Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

দেবীর মূর্তি নিয়ে দেদার ফাটকাবাজি কোচবিহার জুড়েই

সরস্বতী প্রতিমা কেনা নিয়ে রীতিমতো ফাটকাবাজি চলল কোচবিহারে। শুক্রবার এমনই পরিস্থিতিতে চড়া দামে বাসিন্দাদের অনেকে প্রতিমা কিনতে বাধ্য হন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, অন্য বারের তুলনায় এ বার কোচবিহারের বাজারে সরস্বতী প্রতিমার জোগান কম ছিল। শুক্রবার ও শনিবার দু’দিন ধরে তিথি থাকায় অনেকে শুক্রবারও পুজোর জন্য প্রতিমা কিনতে যান। ফলে বাজারে প্রতিমার জোগান আরও কমে এবং ওই দিনই প্রতিমা কেনা নিয়ে ফাটকাবাজি শুরু হয়।

হাতেখড়ি। সরস্বতী পুজোর দিনে জলপাইগুড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

হাতেখড়ি। সরস্বতী পুজোর দিনে জলপাইগুড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার ও মালবাজার শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৪০
Share: Save:

সরস্বতী প্রতিমা কেনা নিয়ে রীতিমতো ফাটকাবাজি চলল কোচবিহারে। শুক্রবার এমনই পরিস্থিতিতে চড়া দামে বাসিন্দাদের অনেকে প্রতিমা কিনতে বাধ্য হন।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, অন্য বারের তুলনায় এ বার কোচবিহারের বাজারে সরস্বতী প্রতিমার জোগান কম ছিল। শুক্রবার ও শনিবার দু’দিন ধরে তিথি থাকায় অনেকে শুক্রবারও পুজোর জন্য প্রতিমা কিনতে যান। ফলে বাজারে প্রতিমার জোগান আরও কমে এবং ওই দিনই প্রতিমা কেনা নিয়ে ফাটকাবাজি শুরু হয়। একটি প্রতিমার জন্য একাধিক আগ্রহী ক্রেতা থাকায় বিক্রেতাদের একাংশও চড়া দাম দাবি করেন বলে অভিযোগ। প্রতিমা কিনতে আগ্রহীদের অনেকেও একে অন্যকে টেক্কা দিয়ে দরদাম শুরু করেন। পছন্দের প্রতিমা কেনা নিয়ে উত্তেজনায় বিক্ষিপ্ত কিছু বচসার ঘটনাও ঘটেছে।

কোচবিহারের বাসিন্দা আইনজীবী শিবেন রায় বলেন, “শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ ভবানীগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখি প্রতিমা সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। পালপাড়ার মৃৎশিল্পীদের কারখানায় মাঝারি মাপের প্রতিমাই সাতশো টাকা দাম চায়। সেটির জন্য একাধিক আগ্রহী ক্রেতার ভিড় দেখে চলে আসি। পরে নতুন বাজারে খোঁজ শুরু করে দেখি সেখানেও চড়া দাম। পছন্দসই প্রতিমাও নেই। বাধ্য হয়েই পরিচিত এক মৃৎশিল্পীর কারখানা থেকে ছোট্ট প্রতিমা চারশো টাকায় কিনতে হয়। গত বছরে ওই মাপের চেয়ে বড় প্রতিমা অর্ধেক দামে নিয়েছিলাম।” কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক রাজু রায় বলেন , “অনেক ক্রেতাই চড়া দামে প্রতিমা কিনতে বাধ্য হয়েছেন। চাহিদার তুলনায় জোগান বেশ কম থাকাতেই সমস্যা হয়েছে।”

মৃৎশিল্পী সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, ফি বছর কোচবিহার শহর এলাকায় গড়ে ৫ হাজার সরস্বতী প্রতিমা বিক্রি হয়। কিন্তু বাজারে অন্তত সাত হাজারের বেশি প্রতিমা থাকে। ফলে পুজোর আগের রাতে দাম পড়ে যায়। জলের দরে প্রতিমা বিক্রি করতে বাধ্য হন অনেকেই। তার পরেও বহু প্রতিমা থেকে যাওয়ায় শিল্পীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। কয়েক বছর ধরে ওই সমস্যা চলছিল। এ বারে ওই পরিস্থিতি এড়াতে মৃৎশিল্পীরা অনেকেই কিছুটা সতর্ক হয়ে উৎপাদন কমিয়ে দেন। প্রথম দিনের পুজো উদ্যোক্তারা প্রতিমা কিনতে তেমন সমস্যায় পড়েননি। শুক্রবার বিকেল থেকে বাজারে ভিড় বাড়তে থাকে। রাতের দিকে অনেকেই পছন্দের প্রতিমা নিয়ে বেশি দরদামের রাস্তায় হাঁটেননি। কোচবিহারের এক মৃৎশিল্পী সুজিত পাল বলেন, “আমাদের কারখানায় ফি বছর গড়ে চার শতাধিক প্রতিমা তৈরি করা হয়। ফি বছর অনেক প্রতিমা বিক্রি না হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছিল। তাই এ বারে মাত্র ২৫০টি সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করা হয়। সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। অনেকেই প্রতিমা দিতে পারিনি।” মৃৎশিল্পী পুলক পাল বলেন, “আমাদের কারখানাতেও এ বার তিরিশ শতাংশ কম প্রতিমা করা হয়। বৃহস্পতিবারের মধ্যে বেশির ভাগ বিক্রি হয়। বাকিটা শুক্রবার বিকেলের আগেই।”

সরস্বতী প্রতিমার এমন ভাল বাজার দাম মেলায় খুশি মৃৎশিল্পীরা। তাঁদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ভাল ব্যবসা হয়েছে। শেষের দিকে দামও মিলেছে ভাল। কোচবিহার মৃৎশিল্পী সমিতির সম্পাদক বাদল পাল বলেন, “মাটি, খড়-সহ প্রতিমা তৈরির অন্য উপকরণের দাম বেড়েছে। কারিগরদের মজুরিও বেড়েছে। তার প্রভাব প্রতিমার ওপর পড়তে বাধ্য। চাহিদা থাকায় শেষ দিকে ভাল ব্যবসা হয়েছে।”

অন্য দিকে, যামিনী রায়ের চিত্রকলার সঙ্গে এ বার নিসর্গের আলোকচিত্রের মেলবন্ধন। খড়ের চালার মণ্ডপের ভেতরে ঢুকলেই সীমার মাঝে অসীমের থিমে কারুকৃতি। রাতে বাহারি আলোর রোশনাই। সরস্বতী পুজোতে এমন ভাবেই সেজেছে মালবাজারের আদর্শ বিদ্যাভবন।

পুজো দেখতে এসে তাই অনেকেই থমকে দাঁড়াচ্ছেন এখানে। সময় নিয়ে যে ভাবে বড় ক্লাবগুলোর দুর্গাপুজোর মণ্ডপ দেখতে হয়, সে ভাবেই খুঁটিয়ে দেখতে হচ্ছে আদর্শ বিদ্যাভবনের সরস্বতী পুজোর মণ্ডপও। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে দশম-একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এগিয়েছিল স্কুল। পুজো কমিটির সম্পাদক, স্কুলের শিক্ষক পরাগ মিত্রের মস্তিস্কপ্রসূত এই থিমে যে চমক রয়েছে তা আগেই বুঝেছিলেন প্রধান শিক্ষক সুশান্ত দত্ত। সুশান্তবাবুর কথায়, ‘‘শিল্পভাবনাকে উসকে দিতেই সকলে মিলে এই উদ্যোগ।’’ পরাগ মিত্রের কথায়, ‘‘ ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগ না থাকলে এই মণ্ডপ তৈরি সম্ভব হত না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE