একাধিকবার উত্তরবঙ্গ সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহার, বালুরঘাট এবং মালদহে বিমান পরিষেবা চালুর কথা বলেছেন। মাস তিনেক আগেও শিলিগুড়িতে এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহার থেকে কলকাতা হয়ে সিঙ্গাপুর বা কুয়ালালামপুর পর্যন্ত উড়ান চালু হচ্ছে বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু, তাঁর সেই পরিকল্পনায় কার্যত জল ঢেলে দিলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ি।
বাগডোগরা, মালদহ, বালুরঘাট--এই তিনটি বিমানবন্দরই শুদ্ধসত্ত্ববাবুর অধীনে। বৃহস্পতিবার তিনি জানান, কোচবিহার বিমানবন্দরের রানওয়ে বাড়ানোর যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, তা শেষ হতে সাড়ে তিন বছর লাগবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞেরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ নিয়ে রিপোর্ট দেবেন। তার পরে সদর দফতরের অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু হবে। শুদ্ধসত্ত্ববাবু বলেন, “শুধু কোচবিহার বিমানবন্দর চালু হতে পারে। তাও সাড়ে তিন বছর পরে। কারণ, সেখানে কিছুটা পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে। মালদহ ও বালুরঘাটে কিছুই নেই। ওই দুই বিমানবন্দর নিয়ে এখন কর্তৃপক্ষের কোনও পরিকল্পনাও নেই।” তিনি জানান, বিমানসংস্থাগুলির তরফে কোনও খোঁজখবরও করা হয়নি। তবে ওই দুই জায়গায় হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে এসে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিমান পরিষেবার কথা ঘোষণা করে গেলেও যাঁরা বিমানবন্দর তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা জানাচ্ছেন, মালদহ ও বালুরঘাট থেকে কবে বিমান পরিষেবা চালু করা যাবে, তা এখনই বলা যাবে না। বুধবার বাগডোগরা বিমানবন্দর ঘুরে দেখেন শুদ্ধসত্ত্ববাবু। সঙ্গে ছিলেন বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা রাকেশ সহায়। পরে শুদ্ধসত্ত্ববাবু বলেন, “বাগডোগরা, কোচবিহার, গুয়াহাটি, কলকাতা এই রুটে বিমান চলতেই পারে। এক টানা কিছু দিন তা চললে রুটগুলি লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে তার জন্য কোচবিহারের রানওয়ে বাড়ানো দরকার।” তিনি জানান, এখন যতটা রানওয়ে রয়েছে তাতে মাঝারি মাপের বিমান ওঠানামা করতে পারবে না। বড় জোর ২০ আসনের বিমান ওঠানামা করতে পারবে। তাই ঠিক হয়েছে, কোচবিহার বিমানবন্দরের রানওয়ে লাগোয়া মরা তোর্সা নদীর উপরে সেতু তৈরি করা হবে। সেই কাজ শেষ করতেই সাড়ে তিন বছর সময় লাগবে। বালুরঘাটের মাহিনগর এবং মালদহের মাধবনগরের বিমানবন্দর এখন কার্যত বন্ধই। দু’জায়গাতেই রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টায় কলকাতা থেকে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু হলেও তা অনিয়মিত বলে দুই জেলার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারাই জানিয়েছেন। বালুরঘাটে ৩২ লক্ষ টাকা খরচ করে রাজ্য সরকার কিছু পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করেছে। তবে তা শুধু হেলিকপ্টার পরিষেবার জন্যই। মালদহে যে পুরনো বিমানবন্দর রয়েছে, সেখানকার রানওয়ে বাড়ানোর জন্য জমি প্রয়োজন। সেই জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। এদিন ওই দুই শহর থেকে বিমান পরিষেবার সম্ভাবনার কথা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে উড়িয়ে দেওয়ার পরে বালুরঘাট ও মালদহে হতাশা বেড়েছে।
কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুব্রত সাহা বলেন, “যত দেরি হবে ততই শিল্পের সম্ভাবনা পিছিয়ে পড়বে।” দক্ষিণ দিনাজপুর চেম্বার অব কর্মাসের সম্পাদক সুদীপ বাগচি এবং মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অব কর্মাসের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা কার্যত একই সুরে বলেছেন, “সরকারের ঘোষণায় আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু তা তো হচ্ছে না শুনছি। এতে জেলার শিল্প সম্ভাবনা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।”
সূত্রের খবর, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯১ সাল অবধি কোচবিহারে ছোট বিমান চালাত বায়ুদূত। তারপর বন্ধ হয়ে যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে বিমান পরিষেবা চালু করেন। কিন্তু কয়েক মাস পরেই যাত্রীর অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে এসে ঘোষণা করেন, কোচবিহার থেকে আবার বিমান পরিষেবা চালু হবে। এই বিমানবন্দর থেকে উড়ান চালালে বিমানসংস্থা জ্বালানি কেনার সময়ে রাজ্যকে দেয় কর থেকে ছাড় পাবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছিল। তবু উড়ান সংস্থাগুলি উৎসাহী হয়নি।
কিন্তু, রানওয়ে বড় হলেও পেশাদার বিমানসংস্থা কোচবিহার থেকে উড়ান চালাবে কি না, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিমান পরিবহণ মহলে। মালদহ বা বালুরঘাট তো দূর অস্ৎ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy