Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চাষে লাভ কী করে, হাইটেক প্রশিক্ষণ শিবির

খেতে-খামারে কাজের অভিজ্ঞতাও নেই ওদের অনেকেরই। কেউ নার্সিংহোমের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আবার কেউ বিমা সংস্থার কর্মী। কেউ পড়াশোনা করে কর্পোরেট দুনিয়ায় কাজ করছিলেন। তাতে কী।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:০৪
Share: Save:

খেতে-খামারে কাজের অভিজ্ঞতাও নেই ওদের অনেকেরই। কেউ নার্সিংহোমের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আবার কেউ বিমা সংস্থার কর্মী। কেউ পড়াশোনা করে কর্পোরেট দুনিয়ায় কাজ করছিলেন। তাতে কী। ব্যবসার উদ্দেশ্যে ‘হাইটেক’ পদ্ধতিতে ফুল-ফল-সব্জি চাষে উৎসাহী হচ্ছেন তাঁরাও। ওই তালিকায় রয়েছে দিনহাটার বিনিতা চৌধুরী, সৈকত রায়, জলপাইগুড়ির সরজিৎ মণ্ডল, দীপঙ্কর দত্ত, আমবাড়ির সমীর নন্দী, ওম কুমার থাপা, শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়ির বাসিন্দা ব্যবসায়ী গৌতম ঘোষ, শুভম সরকারদের মতো অনেকেই।

এ ধরনের বিভিন্ন পেশার মানুষদের ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চাষ-আবাদে উৎসাহী করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ফ্লোরিকালচার অ্যান্ড এগ্রি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (কোফাম) বিভাগ। চাষ-আবাদকে তাচ্ছিল্য করার যে ব্যাপার নেই, কৃষি ক্ষেত্রেও ব্যবসার যে বড় সুযোগ, সম্ভবনা রয়েছে সেটাই সকলের সামনে তুলে ধরতে সচেষ্ট কোফামের আধিকারিকরা। গ্রিন হাউজ তৈরি করে অত্যাধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতিতে কী ভাবে চাষ করা সম্ভব তার খুঁটিনাটি সম্প্রতি উৎসাহীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোফামের ক্যাম্পাসে কর্মশালা হয়।

কোচবিহারের বিনিতা চৌধুরীর বাবা বিমানবাবু পেশায় ইঞ্জিনিয়র, সৈকত রায়ের বাবার ঠিকাদার সংস্থা রয়েছে। তবে বিনিতা, সৈকত দুজনেই ‘সয়েল অ্যান্ড এগ্রিকালচার’ নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনা শেষে সৈকত একটি সার কোম্পানির বড় পদেও ছিলেন। এখন এলাকার আরও কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তিকে নিয়ে ৬ বিঘা জমিতে গ্রিন হাউজ তৈরি করে স্ট্রবেরি, মাশরুমের মতো বিভিন্ন চাষ শুরু করতে চলেছেন। বিনিতা বলেন, ‘‘হাইটেক পদ্ধতিতে চাষ করলে তা লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। তাই নিজেদের উদ্যোগে আমরা সেটাই করতে চাইছি।’’ ইতিমধ্যেই সেখানে মাছের চাষও শুরু করেছেন তাঁরা। সৈকত বলেন, ‘‘চাকরির চেয়ে নিজেরা কিছু করতে পারলে সেটাই দারুণ হবে। তা দেখে অনেকেই উৎসাহী হবেন। পঞ্জাবের মতো রাজ্য চাষ আবাদকে কেন্দ্র করেই বড় সাফল্যে পৌঁছেছে।’’

জলপাইগুড়ির বাসিন্দা স্মরজিৎ মণ্ডল শহরের একটি নার্সিংহোমের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বিধাননগরে তাঁর চা বাগান রয়েছে। দীপঙ্কর দত্ত বিমা সংস্থায় কর্মরত। তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েকজন বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন। তাঁরাও হাইটেক পদ্ধতিতে চাষ আবাদ করতে চান। স্মরজিৎবাবু বলেন, ‘‘জল্পেশ এলাকায় ১ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেছি।’’ ওম কুমার থাপা একটি স্বেচ্ছাসেবীসংস্থার কর্ণধার। সংস্থার সদস্যদের নিয়ে বিষয়টি আলোচনা করে তারাও ওই চাষে নামতে চাইছেন।

শিলিগুড়ি এবং নকশালবাড়ির কৃষি বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহকৃষি অধিকর্তা পাপিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সাহায্যে চাষ আবাদ পদ্ধতি বলেই একে হাইটেক হর্টিকালচার বলা হচ্ছে। জৈব পদ্ধতিতে উন্নত চাষ এবং বাজারের চাহিদার দিকে তাকিয়ে আবাদ করা যায় কী করে সেটাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাতে বিভিন্ন ফুল, সব্জি চাষ লাভজনক ব্যবসা হতে পারে।’’ বিশেষজ্ঞরা জানান, স্থানীয় বাজার ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফুল-ফল বিদেশের বাজারে রফতানির সুযোগ রয়েছে। উন্নত বীজ তৈরি, তা থেকে চারা, ফসল কাটা সমস্ত ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান তথা কোফামের দায়িত্বে থাকা রণধীর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর না করে গ্রিন হাউজ, পলিহাউজ করে চাষের উপযুক্ত ব্যবস্থা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে কী ভাবে করা যায় সেটাই হাইটেক হর্টিকালচার ব্যবস্থার মূল বিষয়। উৎপাদনের পরিমাণ এবং গুণগত মান বাড়িয়ে এই পদ্ধতিতে চাষের খরচ তুলনামূলক ভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব। স্ট্রবেরি , ক্যাপসিকাম, শশা, টম্যাটো, ব্রকোলির মতো বিভিন্ন ফল, সব্জি চাষ করা যেতে পারে।’’

চাষের পদ্ধতি এবং রোগ দমনের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে উৎসাহীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন উত্তরবঙ্গে উদ্যানপালন বিভাগের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সংগ্রাম শেখর মণ্ডল, ফাঁসিদেওয়া, খড়িবাড়ির দায়িত্বে থাকা সহকৃষি অধিকর্তা মেহফুজ আহমেদ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অতিথি শিক্ষক অসীম কুমার চক্রবর্তীরা। কোফাম সূত্রেই খবর, এই পদ্ধতিতে চাষের কাজে কৃষি মজুরের সংখ্যা কম প্রয়োজন হয়। সেচের ক্ষেত্রে জল অপচয় বন্ধ করা যায়, শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক সার ব্যাবহার না করে ফল, সব্জি চাষ করা হয়। ‘ইমিউনো ডায়গনেস্টিক’ পদ্ধতিতে ফসলে বিভিন্ন ভাইরাল রোগের সংক্রমণ দ্রুত প্রতিরোধ করা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE