ফল ব্যবসায়ী জয়দেববাবু।
রোজকার মত রবিবার সকালে আমি দিনবাজারে আমার ফলের দোকান খুলে বসেছিলাম। শনিবার সারারাত বৃষ্টি হয়েছিল। একটু সকালে দোকান খোলা আমার বহুদিনের অভ্যাস। রোজকার মত রবিবার সকাল সাড়ে ছটার সময় দোকান খুলি। তখন বৃষ্টি ছিল না। আমার দোকানের কাছাকাছি করলা নদীর পারে রাজার আমলের বাঁধানো ঘাট। দোকানে আসবার সময় রোজ সেই ঘাটে করলাকে একবার দেখি।
এ দিনও দেখলাম ঘাটের পাঁচ সিঁড়ি নীচে জল। করলায় স্রোত আছে। শুনেছি বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চলের লালটুং ফরেস্টে করলা নদীর সৃষ্টি হয়েছে। ছোট থেকে শুনে আসছি জঙ্গলে বৃষ্টি হলে করলা নদীর জল বাড়ে। মনে মনে ভাবলাম এ আর নতুন কী। রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। করলার জলতো বাড়বেই। দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করলাম। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ঝেঁপে বৃষ্টি নামলো। রবিবারের বাজার বৃষ্টিতে একটু ঢিলে হয়ে গেল। একঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টি থামলো। দুপুরে খেতে যাওয়ার সময় আবার ঘাটে দাঁড়িয়ে করলাকে দেখলাম। ঘাটের পাঁচটা সিঁড়ির মধ্যে দুটো সিঁড়ি ডুবে গেছে। করলার জল বাড়ছে।
তখনও ভাবিনি জল বাজারে উঠে আসবে। কারণ ছোট থেকে দেখে আসছি প্রতি বছর করলার জল একবার কিংবা দুবার বাজারে উঠতো। চারবছর হল জল উঠছে না। তাই বাজারে জল ওঠার বিষয়টি তখনও ভাবিনি। দুপুরে একঘণ্টার মধ্যে খেয়ে বাড়িতে ফিরে এসে দেখি ঘাটের আরও একটা সিঁড়ি ডুবে গেছে।
বিকেলে স্বাভাবিক বাজার হল। লোকজন কেনাকাটা করলো। রাত আটটার সময় একজন এসে খবর দিল করলার জল দিনবাজারের ঘাট বরাবর হয়ে আছে। আরও বাড়লে জল বাজারে উঠবে। রাত নটার সময় জল ঘাটের রাস্তার ওপরে উঠে আসলো। খবর পেলাম মাছবাজার জলে ভরে গেছে। ওপাশের সব্জি বাজারে জল ঢুকছে। ওপাশে আমার দুই ছেলের ডিমের দোকান। ওরা ততক্ষণে মাল ওপরে তোলা শুরু করে দিয়েছে। জল বাড়ছে। আমার দোকানের দিকটা উঁচু। সব্জি বাজার থেকে রাত দশটার সময় দিনবাজারে ঢোকার রাস্তায় একহাঁটু জল হয়ে গেল। রাত এগারোটার পর্যন্ত দোকানের সমস্ত ফল ওপরে তুলে ফেললাম। ছেলেদের দোকানে রেখে আমি বাড়ি চলে আসলাম। রাতে ভাল ঘুম হল না।
সোমবার ভোর পাঁচটার সময় উঠে দোকানে চলে গেলাম। হাঁটু সমান জল ঠেলে দোকানে পৌঁছলাম। তখন আমার দোকানে নীচে জল এসেছে। দোকানে ঢোকেনি। শুনলাম মাছবাজারে কোমর সমান জল। সব্জির বাজারের বেশিরভাগ এলাকার একই অবস্থা। বেলা দশটার পর থেকে জল কমা শুরু করলো। মাছবাজার এবং সংলগ্ন সব্জি বাজার থেকে বিকেলেও জল সরেনি।
আমার প্রশ্ন একটাই, করলার জল বাড়বে একথা কি প্রশাসনের জানা ছিলনা? আগাম সতর্কতা জারি করা হল না কেন? আজ শুনলাম পুরসভা থেকে সমাজপাড়ায় শনিবার রাতে মাইকিং করেছিল। দিনবাজারের করা হয়নি। এই বৈষম্য কেন? দিনবাজারের বহু ব্যবসায়ী, করলার পারের বহু বাসিন্দা আজ অসুবিধার মধ্যে দিন কাটিয়েছে। প্রশাসন এবং পুরসভার কাউকে খোঁজ নিতে দেখা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy