আলিপুরদুয়ারে বন্ধ স্কুলের গেট।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে সরব গোটা উত্তরবঙ্গ। মিছিল-সভা-বিক্ষোভ চলছে জেলায় জেলায়। ঘটনার প্রতিবাদে ডাকা বৃহস্পতিবারের ছাত্র ধমর্ঘটেও ভাল সাড়া মিলেছে বলে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির তরফে দাবি করা হয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন স্কুল কলেজের সামনে ধর্মঘট সমর্থনকারীদের দেখা গিয়েছে। শহর এলাকায় অনেক স্কুলেই পড়ুয়ারা না আসায় এ দিন ক্লাস হয়নি। কোথাও আবার বিক্ষোভ অবস্থানের জেরে ঢুকতে পারেননি শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। বেশ কিছু স্কুলে ইউনিট পরীক্ষা বাতিল করে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। কোথাও আবার স্কুল কলেজে স্বাভাবিক পঠনপাঠন হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও এদিন ছাত্র ধর্মঘটের আংশিক প্রভাব পড়ে। বেশ কিছু ক্লাস হয়নি বলে জানা গেছে। ছাত্র পরিষদের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তরফেও এ দিনের ছাত্র ধর্মঘটকে সমর্থন জানানো হয়। তবে যে সমস্ত স্কুল কলেজে পরীক্ষা বা রেজিস্ট্রেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল সেখানে ছাড় দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
এ দিন সকাল থেকে বালুরঘাট কলেজের সামনে পিকেটিং শুরু করে ডিএসও-র সমর্থকরা। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের নেতারা এদিন ছাত্রদের জোর করে কলেজের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। যদিও তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের দাবি, পড়ুয়ারা স্বতস্ফুর্ত ভাবে কলেজে ঢুকেছে।
ইসলামপুরের স্কুল এবং কলেজগুলিতে স্বাভাবিক পঠনপাঠন হলেও ছাত্র ধর্মঘটে আংশিক সাড়া মিলেছে কোচবিহারে। শহর ও লাগোয়া এলাকার বেশ কিছু স্কুলে পিকেটিং থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকেই ফিরে যায়। কোচবিহারের সুনীতি অ্যাকাডেমি, সদর গভর্মেন্ট হাইস্কুলের মত একাধিক স্কুলে পঠনপাঠন ব্যহত হয়েছে। তবে জেলার অন্য মহকুমা সদর ও গ্রামাঞ্চলে ধর্মঘটের তেমন প্রভাব পড়েনি। পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়েও স্বাভাবিক পঠনপাঠন হয়েছে বলে টিএমসিপির জেলা কার্যকরী সভাপতি অরিন্দম দে দাবি করেছেন। তবে এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি গোস্বামীর দাবি, “ধমর্ঘটে জেলা জুড়ে স্বতস্ফূর্ত সাড়া মিলেছে।”
জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন কলেজেও পিকেটিং করে ডিএসও-সহ বামপন্থী সংগঠনের সদস্যরা। এসএফআই-এর পক্ষ থেকে পথ সভা করা হয়। শহরের বেশির ভাগ স্কুলে এ দিন পঠনপাঠন হয়নি। ময়নাগুড়ি ও ধুপগুড়ি ব্লকের কিছু স্কুলে ক্লাস হলেও, পড়ুয়াদের সংখ্যা কম ছিল। ধূপগুড়ি কলেজেও পড়ুয়াদের সংখ্যা বেশ কম ছিল। একই চিত্র আলিপুরদুয়ারেও। ধর্মঘটের জেরে আলিপুরদুয়ারের স্কুলগুলি বন্ধ থাকলেও, কলেজে স্বাভাবিক পড়াশোনা হয়েছে। আলিপুরদুয়ার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অমিতাভ রায় বলেন, “কলেজে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে।” এ দিন আলিপুরদুয়ার ম্যাকউইলিয়াম স্কুলেও পড়ুয়াদের সংখ্যা অনেক কম ছিল। আলিপুরদুয়ার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তনু দত্তও জানিয়েছেন, অধিকাংশ পড়ুয়াই এ দিন স্কুলে আসেনি।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ ও ইটাহারের বেশিরভাগ হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুলে বৃহস্পতিবার ক্লাস হয়নি। ছাত্র ধর্মঘটের জেরে শহরের কয়েকটি হাইস্কুলে ইউনিট টেস্ট বাতিল করা হয়। রায়গঞ্জ গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মধুছন্দা দাস বলেন, “পড়ুয়ারা না আসায় নবম ও দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট এবং দ্বাদশ শ্রেণির প্রিটেস্ট পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়।” ক্লাস হয়নি করোনেশন হাইস্কুলেও। তবে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ছিল। খোলা ছিল সুরেন্দ্রনাথ কলেজও। শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটার তরফে শিলিগুড়ির বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এদিন প্রতিবাদ জানানো হয়। কালো ব্যাজ পড়েন সদস্যরা। বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি এবং নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির তরফে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার প্রতিবাদ করে পথে নামেন শিক্ষকেরা। সন্ধ্যায় বাম শিক্ষক সংগঠন ও ছাত্রদের তরফে বালুরঘাট শহরে মিছিল করে প্রতিবাদ করা হয়। থানার সামনে পথসভা করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy