Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অশোকের পাশে অশোক, কটাক্ষ গৌতমের

তৃণমূল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির জোটের সঙ্গেই এ বার মানুষের জোট গড়ে তোলার ডাক দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। তৃণমূলকে হঠাতে রাজনৈতিক জোট চাই বলে বেশ কিছুদিন ধরেই আওয়াজ তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়।


সংবর্ধনা নিতে শিলিগুড়িতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে কামদুনির প্রতিবাদী মৌসুমী কয়াল ও টুম্পা কয়ালের বাড়িতে যান শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। বুধবার ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ঘোষ।

সংবর্ধনা নিতে শিলিগুড়িতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে কামদুনির প্রতিবাদী মৌসুমী কয়াল ও টুম্পা কয়ালের বাড়িতে যান শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। বুধবার ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৫১
Share: Save:

তৃণমূল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির জোটের সঙ্গেই এ বার মানুষের জোট গড়ে তোলার ডাক দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। তৃণমূলকে হঠাতে রাজনৈতিক জোট চাই বলে বেশ কিছুদিন ধরেই আওয়াজ তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার রাজনীতি না দেখে সাধারণ মানুষের জোট গড়ার জন্য আহ্বান জানালেন অশোকবাবু। এ দিন ধূপগুড়িতে নিহত দশম শ্রেণির ছাত্রীর মামমাবাড়ির উঠোনে গ্রাম্যসভা হোক অথবা শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি দু’শহরে পেশাদার, বিদ্বজ্জনেদের সভা, সর্বত্র মানুষের মধ্যে জোট গড়ার ডাক দিলেন অশোকবাবু সহ সেভ ডেমোক্রেসির সদস্যরা।

গত মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পৌঁছে মেয়র তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করে জোট প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সেরে ফেলার আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। জোটের জন্য কংগ্রেস এবং বামেরা উভয়েরই শীর্ষনেতৃত্ব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। সে কারণেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে অশোকবাবুরা মানুষের জোটের পক্ষে সওয়াল করছেন বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি।

জলপাইগুড়িতে সেভ ডেমোক্র্যাসি ফোরামের শাখা তৈরি করে আগামী নির্বাচনে সমস্ত ভোট একজোট করার জন্য জলপাইগুড়ির গণতন্ত্রপ্রেমী আইনজীবীদের কাছে আবেদন জানালেন ফোরামের সভাপতি অশোকবাবু সহ ভারতী মুৎসুদ্দি এবং চঞ্চল চক্রবর্তী । বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটের সময় জলপাইগুড়িতে আসেন। তাঁরা আইনজীবীদের সঙ্গে সভা করেন। জলপাইগুড়ির নেতাজি ফাউন্ডেশনের হলে অনুষ্ঠিত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন জলপাইগুড়ির ৩০ জন আইনজীবী। অশোকবাবু বলেন, ‘‘আমরা আপনাদের সাহায্য চাই। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য মানুষের জোট দরকার।’’

জোটের প্রয়োজন বলতে গিয়ে রাজ্য জুড়ে নারী নির্যাতন বাড়ার বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। ধূপগুড়ি থেকে কামদুনি নানা ঘটনার উল্লেখ করেন। ভারতী মুৎসুদ্দি বলেন, “এটা ভয়ঙ্কর সময়। মানুষ সুরক্ষা পাচ্ছে না। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাল্টে দেওয়া হয়েছে।’’

বুধবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে ডাকা সভাতেও সেভ ডেমোক্রেসির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শিলিগুড়িতে পরপর দু’টি ভোটের ফল নিয়েও প্রশংসা করেন অশোকবাবুরা। শিলিগুড়িবাসীকে সাহসী বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। যদিও অশোকবাবুদের প্রচারকে পুরোপুরি সিপিএমের হয়ে প্রচার বলে মনে করছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের বিচারপতি হিসেবে যে ভাবমূর্তি ছিল উনি সেটা নিজেই নষ্ট করেছেন। উনি সিপিএমে যোগ দিলেই পারেন। এই অনুষ্ঠান ছদ্মবেশে সিপিএমের প্রচার। তাতে অবশ্য কোনও লাভ হবে না।’’ যদিও শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘এটি কয়েকটি সংগঠনের ডাকা অনুষ্ঠান। আমাকেও থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি উপস্থিত থাকতে পারিনি। আমাদের আলাদা করে প্রচারের দরকার নেই।’’

এদিন তাঁর বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে রাজ্যে মানুষের সাধারণ অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সন্ত্রাসবাদী কায়দায় মানুষকে কব্জা করতে চাইছে শাসক দল। তাই এটাই ঘুরে দাঁড়ানোর মোক্ষম সময়। এখন জবাব দিতে না পারলে পাঁচ বছর পিছিয়ে পড়তে হবে। তাই সবার কাছে আমার আহ্বান, শাসক বিরোধী ভোট ভাগ হতে দেবেন না।’’ শিলিগুড়িতে পুরভোট ও মহকুমা পরিষদের ভোটে পরপর দুটি নির্বাচনে তৃণমূলকে উচিত জবাব দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করে শিলিগুড়িবাসীকে ধন্যবাদ জানান ভারতী মুৎসুদ্দিও। তিনি বলেন, ‘‘শিলিগুড়িবাসী আগেই বুঝতে পেরে প্রতিরোধ শুরু করেছে। সারা রাজ্যের মানুষ এই ধারাকে সঙ্গী করেই আসন্ন ভোটে লড়বে বলে আমি মনে করি। তাতে শিলিগুড়িবাসীকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।’’ এদিন সরকারি দল সন্ত্রাসবাদী কায়দায় শিক্ষাক্ষেত্রকে বেছে নিয়ে তাতে আঘাত করছে বলে মন্তব্য করেছেন অশোকবাবু। এই প্রসঙ্গে ধূপগুড়ির প্রসঙ্গকে তুলে ধরেন তিনি। সরব হন বন্ধ ও অচল চা বাগান নিয়ে সরকারের ভূমিকা নিয়েও। চা বাগানের মালিকদের কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফুটবল, ক্রিকেট দল কেনাকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘ওই অর্থের একটা শতাংশও চা বাগানের অনাহারে ভোগা শ্রমিকদের জন্য ব্যবহার করা হলে তাতে অনেক শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার বাঁচতে পারত।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE