Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কদর থেকেও অর্থাভাবে ধুঁকছে বাঁশ-বেতের শিল্প

কাঠের আসবাব বদলে গিয়ে শহরে গৃহস্থের ঘরে ঠাঁই নিয়েছে প্লাস্টিকের চেয়ার, টুল। কিন্তু গ্রামে এমন গৃহস্থ আজও মেলা ভার, যাঁর বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নে এখনও মোড়া এগিয়ে দেওয়া হয় না। ফসল মাপতে এখনও প্রচলন রয়েছে কাঠা ও ধামার।

হরিশ্চন্দ্রপুরের ভক্তিপুরে মোড়া বানাচ্ছে একটি পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

হরিশ্চন্দ্রপুরের ভক্তিপুরে মোড়া বানাচ্ছে একটি পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

বাপি মজুমদার
চাঁচল শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১১
Share: Save:

কাঠের আসবাব বদলে গিয়ে শহরে গৃহস্থের ঘরে ঠাঁই নিয়েছে প্লাস্টিকের চেয়ার, টুল। কিন্তু গ্রামে এমন গৃহস্থ আজও মেলা ভার, যাঁর বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নে এখনও মোড়া এগিয়ে দেওয়া হয় না। ফসল মাপতে এখনও প্রচলন রয়েছে কাঠা ও ধামার। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রেমা, ভক্তিপুর ও রণিয়াবাড়ি এলাকার দক্ষ বাঁশ ও বেত শিল্পীদের তৈরি সুদৃশ্য বাঁশ-বেতের মোড়া সহ কাঠা ও ধামার কদর রয়েছে চাঁচল মহকুমাজুড়েই। কিন্তু অভিযোগ, অর্থাভাবে বেশি সামগ্রী তৈরি করতে পারেন না, সামান্য পুঁজি নিয়েই কোনও ক্রমে টিকে থাকার লড়াই তাঁদের।

প্রেমা, ভক্তিপুর ও রণিয়াবাড়ি এলাকার শতাধিক পরিবার ওই মোড়া, কাঠা, ধামা তৈরির পেশায় যুক্ত। বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে ওই পেশার দৌলতে দু’বেলা অন্নসংস্থান হলেও সরকারি উদাসীনতার অভাবেই তিন এলকার বাঁশ-বেতের ওই কুটিরশিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বছরের পর বছর হন্যে হয়ে ঘুরেও ঋণের সংস্থান না হওয়ায় কত দিন আর ওই পেশায় টিঁকে থাকতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তাঁরা। এমনকী পঞ্চায়েত-প্রশাসনের কাছে হন্যে হয়ে ঘুরলেও তাঁদের আর্টিজান বা শিল্পী কার্ডও মেলেনি বলে অভিযোগ।

প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই বিষয়টি ব্লকে যাঁদের দেখভাল করার কথা, সেই শিল্প উন্নয়ন আধিকারিকের পদটিই কয়েক বছর ধরে খালি পড়ে থাকায় সমস্যা হচ্ছে। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের বিডিও বিপ্লব কুমার রায় বলেন, ‘‘এই ব্লকে আইডিও পদটি থাকলেও কোনও কর্মী নেই। তবে ওঁরা যদি ব্লকে যোগাযোগ করেন, তা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। তাও ওদের দেওয়া যায় কি না দেখব।’’

কিন্তু আর্টিজান কার্ড তো তাঁদের পাওয়ার কথা! তাতে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। তা হলে তা কেন পাচ্ছেন না তাঁরা? প্রশাসন সূত্রেই জানা যায়, ব্লকে যে সব আর্টিজান কার্ড এসেছিল, তা পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা যে সঠিক হাতে সব সময় যায় না, তা মানছেন প্রশাসনের কর্তারাই।

তিন এলাকায় ওই পেশায় যুক্তদের প্রায় প্রত্যেকেই অভাবি। পরিবারের পুরুষ, মহিলা তো বটেই ছোটরাও কাজে সাহায্য করে। কিন্তু বাঁশের দাম বেড়েছে। তাঁরা জানান, পরিবারের দু’জনে মিলে সারা দিনে দু’টি মোড়া তৈরি করতে পারেন। একেকটি তৈরিতে খরচ হয় দু’শো টাকা। এ দিকে দু’টো মোড়া বিক্রি করে বড়জোর লাভ থাকে ১০০ টাকা। ফলে যা লাভ থাকে তা দিয়ে দিন আনি দিন খাইয়ের থেকে বাড়তি কিছু থাকে না বললেই চলে বলে তাঁদের দাবি। ফলে পেশা ছেড়ে অনেকেই ভিনরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন।

ভক্তিপুরের সুকুমার দাসের কথাই ধরা যাক। মাধ্যমিক পাশ করার পর বাপ-ঠাকুর্দার পেশাকেই আঁকড়ে ধরেছেন। বাবা অসুস্থ। মা অনিতাদেবীও একই কাজ করেন। তাঁরা বলেন, ‘‘বাপ-ঠাকুর্দার পেশাকে ভুলতে পারিনি বলে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। পুঁজি না থাকায় দু’একটি তৈরি করে অনেক সময় লাভ ছাড়াই বিক্রি করে দিতে হয়। তা না হলে যে পেট চলে না।’’

প্রেমার মদন দাস, রণিয়াবাড়ির দ্বিজেন দাস, সাকরাতু দাসরা বলেন, ‘‘আমাদের কথা আর কে ভাবে। একটু সাহায্য পেলে আমরা খেয়ে-পড়ে বাঁচতাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE