এ তো যে সে ঝুলন নয়। দক্ষিণে ঘুরতে আসা চা পাতার হাওয়া বদলও বটে!

শতবর্ষে জগদীশ

১৯৭৮ সালে শিলাবতীর বন্যায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ছেলে সমীরণের মৃত্যু তাঁকে গর্বিত করেছিল। আবার বিরোধী রাজনীতিতে বিশ্বাসী সহকর্মীকে অবলীলায় দিল্লির এমপি বাংলোর চাবি দিয়ে চলে এসেছিলেন তিনি। মেদিনীপুরের বাম রাজনীতির অন্যতম পুরোধা জগদীশ ভট্টাচার্যের জন্ম শতবর্ষে তাঁকে নিয়ে অজস্র স্মৃতির মালা গাঁথল গড়বেতা থেকে প্রকাশিত আলোর জোয়ার পত্রিকা। জগদীশবাবুর জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের বরিশাল জেলায়, ১৯১৪ সালের ১৭ই এপ্রিল। দর্শনে স্নাতক জগদীশবাবু গড়বেতা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেছেন প্রায় তিরিশ বছর। পঞ্চাশের দশকের গোড়া থেকেই অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য জগদীশবাবু। ৬৪-তে দল ভাগ হলে চলে আসেন সিপিএমে। গড়বেতা লোকাল কমিটির প্রথম সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১-এ ঘাটাল কেন্দ্র থেকে জিতে লোকসভায় যান। রয়েছে দু’টি প্রবন্ধের বই। মাও জে দং-এর কবিতার অনুবাদ করেছেন। ‘গণপতি গড়গড়ি’ ছদ্মনামে লিখেছেন রম্য রচনা। ২০০১ সালের ৯ মার্চ এসএসকেএম হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হন। ছেলে অনুপম ভট্টাচার্য প্রকাশিত পত্রিকাটিতে তেমনই কিছু কবিতা ও রম্য রচনা পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে।

হেই সামালো

বাংলা তথা ভারতের রাজনীতির এককালের ভরকেন্দ্র মুর্শিদাবাদকে নিয়েও আঞ্চলিক ইতিহাস-নির্ভর একাধিক কাজ হয়েছে। তবে ভূমিপুত্রকন্যাদের সুবিধে হল, অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা প্রাথমিক উপাদানগুলি ব্যবহার করার সুযোগ পেয়ে যান সহজে। হয়তো বাংলায় হাজার বছরের কৃষক বিদ্রোহ এবং মুর্শিদাবাদ (বাসভূমি প্রকাশন) গ্রন্থে সম্পাদক, বহরমপুরের অরূপ ভদ্র চেষ্টা করেছেন বাংলার কৃষক বিদ্রোহের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের যোগসূত্র বিশ্লেষণ করতে। তাঁর মতে, প্রথাগত ইতিহাসচর্চায় নিম্নবর্গীয়দের তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাদের কথা তুলে ধরাই এই বইটির উদ্দেশ্য। কৈবর্ত বিদ্রোহ, সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন, নকশাল আন্দোলন-সহ একাধিক বিষয় ধরে মোট আটটি প্রবন্ধ গাঁথা হয়েছে বইটিতে। সবই মুর্শিদাবাদ জেলার প্রেক্ষিতে। সেগুলির প্রতিপাদ্য নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকতে পারে। কিন্তু বইয়ের শেষে কৃষক বিদ্রোহের শহিদদের তালিকা, চিত্তপ্রসাদের আঁকা কয়েকটি ছবি এবং দুষ্প্রাপ্য কিছু ফটোগ্রাফ বাড়তি আকর্ষণ, সন্দেহ নেই।

পুজোয় প্রগতি

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, স্বামী অচ্যুতানন্দ বা অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য পত্রিকার ১৫ বছরের ইতিহাসে লেখক তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। বছরে দু’টি সংখ্যা বেরোয় —বৈশাখ আর পুজো।

গত বছর পুজো সংখ্যায় প্রাপ্তি ছিল উত্তরপ্রদেশের ‘সঙ্খ’-এ প্রাপ্ত দুর্গা, বক্রেশ্বরে পাওয়া ১৮ হাতের দুর্গা-সহ মোট ৩৮টি দুষ্প্রাপ্য ছবি। এ বারের পুজোসংখ্যা নিজের শহর সাঁইথিয়া নিয়ে। ১৯৯৮ সালে বীরভূমের এই শহর থেকেই পত্রিকাটি বের করতে শুরু করেন সাঁইথিয়া পুরসভার কর্মী দেবাশিস সাহা। ক্রমশ আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা হয়ে উঠেছে তাঁদের অন্যতম আকর্ষণের বিষয়। যে কারণে কবি ও কবিয়ালদের নিয়ে সংখ্যা করা হয়েছে। পত্রিকাটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ‘প্রগতি সংগ্রহশালা’। সেখানে কিছু প্রাচীন পুথি থাকলেও প্রধান আকর্ষণ বিভিন্ন পুজো ও লোকনৃত্যে ব্যবহৃত মুখোশ। দু’শো বছরের পুরনো গাজন বা মালদহের গম্ভীরায় ব্যবহৃত মুখোশও রয়েছে।

মিল-টিল নিয়ে

‘এক পয়সায় একটি’ ছড়ার যুগ তো এখন নেই... তবু সুররিয়ালিস্ট শব্দ চয়নে স্মার্ট কবিত্বের যুগে ছড়াকেই বাহন করেছেন আশিসকুমার মুখোপাধ্যায়। “সোনার পাথরবাটির/ নিটোল ভবিষ্যত্‌”-এর জন্য ইঁদুরদৌড়ের মাঝে শিশু-কিশোরদের কাছে এক টুকরো খোলা আকাশ আশিসবাবুর ‘মেঘ বাতাসের কবিতা’। বইয়ের প্রতি পাতায় ছড়ানো ছবিগুলি উপরিপ্রাপ্তি। পরিবর্তন, সন্দেশ, আনন্দমেলা, কিশোর ভারতী, শুকতারার পাঠকেরা তাঁর ছড়ার স্বাদ আগেই পেয়েছে। বীরভূম নিয়ে ছড়া-কবিতার সংকলন ‘বীরভূম পদাবলী’ এবং কবিতা সংকলন ‘আলোর ভুবন’ও সম্পাদনা করেছেন তিনি। ‘রৌদ্রের কাছে ঝিলমিল নিয়ে/ আকাশের কাছে, মিল-টিল নিয়ে’ তাঁর খুনসুটি চলেইছে।

ভাবনায় গাঁথা

ফ্রয়েডীয় ও মার্কসীয় তত্ত্বের বিভাজন থেকে চোলদের সমুদ্রযাত্রা, সুবোধ ঘোষ থেকে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন আর তারই সঙ্গে উত্‌কল ব্রাহ্মণদের অন্নপ্রাশন ও বিদ্যারম্ভ ক্রিয়া— এ হেন নানা বিচিত্রগামী স্রোত দুই মলাটে ধরেই আত্মপ্রকাশ করেছে সমাজ ও রাজনীতি পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যা। গবেষণায় উত্‌সাহী ষান্মাসিক পত্রিকাটির প্রাক্কথনে মুখ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস মুখোপাধ্যায় উল্লেখ করতে ভোলেননি, গাজা-আইএস-ইউক্রেন লাঞ্ছিত কোন বিপন্ন সময়ে এ বার শরত্‌ এল। বাঁকুড়ায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বহমান এই উদ্যোগ বিষয়চর্চায় নিষ্ঠাবানদের অভিনিবেশের দাবি রাখে বৈকি।

মুখের কথা

বাংলা ভাষার হরেক রূপ এ রাজ্যে। কথ্য আঞ্চলিক ভাষার নানা রকমের। তারই একটি, বীরভূমের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান সংকলিত করেছেন দুবরাজপুর আরবিএসডি হাইস্কুলের শিক্ষক নীলমাধব নাগ। তাতে এক লক্ষ চার হাজার কথ্য আঞ্চলিক ভাষার শব্দের সংগ্রহ করা হয়েছে। শুধু বীরভূমের শব্দ নয়, এমন শব্দও আছে যা বাংলা ভাষাভাষী এলাকা মাত্রেই প্রচলিত। যেমন ‘ঢ্যামনা’, ‘ঠ্যাটা’, ‘খ্যাপামি, ‘রগড়’, ‘ছেনালী’ ইত্যাদি। ধ্বনি বিপর্যয়, ব্যুত্‌পত্তি নির্ণয় ও উত্‌পত্তিস্থলের উল্লেখ রয়েছে। বই প্রকাশ করেছে কলকাতার সংস্কার প্রকাশনী

গিটার বিপ্লব

ফ্রান্সিসকো তারেগা, আইজ্যাক অ্যালবেনিজ, ফার্নান্দো সোর নামগুলি এ বাংলার সাধারণ শ্রোতাদের কাছে হয়তো ততটা পরিচিত নয়। তবে সারা পৃথিবীর লক্ষ-কোটি মানুষ ইতিমধ্যেই শুনে ফেলেছেন ক্ল্যাসিকাল গিটারে এঁদের সুরসৃষ্টি। আর তাঁদের সঙ্গেই সুরের গাঁটছড়া বেঁধেছেন কলকাতার বিপ্লব সিংহ। গত মহাঅষ্টমীর সন্ধ্যায় ওঁদের সৃষ্টিমুখর সঙ্গীতের সাক্ষী থাকল মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার রাজবাড়ি। পিছনে দুর্গাপ্রতিমা, ঠাকুরদালানে আইসল্যান্ডের গিটারবাদক অগমুন্দুর থর জোহানেসন এবং বিপ্লব ঘণ্টা দেড়েকের অনুষ্ঠান পরিবেশন করলেন। আয়োজক রাজ পরিবারই। ক্যালকাটা স্কুল অব মিউজিকে শিক্ষকতা করেন বছর বত্রিশের বিপ্লব।

২০০৬-এ গোয়ায় আন্তর্জাতিক ক্ল্যাসিকাল গিটার ফেস্টিভ্যালে তৃতীয় হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে বেঙ্গালুরুতে স্পেনের দূতাবাসের জাতীয় ক্ল্যাসিকাল গিটার প্রতিযোগিতায় সেরা। সেই সূত্রেই পরের বছর স্পেনে করদোবা গিটার ফেস্টিভ্যালে বাজানোর সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ইউরোপের নানা দেশে গিটার উত্‌সবে বাজিয়েছেন। বিপ্লব জানান, আঠারো বছর বয়সে দাদার উত্‌সাহে ক্ল্যাসিক্যাল গিটার হাতে তুলে নিয়েছিলেন। এখন সেই নেশাই হয়ে দাঁড়িয়েছে পেশা। সম্প্রতি ‘ফড়িং’ ছবিতে প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর তৈরি আবহ সঙ্গীতও দর্শকের তারিফ পেয়েছে। বিপ্লব নিজেও গিটার বাজিয়েছিলেন সেখানে। এ বার নিজেও কম্পোজিশনের কথা ভাবছেন তিনি। ইতিমধ্যে তাঁর অ্যালবামও বেরিয়েছে। তাতে পাশ্চাত্যের বহু কম্পোজারের সৃষ্টির পাশাপাশি ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’ ললিত মাধুর্যে ধরেছে বিপ্লবের নাইলন স্ট্রিং। তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের তৈরি ‘নির্বাসিত’ ছবিতেও স্কটিশ লোকসঙ্গীতের প্রভাবে নিজের কম্পোজিশন বাজিয়েছেন বিপ্লব। ছবিটি আপাতত মুক্তির অপেক্ষায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

south karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE