Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

গাদাগাদি ঘর, ক্লাস নেওয়া দায় প্রাথমিকে

এক শহরে দুই ছবি। শহরের কয়েকটি স্কুলে পড়ুয়াদের ভিড়ে ক্লাস নেওয়াই দায়। কিছু স্কুলে আবার স্বাভাবিক ছবি। এমন বিপরীত চিত্রের কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের আইন। কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, কোনও হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় যদি কোনও প্রাথমিক স্কুল থাকে, তবে সেই প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা সরাসরি ওই হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে।

একই বেঞ্চে গাদাগাদি করে ক্লাস। এই ছবি শহরের অনেক স্কুলেই। ছবি: তরুণ দেবনাথ।

একই বেঞ্চে গাদাগাদি করে ক্লাস। এই ছবি শহরের অনেক স্কুলেই। ছবি: তরুণ দেবনাথ।

গৌর আচার্য
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৭
Share: Save:

এক শহরে দুই ছবি। শহরের কয়েকটি স্কুলে পড়ুয়াদের ভিড়ে ক্লাস নেওয়াই দায়। কিছু স্কুলে আবার স্বাভাবিক ছবি।

এমন বিপরীত চিত্রের কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের আইন। কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, কোনও হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় যদি কোনও প্রাথমিক স্কুল থাকে, তবে সেই প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা সরাসরি ওই হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে।

সেই আইনকে হাতিয়ার করেই রায়গঞ্জের অভিভাবকদের একটা বড় অংশ শহরের একাধিক নামী ও পছন্দের হাইস্কুলে তাঁদের ছেলেমেয়েদের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ করে দিতে চাইছেন। তাই শহরের যে অঞ্চলে নামী হাইস্কুল রয়েছে, তার লাগোয়া প্রাথমিক স্কুলে ভর্তির জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ফি বছরই এমন ছবি দেখা যায় রায়গঞ্জে।

অভিভাবকরা তো চা চাইবেনই। কিন্তু বাদ সাধছে পরিকাঠামো। পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, শিক্ষক, শিক্ষিকা, পানীয় জল ও শৌচাগারের অভাবে ওই সব প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ সংলগ্ন হাইস্কুলের ক্লাসরুম ব্যবহার করে প্রাথমিকের পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার, নামী হাইস্কুলের সংখ্যা হাতেগোনা হওয়ায় অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরাই হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় দফতর সূত্রের খবর, রায়গঞ্জ পুরসভা এলাকায় মোট ৩৯টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। তার মধ্যে শহরের পাঁচটি নামী হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় ৭টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। তার মধ্যে ৪টি প্রাথমিক স্কুলে সার্বিক পরিকাঠামোর অভাবে অতিরিক্ত পড়ুয়াদের ক্লাস নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। শহরের বাকি ৩৫টি প্রাথমিক স্কুলে গড়ে মাত্র ৪৫ জন করে পড়ুয়া রয়েছে।

রায়গঞ্জের নামী স্কুল সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্র হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে দ্বারিকাপ্রসাদ জিএসএফ প্রাথমিক স্কুল। ওই স্কুলে প্রি-প্রাইমারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া রয়েছে ৩২৬ জন। শিক্ষক ও শিক্ষিকা মিলিয়ে রয়েছেন ১০ জন। ক্লাসরুমের সংখ্যা ৩টি। স্কুলের সহকারি শিক্ষক সঞ্জিত মুখোপাধ্যায় জানান, তিনটি ক্লাসরুমে সমস্ত পড়ুয়াদের বসিয়ে পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখা যায় না। পঠনপাঠন স্বাভাবিক রাখতে আরও দু’টি ক্লাসরুম দরকার। অতিরিক্ত পড়ুয়ার চাপে মিড-ডে মিল স্বাভাবিক রাখতেও সমস্যা হয় কর্তৃপক্ষের। শৌচাগার ও পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই।

রায়গঞ্জের অন্যতম নামকরা স্কুল বলে পরিচিত রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে রায়গঞ্জ জিএসএফপি প্রাথমিক স্কুল। ওই স্কুলে প্রি-প্রাইমারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৬৯৫ জন পড়ুয়া রয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষিকা মিলিয়ে রয়েছেন ১১ জন। ক্লাসরুম রয়েছে ৫টি। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কমলা মুখোপাধ্যায় জানান, ক্লাসরুমের অভাবে পড়ুয়াদের গাদাগাদি করে বসিয়ে ক্লাস নিতে হয়। তাই পড়ুয়াদের ঠিকমতো পড়ানো সম্ভব হয় না।

রায়গঞ্জ গার্লস হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে রায়গঞ্জ গার্লস প্রাথমিক হাইস্কুল। ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৫০০। ক্লাসরুম মাত্র দু’টি। গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মধুছন্দা দাস জানান, প্রাথমিক স্কুলে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম না থাকায় হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রতিদিন একাধিক ক্লাসরুম ব্যবহার করতে দিতে বাধ্য হন। তাঁর ক্ষোভ, “প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা প্রতিদিনই হাইস্কুল চত্বর নোংরা করছে। খুদে পড়ুয়ারা খেলতে খেলতে সময়ে হাইস্কুলের ছাদে উঠে যাওয়ায় যে কোনও সময়ে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।” তিনি বলেন, “শিক্ষার অধিকার কার্যকর হোক, তা আমরাও চাই। তবে তার আগে শিক্ষা দফতরের উচিত হাইস্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক স্কুলগুলির যথাযথ পরিকাঠামো গড়ে তোলা।

রায়গঞ্জের পার্বতীদেবী হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে পার্বতীদেবী এডেড এফপি প্রাথমিক স্কুল। ওই স্কুলেও অতিরিক্ত পড়ুয়াদের চাপ সামলাতে সংলগ্ন হাইস্কুলের ৩টি ক্লাসরুমে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের বসিয়ে ক্লাস নিতে হয়।

তবে এর দায় নিতে নারাজ অভিভাবকেরা। তাঁদের প্রশ্ন, “সকলেই চাইবেন যে তাঁদের সন্তানেরা ভাল পড়াশোনা করুক। এর মধ্যে অন্যায় কী? কর্তৃপক্ষের বরং উচিত ওই স্কুলগুলির পরিকাঠামো যাতে উন্নতি হয়, তার ব্যবস্থা করা।” জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক সুবলকুমার সাহু বলেন, “শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী আমরা পড়ুয়াদের ভর্তি নিতে বাধ্য। হা স্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক স্কুলগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়নের দাবি ও প্রস্তাব আমরা অনেকদিন আগেই পেয়েছি। জেলা সর্বশিক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।” জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক রেজানুল করিম তরফদার বলেন, “জমির অভাবে হাইস্কুল সংলগ্ন একাধিক প্রাথমিক স্কুলের অতিরিক্ত ক্লাসরুম তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, “সমস্যার সমাধানে আমরা সংশ্লিষ্ট হাইস্কুল কর্তৃপক্ষকে সংলগ্ন প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষকে ক্লাসরুম ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।”

তবে এ তো গেল প্রাথমিক স্কুলগুলির কথা। শহরের শিক্ষাক্ষেত্রে অন্য দিকের ছবি নিয়েও সন্তুষ্ট নন শহরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raiganj gour acharya amar shohor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE