সিটি অটো থেকে ‘তোলাবাজি’র অভিযোগ ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে চাপান-উতোর ক্রমশ বাড়ছে। সোমবার এ নিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলর তথা পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মার অভিযোগ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেতারা। যদিও রঞ্জনবাবু তাঁর বক্তব্যে অনড়। এদিনও তিনি বলেন, “অভিযুক্ত তোলা আদায়কারীকে গ্রেফতার করতে হবে। না হলে আমি আন্দোলনে পথে নামব। এ থেকে সরে আসার কোনও প্রশ্ন নেই। আবারও বলছি, বেআইনি ভাবে নানা জায়গায় সিটি অটোর মাধ্যমে প্রতিদিন তোলা আদায় হচ্ছে।”
আইএনটিটিইউসি-র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রঞ্জনবাবুর অভিযোগ ভিত্তিহীন। গত রবিবার কোর্ট মোড় এলাকায় এক অটো চালকের কাছ থেকে তোলাবাজির অভিযোগ ওঠে শাসক দল প্রভাবিত এক ইউনিয়নের বিরুদ্ধেই। ওই অটো চালককে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। তারপরেই অটো চালকদের উপরে তোলাবাজির অভিযোগ নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়।
রবিবার ঘটনার মূল অভিযুক্ত মনোজ সেনকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। ফলে সোমবার আশিঘর মোড়ের অটো চালকরা অটো ধমর্ঘট জারি রেখেছেন। এলাকার অটো চালকেরা আইএনটিটিইউসি-র জেলা কমিটির নেতাদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। যদিও এদিনও সন্ধ্যা অবধি শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের তরফে কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বলে অভিযোগ। এরই মধ্যে এদিন তোলাবাজির অভিযোগ-সহ সমস্ত ঘটনা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রকে জানানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা তৃণমূলের কোর কমিটি তথা জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য মদন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “সিটি অটো নিয়ে তোলাবাজি-সহ নানা অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। আমরা পরিবহণ মন্ত্রীকে সব জানাচ্ছি। কারণ এই ঘটনায় দলের বদনাম হচ্ছে।”
কোর্ট মোড় এলাকার স্থানীয় ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিখিল সহানিও এদিন কার্যত রঞ্জনবাবু এবং মদনবাবুদের মতোই অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “শহরের সিটি অটো সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় আইএনটিটিইউসি নেতারাই দেখাশোনা করেন। কোর্ট মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আমার ওয়ার্ডে থাকলেও আমার কিছুই করার থাকে না। সব শ্রমিক সংগঠনের নেতারা নিয়ন্ত্রণ করেন।” এদিন অবশ্য মারপিটের ঘটনার অভিযুক্ত নিখিলবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে দলের একাংশ দাবি করেন। যদিও নিখিলবাবুর বক্তব্য, “আমার ওয়ার্ডে ছেলেটা থাকে। অটো চালায়, এটুকু জানি। বাকিটা শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলতে পারবেন।”
এদিন দার্জিলিং জেলা আইএনটিটিউসি-র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সিটি অটো সংক্রান্ত সমস্ত সংগঠন তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত ও আইএনটিটিইউসি সমর্থিত নয়। যে সংগঠনগুলি আইএনটিটিইউসি নিয়ন্ত্রিত, সেখানে কোনও তোলা আদায়ের বিষয় নেই। সংগঠনের জেলা কোর কমিটির সদস্য প্রসূন দাশগুপ্ত দাবি করেন, “আশিঘর মোড় সংগঠনের যে টাকা তোলার কথা রঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, তা রঞ্জনবাবুরা জানেন। আমরা জানি না। আর সবাই তো আমাদের সংগঠনের সদস্য নন। তোলাবাজির অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা।”
তবে তৃণমূলের একাংশের দাবি, শিলিগুড়ি শহরের সিটি অটোর প্রায় সব চালক এবং মালিকদের সংগঠন তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে। শহরে মোট ১৭টি সিন্ডিকেটও রয়েছে। রোজ একজন অটো চালককে ২০ টাকা নিজের সিন্ডিকেটে দিতে হয়। তার পরেও অন্য সিন্ডিকেট টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ। রবিবার আশিঘরের অটোচালক, এলাকার সিন্ডিকেটে ২০ টাকা দিয়ে কোর্ট মোড়ের দিকে আসেন। তার পরে ফের টাকা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়েই গোলমাল এবং তোলাবাজির অভিযোগে সরব হল দলেরই একাংশ। অটো ধমর্ঘটও শুরু হয় আশিঘর এলাকার। তৃণমূলের নেতাদের একাংশ এদিনও অভিযোগ করেছেন, প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা সিটি অটোর মাধ্যমে আদায় হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy