Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অবাধে হচ্ছে বহুতল, জলস্তর নামছে মালদহে

এক দশকের মধ্যে মালদহ শহরের রাজমহল রোড, রথবাড়ি থেকে সুকান্ত মোড়সব জায়গার ছবিটা আমুল বদলে গিয়েছে। সব জায়গায় বহুতল আবাস তৈরি হয়েছে। অনেক বহুতল নির্মীয়মাণ। শহরাঞ্চলে কমছে ফাঁকা জমির পরিমাণ। সবুজও কমছে। প্রতিটি এলাকায় জনসংখ্যাও কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়ছে না পরিষেবা। নিকাশি নালার আয়তনও বাড়েনি অনেক এলাকায়। সাফাইয়ের পরিকাঠামো ১০ বছর আগের। ফলে, জঞ্জালের স্তূপ বাড়ছে।

ক্রমশ কমে যাচ্ছে ফাঁকা জমি। শহর জুড়েই গড়ে উঠেছে ঘিঞ্জি ফ্ল্যাটবাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

ক্রমশ কমে যাচ্ছে ফাঁকা জমি। শহর জুড়েই গড়ে উঠেছে ঘিঞ্জি ফ্ল্যাটবাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

পীযূষ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০১:১৫
Share: Save:

এক দশকের মধ্যে মালদহ শহরের রাজমহল রোড, রথবাড়ি থেকে সুকান্ত মোড়সব জায়গার ছবিটা আমুল বদলে গিয়েছে। সব জায়গায় বহুতল আবাস তৈরি হয়েছে। অনেক বহুতল নির্মীয়মাণ। শহরাঞ্চলে কমছে ফাঁকা জমির পরিমাণ। সবুজও কমছে। প্রতিটি এলাকায় জনসংখ্যাও কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়ছে না পরিষেবা। নিকাশি নালার আয়তনও বাড়েনি অনেক এলাকায়। সাফাইয়ের পরিকাঠামো ১০ বছর আগের। ফলে, জঞ্জালের স্তূপ বাড়ছে। নিকাশি নালায় জল-জঞ্জাল মিলেমিশে পরিস্থিতি অসহ্য হয়ে উঠেছে অনেক এলাকায়।

যেমন ১ নম্বর কলোনির কথাই ধরা যাক। এই কলোনিতে থাকতেন মাত্র ৮০টি পরিবার। এখন সেই এলাকাতেই ১৮টি বহুতলে বাস করেন ৬০০টি পরিবার। আরও পাঁচটি বহুতলের কাজ চলছে। অর্থাৎ এই এলাকার বাসিন্দার সংখ্যা আরও বাড়বে। এলাকার পুরনো বাসিন্দা নির্মাল্য গুপ্তভায়া আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, “বহুতলগুলি হওয়ার আগে আমাদের পাড়ায় যে নিকাশি ব্যবস্থা ছিল, তা একই রয়ে গিয়েছে। ফলে এখন একঘণ্টা বৃষ্টি হতেই গোটা এলাকা জলে ভেসে যাচ্ছে।”

শুধু তাই নয়, রাস্তা দিয়ে গেলে মনে হবে, দু’পাশে বহুতলগুলি হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ১ নম্বর কলোনি, ৩ নম্বর কলোনি, সিঙ্গাতলা, রামকৃষ্ণপল্লি, মুকদমপুর এলাকায় চড়া দামে বিভিন্ন বহুতলে দেদার ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে। মালদহ শহরে ফ্ল্যাটের চাহিদা নিয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রমাপদ বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “শহরের ফ্ল্যাট ও জমির দাম হু হু করে বাড়ছে।” সেউ সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, একের পর এক বহুতল হওয়ায় শহরে জলসংকট তীব্র হচ্ছে। অনুমতি না নিয়ে ফ্ল্যাটগুলি সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভ থেকে দেদার জল তুলছে। তাঁর দাবি, সাবমার্সিবল পাম্পের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি না করা হলে আগামী দিনে মালদহ শহরে জলের সঙ্কট তীব্র আকার নেবে।”

যে পথে বিপদ

• যথেচ্ছ বেআইনি নির্মাণ। সরু গলিতেও তৈরি করা হচ্ছে ৪-৫ তলা ফ্ল্যাট বাড়ি।

• বিনা অনুমতিতে পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তোলা।

• নিকাশি নালার পরিসর না-বাড়ায় জমছে জঞ্জাল।

ইংরেজবাজার পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের শুভদীপ সান্যালও জানিয়েছেন, যে ভাবে ভূগর্ভ থেকে যথেচ্ছ জল তোলা হচ্ছে তাতে মালদহের ভূগর্ভের জল কমে যাচ্ছে। শহরের জলের সঙ্কট মেটাতে আট মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ইংরেজবাজার পুরসভায় ৪২ কোটি টাকার একটি জল পরিশোধন কেন্দ্রের শিলান্যাস করেছিলেন। টাকা এসে পড়ে রয়েছে অথচ এখনও পর্যন্ত ইংরেজবাজারে জল পরিশোধন কেন্দ্রের কাজই শুরু হয়নি।

এখানেই শেষ নয়। যত্রতত্র বহুতল গজিয়ে ওঠায় আরও একটি সমস্যাও ঘনিয়ে রয়েছে মালদহের উপরে। দমকলের মালদহ ডিভিশন্যাল অফিসার হরলাল সরকার বলেন, “শহরের এমন কয়েকটি জায়গায় বহুতল বাড়ি রয়েছে, যেখানে দমকলের গাড়ি ঢুকবে না।” তাঁর কথায়, মালদহ শহরের সমস্ত বহুতল দমকলের অনুমোদন নিয়ে তৈরি করা হয়েছে কি না জানি না। তবে খুব শীঘ্রই তা খতিয়ে দেখা হবে।” বহুতল আবাসে দু’টি সিঁড়ি ও দু’টি লিফট থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু থাকলেও বেশিরভাগ বহুতলে একটি সিঁড়ি ও একটি লিফট রয়েছে। কোন ফ্ল্যাটে দু’টি সিঁড়ি থাকলেও লিফট একটি।

তাই ইংরেজবাজার পুরসভার ভূমিকা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। তার উপরে পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী এখন রাজ্যের মন্ত্রীও। তাঁকে মন্ত্রিত্বের সঙ্গে পুরসভাও সামাল দিতে হয়। কিন্তু বহুতল নির্মাণ নিয়ে পুরসভা উদাসীন বলে আক্ষেপ শহরের বাসিন্দাদের। বেআইনি বহুতল হতে দেখেও আশ্চর্যজনকভাবে নীরব থাকছেন স্থানীয় কাউন্সিলারাও।

কৃষ্ণেন্দুবাবুর অবশ্য দাবি, “আগের বোর্ড বেআইনিভাবে যথেচ্ছ বহুতল তৈরির অনুমোদন দিয়েছিল। আমি পুরসভায় ক্ষমতায় বসার পরই বহুতল আবাস তৈরিতে লাগাম টেনেছি।” তাঁর দাবি, “পুরআইন মেনেই বহুতল তৈরির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।” কিন্তু তা হলে নিকাশি সমস্যা থেকে শুরু করে সরু রাস্তার উপরে এত বহুতল নির্মাণের অভিযোগ উঠছে কেন? স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মন্ত্রী যাই বলুন না কেন, বহুতল আবাস তৈরির সময় বেশিরভাগ প্রোমোটারই কোনও নিয়ম মানছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

high rise building water level malda piyush saha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE