ডাকাতদের মারে জখম দম্পতি। ছবি: বাপি মজুমদার।
নদী পেরিয়ে গ্রামে ঢুকে পাশাপাশি দু’টি বাড়িতে অন্তত ৪০ মিনিট ধরে লুঠপাট চালাল ৭০ জনের দুষ্কৃতী দল। দুষ্কৃতীদের সবার হাতেই আগ্নেয়াস্ত্র অথবা লোহার রড ছিল বলে অভিযোগ। লোহার রড দিয়ে মেরে দুই পরিবারের অন্তত পাঁচ জনের মাথা ফাটিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। আলমারির তালা ভেঙে দুই বাড়ি থেকেই নগদ এবং গয়না মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকা ডাকাতি করে দুষ্কৃতী দলটি। লুঠপাট চলাকালীন যথেচ্ছ বোমাবাজি করে তারা। ফেরার সময়ে শূন্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় বলেও অভিযোগ। শুক্রবার রাতে এই ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয় মালদহের চাঁচল থানার জগন্নাথপুর এলাকায়।
শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ দুষ্কৃতী দলটি প্রথম হানা দেয় এলাকায় সচ্ছল গৃহস্থ হিসেবে পরিচিত দুলাল পালের বাড়িতে। গ্রিলের দরজার তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে তারা। কিছু পরে এদেরই মধ্যে কয়েকজন দুষ্কৃতী টিনের চাল উপড়ে ঢুকে পড়ে লাগোয়া চঞ্চল কুণ্ডুর বাড়ি। তাঁর আর্থিক অবস্থাও যথেষ্ট ভালো বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। দু’টি বাড়িতে ঢুকেই পরিবারের সদস্যদের এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে দুষ্কৃতীরা। রেয়াত করা হয়নি মহিলাদেরও। দুষ্কৃতীরা মেরে দুলালবাবুর মাথা ফাটিয়ে দেয়। তাঁর স্ত্রীকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীদের লোহার রডের আঘাতে চঞ্চলবাবুরও মাথা ফেটে যায়, তাঁর দুটি দাঁতও ভেঙে গিয়েছে। চঞ্চলবাবুর স্ত্রী গীতা দেবীরও মাথা ফাটিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। তাঁদের ছেলে বিশ্বজিত বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় তার মাথাতেও লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীদলের সকলেরই মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল এবং তারা নিজেদের মধ্যে হিন্দিতে কথা বলছিল বলে জানা গিয়েছে।
বছর দুয়েক আগেও একবার চঞ্চলবাবুর বাড়িতে ডাকাতি হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তাঁর ছেলে বিশ্বজিত বলেন, “দু’বছর আগেও বাড়িতে ডাকাতি হয়েছিল। সেবার কাউকে মারধর করা হয়নি। কিন্তু এবার প্রথম থেকেই দুষ্কৃতীরা মারধর শুরু করে।’’ দুলালবাবু বলেন, “আমরা লুঠপাটে বাধা দেওয়ার কোনও চেষ্টাই করিনি। তবু আমাদের মারধর করা হয়েছে।” স্থানীয় হাসপাতালে ডাকাতদের মারে জখম পাঁচজনের প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়।
৪০ মিনিট ধরে দুষ্কৃতী দলটি তান্ডব চালালেও বোমাবাজি এবং গুলি চলতে থাকায় পড়শিরা কেউ ভয়ে বাড়ি থেকে বের হননি বলে দাবি করেছেন। পরে তারাই পুলিশে খবর দেন। কিন্তু পুলিশ পৌঁছানোর আগেই দুষ্কৃতী দলটি নদী পেরিয়ে পালিয়ে যায়। চাঁচল থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে উত্তর দিনাজপুর ও বিহার সীমানা লাগোয়া এলাকা জগন্নাথপুর। প্রায়ই বিহার থেকে দুষ্কৃতীদল এই এলাকায় ঢুকে হামলা চালায় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। মহানন্দা নদী ঘেঁষা জগন্নাথপুর এলাকার ওপারেই বিহারের আবাদপুর থানা ও উত্তরদিনাজপুরের ইটাহার এলাকা। সে কারণে পুলিশেরও সন্দেহ বিহার থেকে নদী পার হয়ে দলটি গ্রামে ঢোকে। চাঁচলের এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য বলেন, “তদন্ত চলছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”
গ্রামে ঢুকে দুষ্কৃতী দলের তাণ্ডবের ঘটনায় পুলিশের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy