Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ফলাফল যেন মেসির গোল, উচ্ছ্বাস সঞ্জয়ের

ফুটবলে তাঁর দারুণ উৎসাহ। পড়াশোনার চাপ একটু কম আছে মনে হলেই বন্ধুদের ডেকে ফুটবল খেলায় মেতে ওঠেন। প্রিয় দল আর্জেন্টিনা। প্রিয় ফুটবলার অবশ্যই মেসি। টিভির পর্দায় মেসির গোল দেখলে উদ্বেল হয়ে ওঠে ছিপছিপে শরীরের এই তরুণ। আজ, সকালেও টিভির পর্দায় চোখ রেখে বসে ছিলেন।

বাবা-মায়ের সঙ্গে সঞ্জয়। শিলিগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

বাবা-মায়ের সঙ্গে সঞ্জয়। শিলিগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০৩:১৩
Share: Save:

ফুটবলে তাঁর দারুণ উৎসাহ। পড়াশোনার চাপ একটু কম আছে মনে হলেই বন্ধুদের ডেকে ফুটবল খেলায় মেতে ওঠেন। প্রিয় দল আর্জেন্টিনা। প্রিয় ফুটবলার অবশ্যই মেসি। টিভির পর্দায় মেসির গোল দেখলে উদ্বেল হয়ে ওঠে ছিপছিপে শরীরের এই তরুণ। আজ, সকালেও টিভির পর্দায় চোখ রেখে বসে ছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে তখন এ বছরের কৃতীদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছিল। নিজের নাম শুনে প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি। পাশে বসে বাবা জয়শঙ্কর সাহা, মা মঞ্জুশ্রীদেবী, এবং দিদি সবাই তখন শুনে ফেলেছেন শিলিগুড়ির সঞ্জয় কৃষ্ণ সাহা উচ্চ মাধ্যমিকে যুগ্মভাবে ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে।

কী মনে হচ্ছিল?

‘মনে হচ্ছিল মেসির মতো একটা দুর্দান্ত গোল করতে পেরেছি’-বলল সঞ্জয়। হাসিতে ভরে উঠল মুখ । ‘‘অথবা শাহরুখ খানের মতো একটা ছবি হিট হয়ে গেছে।’’ শাহরুখ-খানই তাঁর প্রিয় অভিনেতা। মেসির খেলা দেখে উৎসাহ পায় সঞ্জয়। উৎসাহ পায় শাহরুখের ছবি দেখেও। সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘ভাল ফল হবে আশা করেছিলাম। কিন্তু এতটা ভাল হবে সত্যিই আশা করিনি। দারুণ লাগছে।’’

কী করে সাফল্য এল? সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘রুটিন, বলে কিছু ছিল না। কোনও দিন বেশ পড়তাম কোনও দিন কম। তবে নিয়মিত পড়াটা করার দিকে মন দিতাম। কতটা পড়া রয়েছে, সেটা মেকআপ হবে কি ভাবে তা সব সময় মাথায় রাখতাম। পড়া অনেক বাকি রয়েছে এই অবস্থায় আমি খেলব বা অন্য কিছু করব এটা হতে দিতাম না। পড়ার চাপ নেই এমন হলেই খেলতাম বা সিনেমা দেখতাম। সমস্ত বিষয়েই গৃহশিক্ষক ছিল। অঙ্কে দুই জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তাম। তাতে অঙ্কের অনুশীলন ভাল হত। দুই জন শিক্ষক আলাদা বই থেকে অঙ্ক করাতেন।’’

পরীক্ষার ফলাফল বার হবে বলে স্কুলের শিক্ষকেরাও নজর রাখছিলেন। তারাও ততক্ষণে খবর জেনে গিয়েছেন। নানা জায়গা থেকে ফোন আসতে শুরু করেছে সঞ্জয় এবং তাঁর বাবা মার কাছে। জয়শঙ্করবাবু অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের সাধারণ কর্মী। তাঁর অফিসের লোকজনও ফোন করে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। শিলিগুড়ির মিলনপল্লি সরকারি আবাসনে যেখানে তাঁরা থাকেন, সেখানকার প্রতিবেশীরাও খবর পেয়ে বাড়িতে অভিনন্দন জানাতে আসছেন। তিন তলার ছোট ঘরে তখন জায়গা দেওয়া মুশকিল। সকলে মিলে তাকে নিয়ে গেলেন ছাদে। সেখানে কোলে তুলে নিয়ে প্রতিবেশী তরুণদের উচ্ছাস, আনন্দ। মিষ্টি খাওয়ানোর পালা। আবাসিকদের ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কর্মকর্তা দেবেন রাউত সেখানেই জানিয়ে দিলেন, ‘‘ওঁর জন্য আমরা গর্বিত। আগামী রবিবার সোসাইটির সভা রয়েছে। সেখানেই আমরা ওকে সংবর্ধনা দেব।’’ অভিনন্দন জানাতে হাজির ওই এলাকা ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সীমা সাহা। তিনি বলেন, ‘‘দারুণ ব্যাপার। আমাদের এলাকার নাম ও উজ্জ্বল করেছে।’’ বিকেলে শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য সঞ্জয়দের বাড়িতে যান অভিনন্দন জানাতে।

মাধ্যমিকে তাঁর স্কুলের সতীর্থ দীপমাল্য যখন রাজ্যের কৃতীদের তালিকায় তৃতীয় হয়ে স্থান করে নিয়েছিল তখন সঞ্জয় অনেক পিছনে। এ বার দীপমাল্যকে পিছনে ফেলে সে এগিয়ে গিয়েছে। স্কুলে পৌঁছতেই তাকে কোলে তুলে নিয়ে মেতে উঠলেন ছাত্ররাও। প্রধান শিক্ষক চন্দন দাস পিঠ চাপড়ে দিলেন। হাতে তুলে দিলেন রেজাল্ট এবং শংসাপত্র। প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৫। বাংলায় ৯৬, ইংরেজিতে ৯৫, রসায়নে ৯৮, অঙ্কে ৯৯, ফিজিক্সে ৯৫, বায়োলজিতে ৯৭। প্রিয় বিষয় ফিজিক্স। এই বিষয়ে অনার্স নিয়েই পড়তে চায়। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, সেন্ট জেভিয়ার্সের মতো কলকাতার ভাল কোনও কলেজে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE