Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জঞ্জালে নাভিশ্বাস, নজর দিক পুরসভা

এই শহর এখন জঞ্জাল নগরী। ইংরেজবাজার পুরসভার ২৯টি ওয়ার্ডের মতো ২৩ নম্বর ওয়ার্ডেও একই ছবি। বিভিন্ন কাজে শহরে ঘোরাফেরা করার সময় শহরের জঞ্জালের ছবি দেখতে পাই।

রাস্তার ধারে এ ভাবেই পড়ে থাকে জঞ্জাল।—নিজস্ব চিত্র।

রাস্তার ধারে এ ভাবেই পড়ে থাকে জঞ্জাল।—নিজস্ব চিত্র।

মালদহ শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

এই শহর এখন জঞ্জাল নগরী। ইংরেজবাজার পুরসভার ২৯টি ওয়ার্ডের মতো ২৩ নম্বর ওয়ার্ডেও একই ছবি। বিভিন্ন কাজে শহরে ঘোরাফেরা করার সময় শহরের জঞ্জালের ছবি দেখতে পাই। যেহেতু আমি ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধু পাড়ার বাসিন্দা তাই এলাকাতে আবর্জনার মধ্যেই যেন বসবাস করতে হচ্ছে। নোংরা আবর্জনা ডিঙিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কারণ এলাকার রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে নোংরা আবর্জনা। বাড়ির পাশে দিনের পর দিন পড়ে থাকছে আবর্জনা। তবুও পুরসভার কোনও হুঁশ নেই। বছর দুয়েক আগে পুরসভার পক্ষ থেকে প্রতিটি বাড়িতে দু’টি করে বালতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই বালতি দু’টিতে দু’ধরনের ময়লা জমা করে রাখা থাকত। সকাল বেলা পুরসভার সাফাই কর্মীরা বাঁশি বাজিয়ে নোংরা আবর্জনা সংগ্রহ করত। এর ফলে রাস্তার উপরে ময়লা ফেলার প্রবণতা কমছিল সাধারণ মানুষের। তবে সমস্যা তৈরি হয় তার মাসখানেক পর থেকে। পুর কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে মানুষ ময়লা ফেলার বালতি ব্যবহার বন্ধ করে দিলেন। অনেকে অন্য ভাবে বালতি গুলি ব্যবহার করতে শুরু করলেন। পুরসভার উচিৎ ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে আবর্জনা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা।

আরও একটি বিশেষ কারণ হল দৈনিক সাফাই কর্মীদের বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও তাঁরা নিয়মিত আসতেন না। আর আসলেও কখন আসছেন তা মানুষ জানতে পারতেন না। রাস্তা থেকে আবর্জনা নিয়ে চলে যেতেন তাঁরা। এর ফলে বাড়িতে জমা করে রাখা আবর্জনা দু’ থেকে তিনদিন থাকার ফলে প্রচন্ড দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করত। মশা, মাছির মতো ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের উপ্রদব বেড়ে যাওয়ায় নানান সমস্যা তৈরি হয়। এরজন্য আমরা সকলেই ঘর পরিষ্কার রাখতে বাড়ির জঞ্জাল রাস্তার উপরে ফেলে দিতে শুরু করি। যত্রতত্র ময়লা ফেলা শুরু হয়। আবর্জনা ফেলা নিয়ে পড়শিদের সঙ্গে প্রায়ই বচসা হচ্ছে। নিকাশি নালার মুখ বন্ধ হয়ে সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এলাকায় অধিকাংশ স্থানেই ডাস্টবিনের ব্যবস্থা নেই। শহরে পুরসভা ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করতে না পারলেও প্রতিটি স্থানে অন্তত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করুক। আমার বাড়ির সামনেই অস্থায়ী ডাম্পিং গ্রাউন্ড হয়ে উঠেছে। আমি ২০১২ সাল থেকে পুর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে একাধিক বার অভিযোগ করেও কাজের কাজ কিছু হয় নি। সমস্যাটি শুধু আমার একার নয়, এলাকার বাসিন্দাদেরও। এখন গ্রাম বাংলাতে স্বচ্ছ মিশন প্রকল্প চালু করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। শহরে কি এই অভিযান হবে না?

শুভজিৎ ঘোষ, গবেষক। ২৩ নম্বর ওয়ার্ড, দেশবন্ধু পাড়া।

ডাম্পিং গ্রাউন্ড নেই কেন?

আজকাল ছোট শহরগুলিও ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করছে। তবে বিট্রিশ আমলে তৈরি হওয়া ইংরেজবাজার শহরে এখনও তৈরি হল না ডাম্পিং গ্রাউন্ড। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদেরকেই। শহরে জমে থাকা আবর্জনা নিয়ে সমস্ত ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। আমি যেহেতু ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশবাড়ির বাসিন্দা তাই এলাকার নোংরা আবর্জনা নিয়ে মানুষের কতটা ক্ষোভ রয়েছে তা জানতে পারি। তবে এটা মানতেই হবে, শহরে যে নোংরা আবর্জনা জমে রয়েছে তা আমাদেরই সৃষ্টি। আমরা বাড়ির ব্যবহৃত জঞ্জাল খেয়াল খুশি মতো যেখানে সেখানো ফেলে দিয়ে থাকি। যার ফলে রাস্তাঘাট আবর্জনায় ঢেকে যায়। তাই আমাদেরকে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে চলাফেরা করতে হয়।

শহর থেকে গ্রামগঞ্জ এখন অনেক বেশি পরিষ্কার। কারণ গ্রামের মানুষেরা বাড়ির পিছেন দিকে নোংরা আবর্জনা ফেলে রাখেন। অনেকে আবার জমিতে চাষের জন্য সার তৈরি করে থাকেন। শহরে জনসংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে ফাঁকা জায়গা বলে কিছু নেই। এমন অবস্থায় নোংরা ফেলা হবে কোথায়। গ্রামের মানুষেরা যদি নোংরা আবর্জনা থেকে সার তৈরি করতে পারে তাহলে শহরে সেই ব্যবস্থা কেন চালু হবে না। বছর পাঁচেক ধরে শুনছি পুরসভা ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করবে। জমি দেখার কাজ চলছে। জমি পাওয়া গেলেই সমস্যা মিটে যাবে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড হলে সেখানে জৈব্য সার তৈরি করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হতে দেখিনি।

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের উমেশচন্দ্র বাস্তুহারা স্কুলের সামনে পালা করে রাখা হয় নোংরা আবর্জনা। পাশে মেয়েদের হাই স্কুলও রয়েছে। দুর্গন্ধে ছেলে মেয়েরা নাকাল হয়। রাস্তায় কোথাও ভ্যাট থাকলেও তাতে নোংরা আবর্জনা উপচে পড়েছে। আর কোথাও আবার ভ্যাটের ব্যবস্থাই নেই। এমন চলতে থাকলে মানুষকে নোংরা আবর্জনার মধ্যেই বসবাস করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে পুরসভা কর্তৃপক্ষের ভাবা দরকার।

রবীন্দ্র নাথ পান্ডে, স্কুল শিক্ষক। ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, বাঁশবাড়ি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE