সুজয় ঘটক ও (বাঁ দিকে) অশোক ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।
একটা সময় কংগ্রেসের দখলে থাকা পুরসভায় মেয়রের ঘরের সামনে বসে অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন বামেরা। রাতভর চলছে পুরসভা অচল করা সেই আন্দোলন। এখন ক্ষমতায় এসে মেয়রের ঘরের সামনে আন্দোলন বন্ধ করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বাম পরিচালিত শিলিগুড়ি পুরসভা। গত বুধবার পুর কতৃর্পক্ষ ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এর পরেই বামেদের অতীতের আন্দোলন নিয়ে সরব হন পুরসভার ৩ নম্বর বরো চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা সুজয় ঘটক। তাঁর দাবি, ‘‘বিজ্ঞপ্তি কার্যকর করার আগে মেয়র অশোক ভট্টাচার্যকে আগের সেই আন্দোলন ভুল হয়েছিল বলে মানতে হবে। সে জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।’’
ঘটনাচক্রে, পুরভবনে বিরোধী দলগুলির আন্দোলনের ধরণ নিয়ে বৃহস্পতিবার সরব হয় জেলা বামফ্রন্ট। বাম নেতাদের অভিযোগ, তৃণমূল প্রতি পদে মেয়রকে অসম্মান ও তাঁর সঙ্গে অসহযোগিতা করছে। পুরসভার কাজকর্মে বাধা তৈরি করছে। মেয়রের দরজায় পোস্টার মারা হচ্ছে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। শুধু তাই নয়, সর্বত্র ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদেও একই জিনিস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বামফ্রন্ট। আগামী ডিসেম্বর মাস জুড়ে বিক্ষোভ, অভিযান, মিছিলের ডাক দিয়েছেন বাম নেতৃত্ব।
এই অবস্থায়, তৃণমূলের চেয়েও বামেদের বিরুদ্ধে বেশি সুর চড়িয়েছেন সুজয়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভায় মানুষ কাজের জন্য আসেন। সেখানে সমস্যা তৈরি না হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু অশোকবাবুদের অতীত ভুললে চলবে না। আন্দোলনের নামে পুরসভার রাতভর অবস্থান, আন্দোলন, বোর্ড মিটিং বয়কট কী না করেছেন ওরা? এ সব কী সহযোগিতার লক্ষণ? আগে অশোকবাবুদের ক্ষমা চাওয়া দরকার। পরে বিজ্ঞপ্তি কার্যকর করা উচিত।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, গত একমাসে পুরভবনে বিরোধীদের আন্দোলন শুরু হতেই তা নিয়ে সরব হন বাম নেতারা। বিশেষ করে তৃণমূল দু’দিনের অবস্থান বিক্ষোভ ছাড়াও বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে মেয়রের ঘরের সামনেও একাধিকবার স্লোগান দিয়ে আন্দোলন করেছে। এক দফায় মেয়রের দরজার পাশে পোস্টার সাঁটা হলে মেয়র নিজেই তা ছিঁড়ে দেন। বিনা অনুমতিতে কাজের সময় মাইক বাজানো নিয়েও সরব হন মেয়র। গত ২৫ নভেম্বর পুরসভা একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তাতে মেয়র ও বরো চেয়ারম্যানের ঘরের সামনে বিক্ষোভ আন্দোলন করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলিকে কাজের সময়ের বাইরে আইন মেনে আন্দোলনের কথা বলা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া মাইক বাজানো যাবে না বলেও জানানো হয়েছে।
মেয়র অশোকবাবু বলেছেন, ‘‘আমরা কোনওদিন অনুমতি ছাড়া আন্দোলন করিনি। পুরসভার ভিতরে মাইকও বাজাইনি। দলীয় নেতা-কর্মীরা নয়, একসময় বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে শুধুমাত্র কাউন্সিলরেরা আন্দোলন করেছিলেন। সেখানে পোস্টার মারা ছাড়া কাউকে অসম্মান করা হয়নি। সব শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। তাই ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ই নেই।’’ মেয়রের যুক্তি, ‘‘গত পুরবোর্ডও ইচ্ছা করলেই এমন বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারতেন। ওঁরা করেননি। আমরা করেছি। আর তাতে কোনও বিশেষ দল নয়, সবার কথাই বলা হয়েছে।’’
দলীয় সূত্রের খবর, গত পুরভোটে কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বামেরা আলাদা আলাদা ভোটে লড়াই করে। কিন্তু তৃণমূলকে ঠেকাতে অনেক জায়গায় আঁতাত হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ভোটে বামেরা ক্ষমতায় আসার পর ৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান হন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুজয়বাবু।
সম্প্রতি বিভিন্ন উন্নয়ন, সিদ্ধান্তের প্রশ্ন বাম নেতৃত্বের সঙ্গে কংগ্রেস নেতাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তার উপরে বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসতেই একে অপরের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোও শুরু করেছেন দলগুলি। পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে তাই প্রশ্ন তোলা শুরু করেছেন কংগ্রেস নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বামেদের সঙ্গে আমাদের কোনদিনই সমঝোতা ছিল না। আন্দোলনের যে গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে তা নিয়ে আপস হবে না। পুরসভার মেয়র মর্জিমাফিক কাজ করলেই টানা আন্দোলন হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy