Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত

অসমের দুর্ঘটনার জেরে রবিবারেও ব্যাহত হল ট্রেন চলাচল। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতা এবং দিল্লি লাইনে ট্রেন চলাচল মোটের উপরে স্বাভাবিক থাকলেও, উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কোনও ট্রেন ৯ ঘণ্টা, কোনও ট্রেন ৫ ঘণ্টা দেরিতে চলেছে। রবিবারেও ৪ জোড়া প্যাসেঞ্চার ট্রেন বাতিল করে দিয়েছে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেল বিভ্রাটের ফলে রবিবার ভোগান্তি হল যাত্রীদের। নিউ কোচবিহার স্টেশনে ছবিটি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব।

রেল বিভ্রাটের ফলে রবিবার ভোগান্তি হল যাত্রীদের। নিউ কোচবিহার স্টেশনে ছবিটি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০২:২৩
Share: Save:

অসমের দুর্ঘটনার জেরে রবিবারেও ব্যাহত হল ট্রেন চলাচল। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতা এবং দিল্লি লাইনে ট্রেন চলাচল মোটের উপরে স্বাভাবিক থাকলেও, উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কোনও ট্রেন ৯ ঘণ্টা, কোনও ট্রেন ৫ ঘণ্টা দেরিতে চলেছে। রবিবারেও ৪ জোড়া প্যাসেঞ্চার ট্রেন বাতিল করে দিয়েছে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রাজধানী সহ সরাইঘাট, ব্রহ্মপুত্র মেল অস্বাভাবিক দেরিতে চলাচল করেছে। হয়রানির শিকার হতে হয়েছে যাত্রীদের। নিউ জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার রাতভর ট্রেনের অপেক্ষায় কাটাতে হয়েছে যাত্রীদের। সরাইঘাট এক্সপ্রেস প্রায় ৯ ঘণ্টা, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস সাড়ে ৫ ঘণ্টা দেরিতে চলেছে। গুয়াহাটি থেকে নিউজলপাইগুড়ি স্টেশন হয়ে কলকাতা, দিল্লিগামী ২২টি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের থেকে নূন্যতম ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা দেরিতে চলেছে। ভুক্তোভোগী যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, রেল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হয়ে যাত্রীদের অন্য ট্রেনে গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেত দিতে পারতেন। যদিও, তেমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

এ দিকে, অসমের সালাকাঠি ও বাসুগাঁও স্টেশন চম্পানদীর উপর লাইন মেরামতির কাজ সম্পূর্ন না হওয়ায় একটি মাত্র লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলেরে আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের এ ডি আর এম রাজকুমার মাকয়ানা বলেন, “রেলের উচ্চপদস্থ কর্তা থেকে রেল বোর্ডের সদস্যরা এলাকা উপস্থিত রয়েছেন। প্রায় ২০০-২৫০০ রেল কর্মী লাইনটি স্বাভাবিক করার জন্য শনিবার সকাল থেকে লাগাতার কাজ করছেন। আলিপুরদুয়ার ডিভিশন অফিসের কন্ট্রোলরুম থেকে ওই রুটের ট্রেনগুলি নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব করার চেষ্টা চলছে।” রেল সূত্রে জানানো হযেছে, আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে লামডিং যাওয়ার ইন্টারসিটি ও আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে নিউ কোচবিহার হয়ে কামাক্ষ্যা যাওয়ার ইন্টারসিটি বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে নিউজলপাইগুড়ি-ডেকাগ্রাম এবং নিউ জলপাইগুড়ি-কোচবিহার প্যাসেঞ্জার ট্রেনও।

রেলের তরফে দুর্ভোগ এড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হলেও, যাত্রীদের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। কেরলের বাসিন্দা সিএস নায়ার কাম্যাখা-শিয়ালদহগামী স্পেশাল ট্রেনে কলকাতা যাওয়ার টিকিট কেটেছিলেন। রাতভর নিউকোচবিহারে স্টেশনে অপেক্ষা করেও বিকল্প ট্রেন পাননি। যাত্রী বিশ্রামাগারের একটি চেয়ারে বসে তাঁকে রাত কাটাতে হয়েছে। রবিবার সকালে দিল্লিগামী রাজধানী এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেস সহ একাধিক ট্রেনের যাত্রীরাও একই রকম ভোগান্তি পোহান। শনিবার রাতে অসমের কোকরাঝাড় জেলার দুর্ঘটনার জেরে নিউকোচবিহার রুট হয়ে যাতায়াতকারী স্বাভাবিক ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় ররিবারেও যাত্রীরা ভোগান্তি পোহান। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের অভিযোগ, তারপরেও ট্রেনের কোন ট্রেন আবার নির্ধারিত সময়ের কত দেরিতে পৌঁছবে, কোন কোন ট্রেন বাতিল হল সেসব তথ্য ঠিকঠাক পাওয়া যায়নি।


জলপাইগুড়ি স্টেশনে ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল।

যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, অনুসন্ধান কেন্দ্রে জানতে গেলেও অনেকেই সদুত্তর পাননি। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার সকালে একদল যাত্রী অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ দেখান। রাতভর উদ্বেগ নিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের ওয়েটিং রুমে কাটাতে হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আরজু মোথে ও তাঁর পরিবারকে। আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক নিয়ে স্নাতকস্তরের শেষ সেমিস্টার পরীক্ষা রয়েছে আজ সোমবার সকালে। শনিবার রাত আড়াইটের সময় কামাখ্যা-শেয়ালদহ বিশেষ ট্রেন ধরার কথা ছিল তাঁদের। বিভ্রাটের জেরে রবিবার দুপুর পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন এনজেপিতে ঢোকেনি। আরজুর অভিযোগ, ‘‘লাইনে বিভ্রাট হতেই পারে। সে কারণে বিকল্প ট্রেনের ব্যবস্থাও করা যেতে পারত। কোনও ট্রেনের সঙ্গে অতিরিক্ত কামরাও জুড়ে দেওয়া যেত। তার কিছুই করা হয়নি।’’ কালিম্পঙের বাসিন্দা আরজুর প্রশ্ন, ‘‘যাত্রীদের প্রতি কী রেলের নূন্যতম দায়বদ্ধতা নেই?’’ একই অভিযোগ করেছেন হাওড়ার বাসিন্দা স্বাতী মল্লিকেরও। তাঁরও একই ট্রেন ফেরার কথা ছিল। স্বাতী দেবীর অভিযোগ, ‘‘অপেক্ষারত যাত্রীদের কিছু প্রয়োজন কিনা তাও জানাতে চাননি রেল আধিকারিকরা।’’

রবিবার সকাল থেকে এনজেপি স্টেশনের ওভারব্রিজে কাপড়, কাগজ পেতে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছে। স্টেশনের ওয়েটিং রুমগুলিও ছিল ভিড়ে ঠাসা। শিশুদের নিয়ে প্ল্যাটফর্মেও বসে থাকতে দেখা গিয়েছে যাত্রীদের পরিবারকে। রেল যাত্রী কল্যাণ সমিতির তরফে যাত্রীদের বিভিন্ন ট্রেনের খোঁজ, টিকিট বুকিঙের বিষয়ে তথ্য দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। সমিতির সভাপতি দীপক মোহান্তি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘দু’দিন ধরে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রেলের তরফে বিকল্প ট্রেনের ব্যবস্থা তো দূরের কথা ওয়েটিং রুম খোলা ছাড়া কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি। এ বিষয়ে আমরা লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাব।’’

শনিবার অসমের কোকরাঝাড় জেলার ছালাকাঠি রেল ষ্টেশন এবং চিরাং জেলার বাসুগাঁও রেল ষ্টেশনের মাঝে চম্পাবতি নদীর ওপর থাকা রেল সেতুতে দুর্ঘটনাগ্রস্থ আলিপুরদুয়ার-গুয়াহাটি আপ সিফুং প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ঝুলন্ত ইঞ্জিন রবিবার সন্ধে পর্যন্ত তুলতে পারেনি রেল বিভাগ। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ লাইন মেরামতি হলেও ওই এলাকার আপ লাইন এখনও অকেজো। তবে বঙ্গাইগাঁও-বাসুগাঁও ডাউন লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও ওই পথ দিয়ে শামুকের গতিতে চলাচল করছে ট্রেন। এদিকে শনিবার ওই ঘটনার পরে দুটি এক্সপ্রেস ও আটটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করা হয় যদিও শনিবার রাতে বাতিল করা ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে ২০টি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫টি এক্সপ্রেস ট্রেন রয়েছে। ২৪ এবং ২৫ মে পর্যন্ত বাতিল করা হয় ওই ২০ টি ট্রেন এছাড়াও ওই পথ দিয়ে চলাচল করা প্রায় ট্রেনের সময়সুচি বদলানো হয়েছে বলে জানান উত্তর-পুর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক প্রণবজ্যোতি শর্মা। এদিকে রেল বিভাগের এক সুত্র মতে জানাগেছে,শনিবার বিকেল থেকে উত্তরবঙ্গ এবং নামনি অসমের একটি বিশাল এলাকায় ঝড়বৃষ্টি হয়। ফলে উত্তর-পুর্ব রেলের নামনি অসমের রেল যোগাযোগ কন্ট্রোলরুম বিকল হয়ে যায়,যার ফলে ভেঙে পরে রেলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে কোন ট্রেন কোথায় আটকে আছে বা কখন ছাড়বে বা আসবে তা কেউই জানাতে পারেনি যাত্রীদের। কোনো কোনো ষ্টেশনের ষ্টেশন মাষ্টারা তাঁদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন দিয়ে যোগাযোগ করে রাত কাটান। অবশ্য রবিবার বেলা ১২টা থেকে নামনি অসমের রেল যোগাযোগ কন্ট্রোলরুম ফের স্বাভাবিক হয় বলে জানাগেছে। একদিকে দুর্ঘটনার জেরে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত, অন্যদিকে রেল যোগাযোগ কন্ট্রোলরুম বিকল। ট্রেনের সময়সুচি বদলানো ত ছিলোই তার ওপর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল দুই মিলে বিপদে পরেন হাজার হাজর রেল যাত্রী। কোন ট্রেন কখন আসবে তা সঠিক ভাবে জানাতে পারেনি রেল কতৃপক্ষ। ফলে নামনি অসমের কোকরাঝাড়, নিউ বঙ্গাইগাঁও সহ উত্তরবঙ্গের নিউকোচবিহার,আলিপুরদুয়ার ষ্টেশনে শনিবার সারা রাত অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। এছাড়া শনিবার রাতে গুয়াহাটি থেকে ছেড়ে আসা ডাউন কামাখ্যা-শেয়ালদাহ স্পেশাল ট্রেন সহ বেশ কিছু দুরপাল্লার ট্রেন নিউবঙ্গাইগাঁও ষ্টেশনে আটকে পরে। ডাউন কামাখ্যা-শেয়ালদাহ স্পেশাল ট্রেনটি শনিবার রাতে গুয়াহাটি থেকে ছাড়ার কথা ছিলো যদিও ওই ট্রেনটি রবিবার সকালে গুয়াহাটি থেকে ছেড়ে নিউবঙ্গাইগাঁও ষ্টেশনে এসে আটকে পরে। প্রায় এক ঘন্টা সেখানে থাকার পরে রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ওই ট্রেনটি নিউবঙ্গাইগাঁও ষ্টেশন ছেড়ে শেয়ালদাহ অভিমুখে রওনা হয়। ওই ট্রেনেই শনিবার রাতে নিউকোচবিহার থেকে কোলকাতা যাবার জন্য অপেক্ষা করছিলেন স্বামী সন্তান সহ কলকাতার সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্রেন বিভ্রাটের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাঁদের। সুমা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান,ডাউন কামাখ্যা-শেয়ালদাহ স্পেশাল ট্রেনে বাড়ি ফেরার জন্য শনিবার রাত ১০টা থেকে নিউকোচবিহার ষ্টেশনে অপেক্ষা করে ছিলাম, “গভীর রাত অবদি কেউ আমাদের জানাতে পারেনি ওই ট্রেনটি কোথায় আছে বা কখন আসবে। ফলে সারা রাত স্টেশনে বসেই কাটাতে হয়েছে। রবিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ ট্রেন নিউকোচবিহার স্টেশন ছাড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE