Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য রুখতে কোচবিহারে পোস্টার দিল পুলিশ

দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য রুখতে নানা এলাকায় পোস্টার সেঁটে বাসিন্দাদের সতর্ক করছে কোচবিহার জেলা পুলিশ। কোচবিহার শহরের একাধিক ব্যাঙ্ক, এটিএম কাউন্টার ও জনবহুল এলাকায় পুলিশের তরফে ওই পোস্টার দেওয়া হয়েছে। পুজোর মুখে শহরে ছিনতাই, কেপমারি চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠার জেরে উদ্বিগ্ন পুলিশ কর্তারা তাই বাসিন্দাদের সচেতন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। পোস্টারে পুলিশের মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের মোবাইল নম্বরও রয়েছে পোস্টারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

পুলিশের মোবাইল নম্বরও রয়েছে পোস্টারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

অরিন্দম সাহা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২৪
Share: Save:

দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য রুখতে নানা এলাকায় পোস্টার সেঁটে বাসিন্দাদের সতর্ক করছে কোচবিহার জেলা পুলিশ। কোচবিহার শহরের একাধিক ব্যাঙ্ক, এটিএম কাউন্টার ও জনবহুল এলাকায় পুলিশের তরফে ওই পোস্টার দেওয়া হয়েছে। পুজোর মুখে শহরে ছিনতাই, কেপমারি চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠার জেরে উদ্বিগ্ন পুলিশ কর্তারা তাই বাসিন্দাদের সচেতন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। পোস্টারে পুলিশের মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, পুজোর মুখে গত একমাসে কোচবিহারে অন্তত পাঁচটি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাই, কেপমারির একাধিক অভিযোগও পুলিশের কাছে জমা পড়েছে। ৮ অগস্ট খাগড়াবাড়ি তেতুলতলার আত্মীয়ের বাড়ি ফেরার সময় খাগরবাড়ির এক মহিলার গলার হার ছিনিয়ে নিয়ে পালায় দুই মোটরবাইক আরোহী দুষ্কৃতী। পর দিন ৯ অগস্ট দু’টি অপরাধের ঘটনা ঘটে। ওই দিন চকচকার এক শিল্পদ্যোগী অঞ্জয় জৈন সাগর দিঘিরপাড়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ৪ লক্ষ টাকা তুলে মোটরবাইকের ডিকিতে রাখেন। মোটরবাইক স্টার্ট দেওয়ার মুহূর্তে এক যুবক ডিকি ভেঙে ৪ লক্ষ টাকা রাখা ব্যাগটি নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা।

ওই ঘটনার আধ ঘন্টার মধ্যে দুপুরবেলা রূপনারায়ণ রোডে ওই দিন বিবেকানন্দ স্ট্রিটের এক বাসিন্দার ব্যাগ ছিনতাই হয় বলে অভিযোগ। ৩০ অগস্ট শহরের রাজমাতা দিঘি সংলগ্ন এলাকায় পুন্ডিবাড়ির সার ব্যবসায়ী রবিরঞ্জন ভাদুড়ির গাড়ির কাঁচ ভেঙে ৮০ হাজার টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। ৫ সেপ্টেম্বর কোচবিহারের চাকির মোড়ে দিনহাটার বাসিন্দা সুমিত্রা বর্মনেরও ১ লক্ষ টাকা ছিনতাই হয় বলে অভিযোগ। পর পর ওই ঘটনার জেরেই বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়াতে পোস্টার সাঁটার পরিকল্পনা হয়।

জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, হাতের কাছে মোবাইল নম্বর থাকলে যে কেউ সহজেই সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে তথ্য জানাতে পারবেন। সে জন্য একাধিক নম্বর ওই পোস্টারে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া অনেক সময় ল্যান্ডফোনে লাইন পাওয়া যায় না। যদিও প্রাক্তন এক পুলিশ কর্তা ওই যুক্তি মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “দিনেদুপুরে খাস জেলা শহরে কেন এত উদ্বেগ নিয়ে চলাফেরা করতে হবে মানুষকে? পুলিশের মোবাইল ভ্যান টহল দেবে না কেন? ব্যাঙ্কের সামনে পুলিশের বাড়তি সতর্কতা কেন থাকবে না? মানুষই যদি নিজেদের নিরাপত্তা নেবে, তা হলে পুলিশ কি করবে?

এই প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দাদের একাংশও। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিটি জেলার ক্ষেত্রে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্যের গতিবিধি নজরে রাখা-সহ বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করতে পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ রয়েছে। অপরাধ জগতের খবর রাখার জন্য ‘সোর্স মানি’ও পুলিশের জন্য বরাদ্দ হয়। প্রশ্ন উঠেছে, এ সব থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কী করছে? পুলিশের কি আর কোনও সোর্স নেই? নাকি ‘সোর্স মানি’ অন্য খাতে খরচ হচ্ছে? ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “পুলিশকে শাসক দলের দলদাসে পরিণত করা হয়েছে। তাই ওই দলের নেতাদের খুশি করতে গিয়ে পুলিশ নিজেদের মূল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতেই ভুলে গিয়েছে। সন্দেহভাজন কাউকে ধরার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি না নিয়ে তাই জনগণের কাঁধে বন্দুক রেখে খেলতে চাইছে পুলিশ।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “পুজোর মুখে শহরবাসীর আতঙ্ক বেড়েছে পুলিশের ব্যর্থতায়। মানুষই যদি সব জানাবেন তা হলে সোর্স মানির নামে টাকা খরচের কী যৌক্তিকতা?”

এ বিষয়ে কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, “বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়াতে আপাতত কোচবিহার শহর ও সংলগ্ন কিছু এলাকায় পোস্টার দেওয়া হয়েছে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত দু’জন ধরা পড়েছে।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদবের মোবাইল ফোন বেজে গিয়েছে। ল্যান্ড লাইনেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

বিরোধী ও বাসিন্দাদের একাংশ পুলিশের এই উদ্যোগের সমালোচনা করলেও, শাসক দল তৃণমূল কিন্তু এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, মানুষকে নিয়ে কাজ করতে চাইছে পুলিশ। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “পুলিশ নিজেদের কাজে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিলে ক্ষতি কী? বাম আমলে পুলিশকে দলদাসে পরিণত করার অভিজ্ঞতা থেকে উদয়নবাবুরা মনগড়া অভিযোগ করছেন।” কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি রাজু রায় বলেন, “পুলিশের ওই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে বাসিন্দারা ফোনে কোনও তথ্য জানালে তা গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার।”

অপরাধনামা

• ৮ অগস্ট, খাগড়াবাড়িতে মহিলার হার ছিনতাই

• ৯ অগস্ট, চকচকায় মোটরবাইক থেকে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই

• ওই দিনই রূপনারায়ণ রোডে এক পথচারীর টাকা ছিনতাই

• ৩০ অগস্ট, রাজমাতায় গাড়ির কাচ ভেঙে টাকার ব্যাগ ছিনতাই!

• ৫ সেপ্টেম্বর, চাকির মোড়ে এক মহিলার কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE