Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
উঠেছে শ্লীলতাহানির নালিশও

নার্স প্রহৃত, উত্তাল মেডিক্যাল কলেজ

কর্তব্যরত এক নার্সকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অভিযোগের তির হাসপাতালেরই এক ইন্টার্ন চিকিৎসক বিবেক জায়সবালের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর।

সুপারকে ঘিরে বিক্ষোভ মেডিক্যাল কলেজের নার্স ও অন্য কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।

সুপারকে ঘিরে বিক্ষোভ মেডিক্যাল কলেজের নার্স ও অন্য কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৪০
Share: Save:

কর্তব্যরত এক নার্সকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অভিযোগের তির হাসপাতালেরই এক ইন্টার্ন চিকিৎসক বিবেক জায়সবালের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর।

ঘটনার প্রতিবাদে ওই ইন্টার্নের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সুপার নির্মল বেরাকে ঘেরাও করে রাখেন হাসপাতালের নার্স সহ সমস্ত কর্মচারীদের প্রতিনিধিরা। তাতে তৃণমূল সমর্থিত কর্মচারী সমিতির সঙ্গে একযোগে ঘেরাও আন্দোলনে সামিল হন সিপিএম সমর্থিত কো-অর্ডিনেশন কমিটির প্রতিনিধিরাও। শেষ পর্যন্ত কমিটি গড়ে ওই ইন্টার্নের বিরুদ্ধে তদন্তের আশ্বাস দেওয়ার পরে ঘেরাও উঠিয়ে নেওয়া হয়। ওই নার্স বুকে ব্যথা হচ্ছে বলে ঘটনার পর থেকেই মহিলা ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ভর্তি হন। তবে তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানান সুপার।

মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, এ দিন সকাল দশটার কিছু পরে প্রসূতি বিভাগের অফিসে ছিলেন ইন্টার্ন বিবেকবাবু এবং আরও তিন জন স্টাফ নার্স। ট্রে-তে তুলো ও ব্যান্ডেজের কাপড় গুছিয়ে রাখার মতো বিষয় নিয়ে গোলমাল বাঁধে। তা থেকেই ব্যপারটি গায়ে হাত পর্যন্ত গড়ায় বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগকারী ওই নার্স জানিয়েছেন, তাঁর হাত মুচড়ে দেন বিবেকবাবু, বুকে অস্ত্রোপচারের ট্রে দিয়ে ধাক্কা দেওয়া হয়। এমনকী দুর্ব্যবহারও করেন বলে অভিযোগ তাঁর।

কিছু ক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় মাটিগাড়া থানায় বিবেকবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। তারপরে বিবেকবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিকে হাসপাতালের সুপারকে ঘিরে চার ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলে।

এই ঘটনায় ওই নার্সের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই নার্স ও হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের নার্স ইনচার্জ জয়িতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জয়িতাদেবী বলেন, ‘‘মারধর করা হয়েছে, সেই সঙ্গে শ্লীলতাহানিও করা হয়েছে।’’ প্রহত নার্স বলেন, ‘‘কী ঘটনা ঘটেছে তা আমরা পুলিশকে বলেছি। এ বার কী কী ধারা দেওয়া হবে, তা পুলিশ ঠিক করুক।’’ শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় শ্লীলতাহানির ধারাও দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, ‘‘কোনও হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয়। সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’’

সুপার অবশ্য বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে জানান। তিনি জানান, ঘটনার তদন্তের জন্য তাঁরা যে চার সদস্যের কমিটি তৈরি করেছেন তাতে রয়েছেন স্ত্রীরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, নার্সিং সুপার, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান ও একজন ডিন। মঙ্গলবারের মধ্যে এই কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই বিবেকবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সুপার বলেন, ‘‘আমাদের ওই ইন্টার্ন জানিয়েছেন, উনি এমন কোনও কাজ করেননি। তবে তদন্ত হলেই সমস্ত প্রকাশ হবে।’’

জয়িতাদেবীর কথায়, ওই ইন্টার্ন মাঝে মধ্যেই দুর্ব্যবহার করেন। এ দিনও বিবেকবাবু কিছু দূরে তাকে রাখা তুলো ও ব্যান্ডেজ এনে দেওয়ার কথা বলেন, যা তাঁদের করার কথা নয়। তিনি বলেন, ‘‘ইন্টার্নদের জন্য ওই সমস্ত এনে দেওয়া আমাদের কাজ নয়, এটা বলাতেই উনি বাজে কথা বলেন। প্রতিবাদ করলে উনি একটি অস্ত্রোপচারের তোলার যন্ত্র টেবিলে আছড়ে ফেলেন। সেটি ভেঙে যায়, এরপরে ওই নার্সের হাত মুচড়ে দেন। ট্রে দিয়ে বুকে আঘাত করেন। আমরা ওই ইন্টার্নের শাস্তি চাই।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘ইন্টার্নদের অনেকেই ইদানীং নার্সদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ও গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর আগে অভিযোগ করিনি। এ বার তদন্ত কমিটির সামনে সমস্ত জানাব।’’

শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত রাজ্য সরকারি কমর্চারী সমিতির কর্মচারী সমিতির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ইউনিটের সম্পাদক প্রশান্ত সরকার।

তাঁর দাবি, ‘‘এমন ঘটনা অভিপ্রেত নয়। নার্সরা সকলেই মহিলা। ফলে তাঁদের সুরক্ষা দিতে হবে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে। তদন্তে কী প্রকাশিত হয় তা দেখা যাক। সুরাহা না হলে প্রয়োজনে আন্দোলনে নামতে হবে।’’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কো-অর্ডিনেশন কমিটির জেলা যুগ্ম সম্পাদক উৎপল সরকারও। তাঁর দাবি, ‘‘আমরাও চাই অভিযুক্ত ইন্টার্নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। না হলে ফের এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE