Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পারিবারিক বিবাদে বোমা-গুলি চাঁচলে

পাঁচ বছরের শিশুপুত্রকে নিতে শ্বশুরবাড়িতে হাজির হয়েছিলেন বাবা। কিন্তু দাদু-দিদিমার কাছে মানুষ হওয়ায় বাবার সঙ্গে যেতে চায়নি শিশুটি। তা নিয়ে শুরু হয়ে যায় বিবাদও। তার জেরে গুলিবিদ্ধ হলেন শিশুটির দাদু।

গুলিবিদ্ধ শেখ হেফাজত আলি।—নিজস্ব চিত্র।

গুলিবিদ্ধ শেখ হেফাজত আলি।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০২:০২
Share: Save:

পাঁচ বছরের শিশুপুত্রকে নিতে শ্বশুরবাড়িতে হাজির হয়েছিলেন বাবা। কিন্তু দাদু-দিদিমার কাছে মানুষ হওয়ায় বাবার সঙ্গে যেতে চায়নি শিশুটি। তা নিয়ে শুরু হয়ে যায় বিবাদও। তার জেরে গুলিবিদ্ধ হলেন শিশুটির দাদু। দাদুকে গুলি করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে শিশুটির কাকা এবং তাঁর দুই সঙ্গীর বিরুদ্ধে। মালদহের রতুয়া থানার কাহালা হরগোবিন্দপুরে শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে।

গুলি করার আগে বাড়ি লক্ষ করে কয়েকটি বোমাও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তিকে প্রথমে রতুয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁকে সেখান থেকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর ডান পেটে গুলি লেগেছে। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তাহের আলি পালিয়ে গেলেও তার দুই সঙ্গীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দাদা মঙ্গলুকে মারধরের বদলা নিতে তাহের দুই সঙ্গীকে নিয়ে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে সন্দেহ পুলিশের। চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পারিবারিক বিবাদের জেরে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত পালিয়ে গেলেও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।’’

সামান্য বিবাদেই বারবার মালদহে বন্দুক ব্যবহার হচ্ছে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, এক বন্দুক বা গুলি কোথা থেকে আসছে? রানাবাবু বলেন, ‘‘বোমা-বন্দুকের কারবারিদের ধরার জন্য আমরা তল্লাশি করছি।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁচল মহকুমার পাশেই বিহার ও ঝাড়খণ্ড। সেখান থেকে সড়ক পথে রোজ প্রচুর গাড়ি ও মানুষ যাতায়াত করে। সে ভাবেই অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে এই মহকুমায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির নাম শেখ হেফাজত আলি। পেশায় ক্ষুদ্র চাষি ওই ব্যক্তি ছয় বছর আগে গ্রামেরই যুবক শেখ মঙ্গলুর সঙ্গে মেয়ে সিতারার বিয়ে দেন। তাদের পাঁচ ও আড়াই বছরের দুই ছেলে রয়েছে। কিন্তু বড় ছেলে শেখ লিটন জন্মের পর থেকেই দাদুর বাড়িতে থেকেই বড় হয়েছে।

সপ্তাহ দু’য়েক আগে শেখ মঙ্গলু ছেলেকে নিজের কাছে রাখবেন বলে শ্বশুরবাড়িতে তাকে নিতে যান। কিন্তু ছেলে বাবার সঙ্গে যেতে না চাওয়ায় জোরাজুরি শুরু করেন বাবা মঙ্গলু। তা নিয়ে শ্যালক এক্রামুল শেখের সঙ্গে বচসা বাধে তাঁর। বচসার সময় দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি বেধে যায়। শ্যালককে মারধর করার পর তার হাতেও বেধড়ক মার খেয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয় মঙ্গলুকে। ওই রাতেই মঙ্গলুর বাবা, ভাই সহ পরিবারের লোকজন হেফাজতের বাড়িতে চড়াও পরিবারের লোকেদের বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। প্রতিবেশীরা চলে আসায় তখনকার মতো তারা পালিয়ে গেলেও দুদিন বাদে মঙ্গলুর ভাই তাহের আলি রাস্তায় একা পেয়ে শেখ মানেউল নামে এক যুবককে মারধর সহ অপহরণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। মানেউল হেফাজত শেখের ভাইপো।

ওই ঘটনার পর শনিবার রাতে বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন শেখ হেফাজত। রাতে বাড়ির বাইরে বোমাবাজির শব্দ শুনে বারান্দায় বেরিয়ে আসেন তিনি। তারপরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। প্রতিবেশী তথা কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান কংগ্রেসের মহম্মদ বদরুজ্জোহা তাঁকে উদ্ধার করে রতুয়া হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এদিন অভিযোগ পেয়ে পুলিশ হানা দিলেও তাহের আলির হদিশ পায়নি। তবে তাঁর দুই সঙ্গী ওয়াশের শেখ ও রাবু শেখকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ওয়াশের লাগোয়া কালুটোলা ও রাবু হরগোবিন্দপুরের বাসিন্দা।

এদিন মঙ্গলু শেখ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘বিবাদ থাকলেও ভাই এ কাজ করেছে বলে আমার মনে হয় না।’’

তবে শেখ হেফাজত আলির দাদা তহিদ আলি বলেন, ‘‘লিটন বাবার সঙ্গে যেতে চায়নি। ভাইপো এক্রামুল বলেছিল যে ওকে বুঝিয়ে পরে দিয়ে আসবে। কিন্তু ওই ঘটনার জেরে যে ভাইকে গুলি করে খুনের চেষ্টা করবে ভাবতেই পারছি না। ভাইকে লক্ষ করে ছোড়া প্রথম গুলিটি লক্ষভ্রষ্ট হওয়ার পর ফের দ্বিতীয়বার গুলি করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE