বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে ছিটমহলে নিজস্ব ‘সুরক্ষা বাহিনী’ গড়ছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে আভ্যন্তরীণ সুরক্ষা সমন্বয় কমিটি।
আজ, সোমবার প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে কোচবিহার জেলা লাগোয়া বাকালির ছড়া ছিটমহলে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই কমিটি কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি।
কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত ভূখণ্ড ঘেরা ৫১টি ও বাংলাদেশ ভূখন্ড ঘেরা ১১১টি ছিটমহলে ওই দিন থেকেই একযোগে কমিটির সদস্য-সদস্যাদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। টানা এক বছর ধরে সপ্তাহে দু’দিন করে প্রশিক্ষণ চলবে।
প্রতিটি ছিটমহল এলাকা থেকে ১৮ জন যুবক, ৬ জন তরুণী মিলিয়ে মোট ২৪ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। যাদের বয়স ১৮-২৫ বছরের মধ্যে। প্রতি এলাকায় ৫ জন করে প্রশিক্ষক থাকছেন। তাঁরা কমিটির সদস্যদের লাঠিখেলা, ক্যারাটে, মার্শাল আর্ট, কুস্তি, অগ্নিনির্বাপণ, বন্যার্তদের উদ্ধারের মত দুর্যোগ মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেবেন।
ভারত-বাংলাদেশ সমন্বয় কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “ছিটমহলগুলিতে আইনের শাসন বলে কিছু নেই। কোনও দেশের পুলিশ-প্রশাসন সেখানে ঢুকতে পারে না। সেই সুযোগে দুষ্কৃতীরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অনেক সময় ছিটমহল এলাকায় ঘাঁটি করছে। এছাড়াও বহিরাগত দুষ্কৃতীরা নানা কারণে বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালায়।”
তাই আত্মরক্ষার প্রয়োজন, দুর্যোগের মত বিপদে বাসিন্দাদের স্বনির্ভর করতেই ওই সুরক্ষা কমিটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এতে গোলমাল এড়ানোও সহজ হবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এরই পাশাপাশি প্রজাতন্ত্র দিবস থেকেই ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য আরও একাধিক প্রকল্পের সূচনা হবে।
ওই তালিকায় পোয়াতেরকুঠি ছিটমহলে আবাসিক তথ্যকেন্দ্র ভবনের শিলান্যাস ছাড়াও প্লাস্টিকমুক্ত ছিটমহল, বয়স্ক শিক্ষা অভিযান, হস্তশিল্প ও সংস্কৃতি শিবির রয়েছে।
সমন্বয় কমিটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, দুই দেশের ভিতরে থাকা মোট ১৬২টি ছিটমহলের জনসংখ্যা ৫১ হাজারের বেশি। আইনের শাসন না থাকায় সেখানকার বাসিন্দাদের রীতিমতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে। মাদক পাচারকারী চক্র থেকে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে।
অভিযোগ, বহিরাগত দুষ্কৃতীদের হামলায় গত কয়েক বছরের মধ্যে মশালডাঙা, গারাতির মত একাধিক ছিটমহলে শতাধিক বাড়ি পুড়েছে। মাস আগেই ডিসেম্বরে করলা ছিটমহলে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে গোলমালে কয়েকজন জখম হন। আগের বছর পোয়াতেরকুঠিতে বিয়ের সালিশিকে কেন্দ্র করে গোলমালের জেরে একটি পরিবারের উপর হামলার ঘটনা হয়। বহিরাগত দুষ্কৃতীরা মাঝেমধ্যে এলাকার মহিলাদের সঙ্গেও অশোভন আচরণ করছেন। চলতি মাসেই মশালডাঙা ছিটমহলে আগুনে পুড়ে যায় এক জনের বাড়ি। প্রশিক্ষণ না থাকায় বাসিন্দারা বাড়িটি রক্ষা করতে পারেননি। ফি বছর বন্যার সময়ও সরকারিভাবে উদ্ধারকারীদের পাশে পান না তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy