ভূমিকম্পে পর পর তিন বার কেঁপে উঠল কোচবিহারের বিস্তীর্ণ এলাকা। মঙ্গলবার রাতে কোচবিহার সদর, দিনহাটা ও তুফানগঞ্জ মহকুমায় কম্পন অনুভূত হয়। মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জের কিছু এলাকাতেও বাসিন্দারা কম্পন টের পান। তবে ওই তিন মহকুমার তুলনায় তীব্রতা ছিল খানিকটা কম। জেলার কোনও এলাকা থেকেই অবশ্য ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি। ভূমিকম্পের ঝুঁকি প্রবণ এলাকাগুলির মধ্যে ‘জোন ফাইভ’ তালিকায় থাকা কোচবিহারের বাসিন্দাদের মধ্যে মঙ্গলবার রাতে তিন দফায় কম্পন আতঙ্ক তৈরি করেছে।
মঙ্গলবার রাত ২ টো ৩৩ মিনিট নাগাদ প্রথম কম্পন অনুভূত হয়। তারপর রাত সওয়া ৪টে এবং ভোর ৫টা নাগাদ কম্পন টের পান বাসিন্দারা। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে রিখটার স্কেলে প্রথম কম্পনের মাত্রা ছিল ৩.৮, দ্বিতীয় কম্পন ৪.৪ এবং ভোর ৫টার কম্পনের মাত্রা ছিল ৪.২। প্রতিটি কম্পনের উৎসস্থলই ছিল অসমের ধুবুরি। মধ্যরাতের প্রথম কম্পনের পরে পরের দুটি কম্পনকে ‘আফটার শক’ বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হলেও, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বার প্রথম বারের থেকে রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা বেশি থাকায়, সেগুলি শুধুমাত্র ‘আফটার শক’ নয় বলেই আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। উৎসস্থল কাছাকাছি হওয়ায় কোচবিহারেও কম্পন বেশ ভাল ভাবেই টের পাওয়া গিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
প্রথম কম্পন টের পাওয়ার পরেই, বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। উলুধ্বনির সঙ্গে শাঁখের আওয়াজও শোনা যায় বিভিন্ন এলাকায়। আতঙ্ক কেটে ঘুমোতে যাওয়ার পরে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে সওয়া চারটে নাগাদ ফের কেঁপে ওঠে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ফের আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে আসেন বাসিন্দারা। ভোর পাঁচটা নাগাদ তৃতীয়বার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর আতঙ্ক চরমে ওঠে। দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাণা গোস্বামী বলেন, “ভোর চারটে নাগাদ আলমারি নড়ার শব্দে চমকে উঠি। ওই রেশ কাটতে না কাটতে ফের ভূমিকম্প টের পাই। তারপরে বাইরে বেরিয়ে আসি।” কোচবিহারের বাসিন্দা বিজেপির জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “একটু বেশি রাতে ঘুমোনো অভ্যাস। হঠাৎ খাটের ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে যায়। দোতলার ঘর থেকে নেমে আসি।” ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও, ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় থাকা কোচবিহারে নির্মাণ নিয়ে কোনও বিধিনিষেধের বালাই নেই বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। নতুন বাজার থেকে ভবানীগঞ্জ বাজার, রেলঘুমটি থেকে মরাপোড়া চৌপথি এলাকায় অগুনতি বহুতল তৈরি হলেও, ভূমিকম্প রোধ বিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ। পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের মহানন্দ সাহা বলেন, “বহুতল নিয়ম মেনে তৈরি হচ্ছে না। পুরসভা, প্রশাসন কেউ দেখার নেই।” যদিও, কোচবিহার পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান বীরেন কুণ্ডু দাবি করেছেন, “দমকল, স্ট্র্যাকচারাল ইঞ্জিনিয়রদের শংসাপত্র, মাটি পরীক্ষা রিপোর্ট এবং কিছু বিষয় নিশ্চিত হয়েই বহুতলের অনুমতি দেওয়া হয়।”
কোচবিহার কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান শশাঙ্ক গায়েন এই দিন এই প্রসঙ্গে বলেন, “কোচবিহার জেলা ভূমিকম্পপ্রবণ জোনে রয়েছে। যে ভাবে বহুতলের সংখ্যা বাড়ছে সেটাও উদ্বেগের।” কোচবিহার টাউন হাইস্কুলের ভূগোলের শিক্ষক সঞ্জয় ডাকুয়া বলেন, “ভবিষ্যত পদক্ষেপ নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।” রাজ্যের পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হবে। বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে মাটি পরীক্ষা সহ আনুষঙ্গিক সব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy