Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ জলপাইগুড়িতে

ওই বুঝি জল বাড়ছে, আতঙ্কের দিন

সকালে জল নামলে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুপুর নাগাদ নদী ফুঁসতে দেখে আর ভরসা হয়নি। বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে ফের রাস্তার ধারে তাঁবুতে আশ্রয়ের খোঁজে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়।

বসত গিয়েছে জলের তলায়। কবে নামবে সেই জল চিন্তা তারই।

বসত গিয়েছে জলের তলায়। কবে নামবে সেই জল চিন্তা তারই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:১২
Share: Save:

সকালে জল নামলে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুপুর নাগাদ নদী ফুঁসতে দেখে আর ভরসা হয়নি। বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে ফের রাস্তার ধারে তাঁবুতে আশ্রয়ের খোঁজে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। মঙ্গলবার দিনভর ঘরে বাইরে এভাবে আতঙ্কে কাটল জলপাইগুড়ি শহরের করলা নদী লাগোয়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের জলবন্দি মানুষদের।

একই অবস্থা ছিল তিস্তা নদী বাঁধে আশ্রিত ময়নাগুড়ির বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের। এদিন তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সঙ্কেত এবং সংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত দেওয়া হয়। জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখতে ৩ সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়িতে আসবেন সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

রবিবার রাত থেকে জলপাইগুড়ির ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ড ফুলেফেঁপে ওঠা করলা নদীর জলে প্লাবিত হয়। সোমবার দুপুর পর্যন্ত জলবন্দি ছিল বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বিকেলের পরে দ্রুত জল নামতে শুরু করলে শহরে স্বস্তি ফিরে আসে। মঙ্গলবার সকালে জলবন্দি বেশিরভাগ ওয়ার্ড ছিল শুকনো। নিচু এলাকা ২৫ এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডে জল নেমে যায়। রাস্তায় তাঁবুতে আশ্রিতরা ঘরে ফিরে যেতে শুরু করে। কিন্তু দুপুর থেকে ফের করলার জল বাড়ছে দেখে শহরের নদী লাগোয়া এলাকায় আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে তিস্তা নদীর জল করলায় ঢুকে বিপত্তি হয়েছে। বৃষ্টি নেই তবু নদীর জল বাড়ছে দেখে পুরসভার কর্তারাও হতচকিত হয়ে যান। যে বাসিন্দারা ঘরে ফিরেছিলেন তাঁরা আতঙ্কে আবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ শুরু করেন।


ত্রাণ শিবিরেই চলছে পড়াশোনা।

সেচ দফতরের কর্তারা অবশ্য জানান, তিস্তার জল করলায় ফিরে যাওয়ার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। করলার জল দ্রুত বার না হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান গৌতম দত্ত বলেন, “মঙ্গলবার সকালের পর থেকে তিস্তা নদীর জলস্তর অনেক বেশি ছিল। ওই কারণে করলার জল দ্রুত বার হতে পারেনি। ফলে জল আটকে নদী ফুলতে দেখা গিয়েছে।” কিন্তু দিশেহারা শহরবাসী যুক্তিতে কান দিতে নারাজ। একে জলস্তর বেড়ে চলায় ফের প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা। তার উপরে খাবারের সমস্যা। জলপাইগুড়ি পুরসভার তরফে ত্রাণের সমস্যা নেই বলে দাবি করা হলেও রবিবার রাত থেকে শহরের জলবন্দি বিভিন্ন ওয়ার্ডের ঘরছাড়া বাসিন্দাদের একাংশ মঙ্গলবার ক্ষোভ উগড়ে দেন। প্রতিমা রায়, মুকেশ ঠাকুর, প্রভু শাহের মতো ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের জলবন্দি বাসিন্দাদের অভিযোগ, এদিন দুপুর পর্যন্ত খাবার মেলেনি। একই অভিযোগ ছিল কিং সাহেবের ঘাট লাগোয়া এলাকার বিপন্ন বাসিন্দাদের।

বিরোধী কাউন্সিলরদের অভিযোগ, যে পরিমাণ খাবার চাওয়া হয়েছে তা মিলছে না। ঝামেলা এড়াতে অনেকে পুরসভার দেওয়া চিড়ে গুড় বিলি না করে মজুত রেখেছেন। যেমন, পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলার প্রমোদ মণ্ডল বলেন, “চেয়েছিলাম পাঁচ কুইন্টাল চিড়ে গুড়। পেয়েছি এক কুইন্টাল। ওই চিড়ে গুড় এলাকায় নিলে মার খেতে হবে। তাই স্কুল ঘরে রেখে দিয়েছি।” ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর পরিমল মালোদাস বলেন, “সোমবার নিজের পয়সায় ভাতের ব্যবস্থা করেছি। পুরসভা থেকে সামান্য চিড়ে দেওয়া হয়েছিল, সেটাও বিলি করেছি।”

ত্রাণের সমস্যার কথা অস্বীকার করেন পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান মোহন বসু। তিনি বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ডে চিড়ে, গুড়, বেবিফুড, চাল, পানীয় জল পাঠানো হয়েছে। ত্রাণের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”তবে একই অভিযোগ উঠেছে তিস্তা বাঁধে আশ্রিত বর্মনপাড়া ও চাতরাপাড়ে। যদিও এদিন এলাকা ঘুরে জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “সমস্যা হবে না। প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখতে দুদিনের সফরে ৩ সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়িতে আসবেন সেচমন্ত্রী।”

জলপাইগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE