কোচবিহারে নিশিগঞ্জ সব্জি বাজারে বিক্রি নেই শসার।—নিজস্ব চিত্র।
দিনভর অপেক্ষার পরেও বিক্রি হয়নি একটি শসাও। বিকেল হতেই তাই হতাশায় বাজারে বস্তা ফেলে ঘরমুখো হলেন কৃষকরা। রাতভর সেই শসা পাহারা দেবেন সিভিক ভলান্টিয়ার্সরা। বুধবার ভোরের আলো ফুটলে ফের কোচবিহার নিশিগঞ্জ বাজারে যাবেন তাঁরা। খেতের ফসল বিক্রির আশায়। কৃষকদের অভিযোগ, গত সপ্তাহে এক টাকা কেজি দরে শসা বিক্রি করেছিলেন তাঁরা। মঙ্গলবার কেউ বিনে পয়সাতেও শসা নিতে চাননি। তাতে কৃষকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। কিন্তু, শসার কী হবে তা নিয়ে কৃষকদের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তাঁরা। কৃষকদের কয়েকজন জানান, হাজার হাজার টাকা খরচ করে শসা চাষ করার পরে দাম না পেলে সমস্যা হবেই। তাঁদের দাবি, বাজারে যাতায়াতের ভ্যান ভাড়া পর্যন্ত উঠছে না। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, একদিকে অতিফলন। অন্যদিকে বাইরের রাজ্যে চাহিদা কমে যাওয়ায় শসার দাম তলানিতে ঠেকেছে।
মাথাভাঙার মহকুমাশাসক অচিন্ত্য সিংহ বলেন, “কৃষকরা যাতে খেতের শসা বিক্রি করতে পারেন সে জন্য কৃষি বিপণন দফতরকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।” বিজেপির পক্ষ থেকে সরকারি উদ্যোগে শসা কেনার দাবি করা হয়েছে। দলের কোচবিহার জেলার সহ সভাপতি অনিল মালাকার বলেন, “ কয়েকদিন আগে সরকারের তরফ থেকে শসা কেনার ব্যাপারে কৃষকদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল। তার পরে আর কিছু হয়নি। এভাবে হাজার হাজার কৃষকের সর্বনাশ হবে তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই সরকারি উদ্যোগে শসা কেনা হোক।”
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, কোচবিহারে শসা চাষের এলাকা এবার অনেকটাই বেড়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল হাজার একরেরও কম জমিতে। এবার জেলায় এক হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে শসা চাষ করা হয়। শুধু কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকেই ৪০ হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে শসা চাষ হয়েছে। ৫০ হাজার কৃষক ওই চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এতদিন ধরে শসা চাষ করে লাভের মুখ দেখছিলেন চাষিরা। তাঁরাই জানিয়েছেন, গত বছর শুরুর দিকে ৩০ টাকা কেজি দরে শসা বিক্রি করেছেন তাঁরা। শেষ সময়ে দাম নেমেছিল ৪ টাকা কেজিতে। এবারে শুরুতেই শসার দাম ছিল কেজি প্রতি ১২ টাকা। এক মাসের মধ্যেই তা এক টাকায় নেমেছে। এদিন নিশিগঞ্জে শসা নিয়ে গিয়েছিলেন কালপানির কৃষক আমিনুর ইসলাম। তিনি জানান, ২০০ টাকা দিয়ে ভাড়া দিয়ে একটি গাড়ি করে পাঁচ কুইন্টাল শসা তিনি বাজারে নিয়ে যান। তিনি বলেন, “একটি শসাও বিক্রি করতে পারিনি। পকেট থেকে গাড়ি ভাড়া গিয়েছে। প্রচুর শসা বাড়িতেও আছে। বিক্রি না হলে সংসার চালাব কি করে?”
মোয়ামারির কৃষক বাপি মিয়াঁ জানান, এক বিঘা জমিতে শসা চাষ করতে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। ভাল ফলন হলে বিঘাতে ৩০ কুইন্টালের উপরে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “আমি দেড় বিঘা জমিতে শসা চাষ করি। গত বছর ভাল আয় হয়েছে। এবারে প্রচুর শসা বাড়িতে রয়ে গিয়েছে। দাম পাওয়া যাচ্ছে না।” কৃষকদের অনেকের অভিযোগ, পাইকাররা শসা না কিনে দাম কমানোর চেষ্টা করছেন।
যদিও পাইকারদের অনেকেই জানিয়েছেন, শসার ব্যবসায় নেমে তাঁরাও এবারে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। মধুপুরের বাসিন্দা পাইকারি ব্যবসায়ী বাবলু সাহা দাবি করেন, এখানকার শসার বেশির ভাগটা রপ্তানি করা হয় দিল্লিতে। এবারে সেখানে চাহিদা নেই। তিনি বলেন, “১ টাকা দরে শসা কিনে পাঁচ টাকা দরে বিক্রি করছি। দিল্লিতে শসা পাঠাতে অনেক সময় আমাদের ৬ টাকাও খরচ পড়ে যাচ্ছে। তাই লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। এবারে শসার উৎপাদন বেশি হওয়াতেই এমনটা হয়েছে। গতবার যে পরিমাণ শসা প্রতিদিন বাজারে উঠত এবার তার দ্বিগুণ উঠছে।” শসা বা যে কোনও ধরণের সব্জি, ফল সংরক্ষণের জন্য কোচবিহারে কোনও হিমঘর এখনও তৈরি হয়নি। সিতাইয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উদ্যোগে একটি বহুমুখী হিমঘরের কাজ শুরু হয়েও আটকে রয়েছে। উদ্যানপালন দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক খুরশিদ আলম বলেন, “সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে ভাল হতো। বাইরের রাজ্যে এবার শসার চাহিদা তুলনায় কম। সে জন্য দাম কমেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy