Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

তদন্তে গিয়ে মারধর করেছেন আইসি, ফুটেজ দেখিয়ে ক্ষোভ

একাধিক বিয়ে, বধূ নির্যাতন-সহ একাধিক মামলায় পলাতক অভিযুক্ত হোটেল মালিককে খুঁজতে গিয়ে তাঁর কর্মচারিদের মারধরের অভিযোগ উঠল আইসির বিরুদ্ধে। এমনকী তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে তাঁদের থানায় ডেকে এনে পুলিশ হয়রান করছে বলেও অভিযোগ। শনিবার শিলিগুড়িতে এক সাংবাদিক বৈঠক করে শিলিগুড়ি থানার আইসি বিকাশকান্তি দের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন স্টেশন ফিডার রোডের একটি লজ ও মদের দোকানের ওই কর্মীরা।

এই সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়েই আইসি মারধর করেছেন বলে দাবি করেন লজের কর্মীরা।

এই সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়েই আইসি মারধর করেছেন বলে দাবি করেন লজের কর্মীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৬
Share: Save:

একাধিক বিয়ে, বধূ নির্যাতন-সহ একাধিক মামলায় পলাতক অভিযুক্ত হোটেল মালিককে খুঁজতে গিয়ে তাঁর কর্মচারিদের মারধরের অভিযোগ উঠল আইসির বিরুদ্ধে। এমনকী তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে তাঁদের থানায় ডেকে এনে পুলিশ হয়রান করছে বলেও অভিযোগ।

শনিবার শিলিগুড়িতে এক সাংবাদিক বৈঠক করে শিলিগুড়ি থানার আইসি বিকাশকান্তি দের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন স্টেশন ফিডার রোডের একটি লজ ও মদের দোকানের ওই কর্মীরা। অভিযোগের স্বপক্ষে তাঁরা পুলিশি মারধরের সিসিটিভি ফুটেজও দেখান।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই লজের মালিক কৌশিক রায় ও তাঁর মা মায়া রায় গত ৩ ডিসেম্বর থেকে পলাতক। তাঁদের খঁুজতেই পুলিশ একাধিকবার ওই লজে যায়। এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় বার অভিযোগ উঠল আইসির বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে শিলিগুড়ির রামঘাট এলাকায় আইসির নেতৃত্বে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। উত্তেজিত জনতা আইসির গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তারপর ফের আইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন,“এমন হওয়ার কথা নয়। কী হয়েছে আমার কাছে লিখিতভাবে জানালে আমি তদন্ত করে দেখব।”

এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে লজের কর্মী দীপক রায়ের ভাই অজিত বলেন, “দাদাকে মারধর ও হুমকি দেওয়া হচ্ছিল ক্রমাগত। তারপর থেকে দাদাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেল তার কোনও খোঁজ পাচ্ছি না।” মদের দোকানের এক কর্মী প্রফুল্ল বলেন, “মালিকের সঙ্গে মালিকের স্ত্রীর কী ঝামেলা চলছে, তা আমরা জানি না। কিন্তু মালিককে খঁুজতে গিয়ে আমাদের মারধর কেন করা হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। অভিযোগ জানিয়ে শুক্রবার শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক, উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম আধিকারিকের কাছে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের চড়, লাথি মারা হয়েছে বলে ফুটেজ দেখিয়ে দাবি করলেও সে বিষয়ে কর্মীরা লিখিত অভিযোগ জানাননি।

শিলিগুড়ি থানার আইসি বিকাশকান্তি দে অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেছেন লজের কর্মী অলক রায়, প্রফুল্ল বর্মন, অজয় চক্রবর্তীদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, “এই কর্মীরা সমস্ত জানা সত্ত্বেও পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন না। ওই কর্মী প্রফুল্লকে মারার উদ্দেশ্য ছিল না। ক্রমাগত মিথ্যা বলায় সামান্য ধাক্কা মারা হয়েছে।”

বিকাশবাবুর দাবি, “ওই মহিলা থানায় এসে প্রায়ই বাচ্চা নিয়ে কান্নাকাটি করেন। তাঁকে ন্যায়বিচার দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্য পুলিশের নেই।” মূল অভিযুক্ত কৌশিকের সঙ্গে ওই কর্মীদের যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করে আইসি জানান, গত শুক্রবার কৌশিকের প্রথম স্ত্রী পুনম শর্মা দার্জিলিং আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে সেখানে তাঁর জামিন নামঞ্জুর হয়। তারপরেই মারার ঘটনাকে হাতিয়ার করে সাংবাদিক বৈঠক করিয়ে নিজের দিক থেকে অভিযোগের তির ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে অভিযুক্ত। আইসির দাবি, “গত ৭ ডিসেম্বর ঘটনাটি ঘটলেও ১৩ দিন পরে অভিযোগ করার পিছনে এ ছাড়া আর কোনও কারণ থাকতে পারে না।”

পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত লজ মালিক কৌশিকবাবুর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, চুরি, দ্বিতীয় বিবাহ, স্ত্রীকে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ দায়ের হয়েছে কৌশিকের মা মায়াদেবীর বিরুদ্ধেও। এমনকী দীপকের বিরুদ্ধেও শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ করেছেন পুনমদেবী। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩ ডিসেম্বর শিলিগুড়ি থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ না করে দ্বিতীয় বিবাহের অভিযোগ দায়ের করেন পুনম। অভিযোগে জানানো হয়, নেপালের বাসিন্দা এক মহিলাকে কৌশিকবাবু বছর তিনেক আগে বিয়ে করেন। তাঁদের ২ বছরের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। এতদিন আগে বিয়ে হলেও তিনি জানতে পারেন মাত্রই কয়েকদিন আগে। তারপরেই তিনি সম্পত্তির অংশ দাবি করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে অনীহা প্রকাশ করেন।

কিন্তু কৌশিকবাবু সম্পত্তির কোনও অংশ দিতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ। উল্টো মারধর-সহ খেতে না দেওয়া, মানসিক অত্যাচার করা হত। বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি বলে জানান পুনমদেবী নিজেই। তাঁকে সম্পত্তির অংশ ও বাচ্চার খোরপোশ বুঝিয়ে দিলে তিনি অভিযোগ উঠিয়ে নেবেন বলেও জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE