Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

জওয়ান ও গ্রামবাসীদের দ্বন্দ্বে তুলকালাম মানিকচকে

এক বালিকার শ্লীনতাহানির অভিযোগে নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে রবিবার দুপুরে তুলকালাম বাধল মালদহের মানিকচকের জালালপুরে। আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে জওয়ানেরা গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪৮
Share: Save:

এক বালিকার শ্লীনতাহানির অভিযোগে নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে রবিবার দুপুরে তুলকালাম বাধল মালদহের মানিকচকের জালালপুরে। আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে জওয়ানেরা গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন। তবে কোনও গুলি তাঁরা ছোড়েননি বলে জানিয়েছে প্রশাসন। গ্রামবাসীরাও জওয়ানদের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জওয়ানদের জালালপুর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সামনের বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের জন্য ওই জওয়ানদের শনিবার রাতেই স্থানীয় একটি স্কুলে আনা হয়েছিল। এ দিন দুপুরে গ্রামের কয়েকটি বালক-বালিকা আম কুড়োতে গিয়েছিল। তখনই তাদের মধ্যে এক বালিকার শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ ওঠে এক জওয়ানের বিরুদ্ধে। পুলিশের মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই জওয়ানকে আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। ওই শিবিরে আইআরবি, সিআইএসএফ, রাজ্য সরকারের সশস্ত্র পুলিশ ও অন্য জেলার পুলিশ মিলিয়ে মোট ৭৪ জন ছিলেন।” ওই জওয়ানকে শনাক্ত করা না গেলেও তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে।

সত্যজিৎবাবু জানান, পুলিশকে বলা হয়েছে ওই বালিকা ও তার বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলে ওই জওয়ানকে শনাক্ত করতে। তিনি জানান, গ্রামবাসীদের দাবি মেনেই এই দিন ওই শিবিরের সব জওয়ানকেই পাশের অন্য একটি গ্রামের একটি স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি তাঁরাও শুনেছেন। এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলা প্রশাসন কমিশনের কাছে রিপোর্ট পাঠায়। কমিশন সেই রিপোর্টেরই অপেক্ষা করছে। মালদহের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, “জেলা পুলিশ সুপারের কাছে পুরো ঘটনার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্ট যত দ্রুত সম্ভব কমিশনের কাছে পাঠানো হচ্ছে।”

মানিকচকের যে স্কুলে জওয়ানদের শিবির ছিল, এ দিন দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল চার পাশে পড়ে আছে ইটের টুকরো। গ্রামে বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। পুলিশ ও স্থানীয় জানা গিয়েছে, বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ ওই বালিকার শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। ওই বালিকার মা জানান, তাঁর চার মেয়ের তিন জনেই এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ আম কুড়োতে গিয়েছিল। সঙ্গে ছিল আরও কয়েক জন। ওই জওয়ান তাঁর সেজো মেয়েকে নিয়ে ভুট্টা খেতের দিকে চলে যায়। অন্যদের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। বড় ও মেজো মেয়ে বাড়িতে ফিরে সব কথা বললে ওই বালিকার মা ভুট্টা খেতের দিকে ছুটে যান। তিনি বলেন, “আমাকে দেখেই ওই জওয়ান পালিয়ে যায়। দৌড়ে তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারিনি।” জানাজানি হতেই গ্রামের মানুষ রেগে ওই শিবিরের সামনে জড়ো হন। ইতিমধ্যে ওই বালিকার মা মানিকচক থানাতেও সব কথা জানিয়ে এসেছেন। পুলিশও তাই প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসে।

গ্রামবাসীদের কয়েক জন সে সময়ে ওই শিবিরের মধ্যে ঢুকে পড়েন। তাঁরা দাবি করতে থাকেন, অভিযুক্ত জওয়ানকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে। জওয়ানেরা তখন বন্দুক উঁচিয়ে গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন। এর পরেই গ্রামবাসীরাও জওয়ানদের ঢিল ছুড়তে শুরু করেন। হয় হাতাহাতি। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঘণ্টা দু’য়েক পরেই গ্রামবাসীরা ফের চড়াও হন ওই শিবিরে। গ্রামবাসীরা দাবি করেন, ওই শিবিরটিই তুলে দিতে হবে। জেলা প্রশাসনও দ্রুত সেই সিদ্ধান্তই নেন। সন্ধ্যার আগেই শিবির সরিয়ে নেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

manikchak evteasing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE