Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কুকুরের খুনিদের ধরতে তল্লাশি শুরু

কুকুর নিধন কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে পশুহত্যা (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৯ ও ৩৪ ধারা) ও প্রিভেনশন অব অ্যানিম্যাল ক্রুয়েলটি আইনের ধারায় মামলা দায়ের করলো পুলিশ।

হিলিতে তদন্তে প্রাণীসম্পদ দফতরের আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র।

হিলিতে তদন্তে প্রাণীসম্পদ দফতরের আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

কুকুর নিধন কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে পশুহত্যা (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৯ ও ৩৪ ধারা) ও প্রিভেনশন অব অ্যানিম্যাল ক্রুয়েলটি আইনের ধারায় মামলা দায়ের করলো পুলিশ।

কাঁটাতারহীন ওই এলাকা টপকে অভিযুক্তরা ওপারে গা ঢাকা দিয়েছে বলে সন্দেহ করে পুলিশ তাদের ধরতে বিএসএফের মাধ্যমে বিজিবি-রও (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) সাহায্য চেয়েছে। এদিন স্থানীয় বিএসএফ ফাঁড়ির পক্ষ থেকেও ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

তবে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে ওই ঘটনার পর একদিন কেটে গেলেও অভিযুক্ত মিলন মন্ডল, জুয়েল মন্ডল এবং আয়েবনবি মন্ডলকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। জেলা পুলিশ সুপার রসিদ মুনির খান বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চোরাকারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ পেয়েছি। সোমবার রাতে এলাকায় হানা দেওয়া হয়েছিল। ওরা পালিয়ে গিয়েছে। তবে শীঘ্রই তাদের ধরা হবে।’’

রাতে সীমান্তের ওপারে পাচারের সময় এলাকার কুকুরগুলি চিৎকার করে বাসিন্দা এবং বিএসএফকে সতর্ক করে দিত। সেই কারণে অভিযুক্তরা খাবারে বিষ মিশিয়ে কুকুরগুলিকে মেরে ফেলেছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। সোমবার সকালে ওই এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ২০টি কুকুরের দেহ পড়ে থাকতে দেখে বাসিন্দারা সরব হন। চোরাকারবারে সঙ্গে যুক্ত ওই তিন অভিযুক্তকে কুকুরগুলিকে খাবার দিতে দেখেছেন এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। তাদের মধ্যে স্থানীয় বধূ পুতুল চৌহান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জানান, ওই খাবার খাওয়ার পরই কুকুরগুলি ছটফট করে মারা যায়। সোমবার সকালে কুকুরগুলির মৃতদেহ দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসিন্দারা। এরপর প্রশাসন নড়ে বসে।

মঙ্গলবার ওই ঘটনায় বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংগঠন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এ দিন বালুরঘাট থেকে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের-সহ অধিকর্তা সমীর মোদক, হিলির জয়েন্ট বিডিও রবিশঙ্কর রায়, জেলা পশুক্লেশ নিবারণ কমিটি সদস্য বিশ্বজিৎ বসাক এবং পশু চিকিৎসকের একটি দল সরেজমিন তদন্তে এলাকায় যান। বাসিন্দাদের সঙ্গে তারা কথা বলেন। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘এদিনও দুটি কুকুর ও বিড়ালের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের নাকেমুখে রক্ত লেগে ছিল।’’ পরে বিভাগীয় সহ অধিকর্তা সমীরবাবু বলেন, তিনটি মৃত কুকুরের দেহাংশ সংরক্ষণ করে বেলগাছিয়ার পশু ফরেন্সিক বিভাগে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ দিন পশু চিকিৎসকের ওই দলটি হিলি থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়েরর দাবি জানান। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পশুক্লেশ নিরারণ কমিটির চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে তদন্তে নেমেছে।’’

ভোটের পর থেকেই হিলি সীমান্তের কাঁটাতারবিহীন উজাল এলাকার চোরাপথ দিয়ে ওপারে জিরে, কচ্ছপ, গরু পাচারের দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ভারত-বাংলাদেশ সীমানা লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা চুরি, ডাকাতি রোধে দুষ্কৃতীদের গতিবিধি টের পেতে পাড়ায় পাড়ায় দেশি কুকুরগুলিকে লালনপালন করেন। এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, বিষ মেশানো মুড়ির সঙ্গে রসগোল্লা রস মাখিয়ে এলাকার কুকুরগুলিকে খাইয়ে অভিযুক্ত দলটি মেরে ফেলেছে। হিলি ব্লকের পশু চিকিৎসক ছায়ারানি মাঝি, পশু হাসপাতালের চিকিৎসক প্রকাশ রায়চৌধুরী জানান, কোনও রোগের কারণে নয়। আমাদের সন্দেহ, বিষ খাইয়ে এতগুলি কুকুরকে হত্যা করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE