Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কার্নিভালের সুযোগে ব্যবসা বাড়াচ্ছে বিনোদন পার্ক, ক্ষোভ

পুরসভার সহযোগিতায় আয়োজিত শিলিগুড়ি কার্নিভালকে সামনে রেখে একটি বেসরকারি বিনোদন সংস্থা ব্যবসা বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শহরবাসীদের অনেকে অভিযোগ করেছেন। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, দাগাপুরের ওই বিনোদন পার্কে যে অনুষ্ঠান হচ্ছে সেখানে ঢোকা থেকে শুরু করে প্রতিপদে নানা ভাবে টাকা নেওয়া হচ্ছে। কার্নিভ্যালের অঙ্গ হিসাবে কিডস ফেস্টিভ্যাল জেনে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।

শিলিগুড়ি কার্নিভালের কিড ফেস্টে কাজে নিয়োজিত ছোটরা। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

শিলিগুড়ি কার্নিভালের কিড ফেস্টে কাজে নিয়োজিত ছোটরা। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২২
Share: Save:

পুরসভার সহযোগিতায় আয়োজিত শিলিগুড়ি কার্নিভালকে সামনে রেখে একটি বেসরকারি বিনোদন সংস্থা ব্যবসা বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শহরবাসীদের অনেকে অভিযোগ করেছেন।

ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, দাগাপুরের ওই বিনোদন পার্কে যে অনুষ্ঠান হচ্ছে সেখানে ঢোকা থেকে শুরু করে প্রতিপদে নানা ভাবে টাকা নেওয়া হচ্ছে। কার্নিভ্যালের অঙ্গ হিসাবে কিডস ফেস্টিভ্যাল জেনে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। ক্ষুব্ধ শহরবাসীদের কয়েকজনের অভিযোগ, পুরসভার কার্নিভালকে সামনে রেখে এ ভাবে বেসরকারি সংস্থা ব্যবসা বাড়াচ্ছে।

বিনোদন সংস্থার অন্যতম প্রদীপ কুমার শা বলেন, “কার্নিভালের অংশ হলেও তারা আমাদের আয়োজনের কোনও খরচ দেননি। কিড ফেস্টিভ্যালের আয়োজনে যে বিপুল খরচ হয়েছে তার জন্য বাসিন্দাদের কাছ থেকে বিভিন্ন শো এবং বিনোদনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আলাদা করে ফি নিতে হচ্ছে।” তবে তাঁর দাবি, সংস্কৃতিক মঞ্চে গান শোনা, জাগলিং শোর মতো বাচ্চাদের পছন্দের কয়েকটি বিষয় নিখরচায় বিনোদনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য জানিয়েছেন, ওই কিড ফেস্টিভ্যাল কার্নিভালের অংশ নয়। কিন্তু পুরসভার কমিশনার তথা কার্নিভাল কমিটির চেয়ারম্যান, পুর সচিবরা দাগাপুরের বিনোদন পার্কে গিয়ে কার্নিভালের অঙ্গ হিসাবে কিড ফেস্টিভ্যালের কথা ঘোষণা করেছিলেন। পুরসভা থেকে বিলি করা কার্নিভালের অনুষ্ঠানসূচিতেও কিড ফেস্টিভ্যালের নাম রয়েছে।

কী হচ্ছে ওই কিড ফেস্টিভ্যালে?

কার্নিভালের ওই অনুষ্ঠানে ঢোকার জন্য মাথাপিছু ৩০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হচ্ছে। বাচ্চা, বয়স্ক সকলেরই এক ফি। বাইক বা গাড়ি নিয়ে গেলে তা পার্কিংয়ে রাখার জন্য ১০ টাকা, গাড়ি রাখতে দ্বিগুণ টাকা দিতে হচ্ছে। তার পর ভিতরে ঢুকে প্রতিটি ক্ষেত্রে আবার আলাদা করে ফি দিলে তবেই কোনও কিছুতে অংশ নিতে হচ্ছে। যেমন কচিকাঁচারা ছোটা ভীম, চুটকি, জগ্গুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে চাইলে বা নাচতে চাইলে ফি ১৫০ টাকা। ছোট ভীমের ট্যাটু আঁকতে চাইলে ৫০ টাকা। ‘গেম’ খেলতে চাইলে প্রতিটির জন্য ২০ টাকার কুপন কিনতে হচ্ছে।

কিড ফেস্টিভ্যালে শিশুদের নিয়ে গিয়ে তাই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের। পরিবারের দুই তিন জন শিশু থাকলেই অন্তত হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। যা দেখে মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারই ভিতরে ঢুকে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে কিছুক্ষণ সেভিন কিংডমে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে বসে ফিরে যাচ্ছেন। যাঁরা খরচ করে শিশুদের খুশি করছেন তারাও ক্ষুব্ধ।

শিলিগুড়ির বাসিন্দা শ্রীদীপ নিয়োগী তাঁর বাচ্চাকে কিড ফেস্টিভ্যালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ১৫০ টাকা দিয়ে কুপন কাটলে তবেই ছোটাভিমের সঙ্গে ছবি তোলা যাবে জেনে তিনি অবাক হন। ছোটাভীমের সঙ্গে ছবি তোলার পাশে অন্য একটি জায়গায় ভীমের মুখে বল ছোড়া, বক্সে বল ছোংড়া, গুলতি দিয়ে টিপ করা, বোতল লক্ষ্য করে বল ছোড়ার মতো খেলার জন্য ২০ টাকা করে কুপন কিনতে হচ্ছে।

শ্রীদীপবাবুর ক্ষোভ, “বাচ্চাদের সামান্য ছবি তোলার জন্য ১৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। শহরে কার্নিভাল বলে এত হইচই করা হচ্ছে অথচ প্রতি পদে টাকা দিয়ে আনন্দ করতে হলে সাধারণ মানুষ এ ধরনের কিড ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতেই পারবেন না। খুবই হতাশাজনক।” অপর এক বাসিন্দা রতন মিশ্র বলেন, “কার্নিভালের আয়োজন করতে শুনছি টাকা তোলা হয়েছে। তা হলে তা কোথায় খরচ হল? আমাদের কার্নিভালের কিড ফেস্টিভ্যালে এসে এতটাকা গুনতে হল কেন?”

পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া অবশ্য অন্য যুক্তি দিচ্ছেন। তাঁর দাবি, “ওই বিনোদন সংস্থাকে ফি না নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। তারা ভেবে দেখবেন বলেও জানিয়েছিলেন। পরে তারা সেটা করতে পারেননি বলে মনে হচ্ছে।” পুর এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানান, তাঁরা কমিশনারকে এ দিনই ওই ফেস্টিভ্যালে দেখেছেন এবং প্রতি পদেই যে ফি নেওয়া হচ্ছে, সেটাও জেনেছেন। কমিশনার দাবি করেন, “কেউ আমাকে লিখিত অভিযোগ করেননি।”

কার্নিভালে কিড ফেস্টিভ্যাল হচ্ছে শুনে এলেছিলেন কার্শিয়াঙের বাসিন্দা প্রণীত প্রধান এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। প্রণীতবাবুর বোনের ছোট দুই মেয়ে ছোটা ভীমের সঙ্গে ছবি তুলতে চাইছিলেন। ফি শুনে তিনিও হতবাক। তিনি বলেন, “ঢোকার সময় একবার সকলের জন্য টিকিট কাটতে হয়েছে। আবার বিভিন্ন জায়গায় টিকিট কেটে ৫০০ টাকা খরচ হয়ে গেল। পুরসভার নাম করে এভাবে ব্যবসা বাড়ানো হল, বললে কী খুব ভুল হবে?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

soumitra kundu siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE