শিলিগুড়িতে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে পুনর্নিবাচন কেন্দ্রের সামনে এক সঙ্গে সব দলের প্রার্থীরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
ভোটের দিন সাত সকাল থেকে সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র একযোগে ‘বহিরাগত’ প্রতিরোধ বা লড়াই-এর ছবি শহরের অনেক জায়গাতেই দেখা গিয়েছিল। আজ, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে প্রধাননগরের মার্গারেট স্কুলে পুরভোটের গণনা শুরু হবে। সেখানে ভোটের দিনের মতই দলের কর্মীদের ‘সক্রিয়’ ভূমিকা পালন করার নির্দেশ দিল সিপিএম, কংগ্রেসের মত বিরোধী দলগুলি।
এমনকী, শাসক দলের প্রতিনিধি বা সরকারির অফিসারদের তরফে কোনও গোলমাল করা হচ্ছে বলে মনে হলেই সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ, আইন মেনে প্রতিবাদ করার জন্যও বলা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। অনেকটাই একযোগে প্রতিরোধের মত। মঙ্গলবার বিকাল থেকে আরও উল্লেখযোগ্যভাবে গণনা কেন্দ্রের অদূরে কংগ্রেস এবং সিপিএমের ক্যাম্প অফিসও রাস্তার একপাশেই পাশাপাশিই প্রায় তৈরি হয়েছে। অন্য দিকে রয়েছে শাসক তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস।
বামদের মেয়র পদপ্রার্থী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা আমাদের কাউন্টিং এজেন্টদের অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে সকাল থেকে থাকতে বলেছি। ইভিএমে সর্বক্ষণ তীক্ষ্ণ নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে। বাইরে ক্যাম্প অফিসেও কর্মীরা থাকবেন। আমাদের আশা, ভোটের দিন যেমন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা হয়েছে। আমারা আশা করছি, গণনা শান্তিতে হবে।’’
দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘কোনও রকম বৈজ্ঞানিক কারচুপির জায়গা যাতে না থাকে, তার দিকে নজর রাখতে কাউন্টিং এজেন্টদের বলা হয়েছে। শাসক দলের প্রতিনিধিদের কথায় অফিসারেরা কেবল না চলেন তাও কর্মীদের দেখতে বলা হয়েছে। ছয়টার মধ্যে কর্মীরা এলাকায় চলে যাবেন।’’
শিলিগুড়ি কলেজের পরিবর্তে এ বার প্রথমবার মার্গারেট স্কুলে পুরভোটের গণনা হচ্ছে। ভোটের পর দুই দিন পর সোমবার সকাল থেকে স্কুল চত্বরে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। পুলিশের তরফেও গণনা কেন্দ্রের বাড়তি নিরাপত্তা ছাড়াও সামনের রাস্তার রাজনৈতিক দলগুলির ক্যাম্প অফিসগুলিকে ঘিরে নজরদারি বেশি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনও উত্তেজনা বা গোলমাল এড়াতে বাড়তি ফোর্সও থাকবে। এ দিন সকাল থেকে দমকল, বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি’র কর্মীরা কেন্দ্রের সমস্ত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। বেলা ১২ নাগাদ পুরসভার সাধারণ পর্যবেক্ষক অবনীন্দ্র সিংহ মার্গারেট স্কুলে গিয়ে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন।
আবার সোমবার সন্ধ্যায় ভূমিকম্পে শিলিগুড়ি কেঁপে উঠতেই গণনাকেও তার ছোঁয়া লেগে যায়। বামেদের তরফে অশোকবাবু সাধারণ পর্যবেক্ষককে টেলিফোন করেন কয়েকটি বাড়তি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। অশোকবাবু জানান, শহরের গত দু’দিন ধরে বাড়েবাড়ে ভূমিকম্প হচ্ছে। গণনার সময় তা হলে লোকজন তো কেন্দ্রের বাইরে চলে আসার চেষ্টা করবেন। সে ক্ষেত্রে ইভিএমের নিরাপত্তার দিকটা সুনিশ্চিত রাখতে হবে। আর বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্যও বলেছি।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মার্গারেট স্কুলের ৯টি কাউন্টিং হলে আলাদা আলাদাভাবে ৪৭টি ওয়ার্ডের গণনা হবে। ওয়ার্ডগুলির বুথ এবং ভোটারদের সংখ্যা অনুসারে সেগুলিকে ভাগ করা হয়েছে। কোনও কাউন্টিং হলে আটটি আবার কোথাও সাতটি রাউন্ড গণনা রাখা হয়েছে। সকাল ৮টায় প্রথমেই ৮, ১, ২৪, ২২, ৩৬, ১০, ১২, ৩৭ এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডের গণনা দিয়েই প্রথম রাউন্ডের প্রক্রিয়া শুরু হবে। উল্লেখ্য, এই রাউন্ডেই তৃণমূলের প্রতুল চক্রবর্তী, নান্টু পাল, রঞ্জনশীল শর্মার মত জেলার নেতার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যাবে। তেমনিই পরিস্কার হয়ে যাবে সিপিএমের কমল অগ্রবাল বা শালিনী ডালমিয়ার ভাগ্যও। কমিশনের অফিসারদের আশা, মোটামুটি বেলা ২টার মধ্যেই শিলিগুড়ি পুরসভার ছবিটা পরিস্কার হয়ে যাবে।
গণনা পুরোপুরি নির্বিঘ্নে শেষ করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পুরসভা ভোটের রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমা শাসক দীপাপ প্রিয়া। তিনি জানান, সমস্ত প্রস্তুটি শেষ হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলিকে সব কিছু বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তা, বিকল্প বিদ্যুত ব্যবস্থা থাকছেই। আর সমস্ত কাউন্টিং হল আর কেন্দ্রটি ‘সিসিটিভি সার্ভেল্যান্স’-এর মধ্যে থাকছে। আমাদের আশা, ভোটের মত গণনাও নির্বিঘ্নে মিটবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy