Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফের খুন নওদা যদুপুরে, নেপথ্যে দ্বন্দ্বই

তৃণমূলের জাকির শেখ বনাম বকুলের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াই ফের খুন হল মালদহের কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে। বুধবার রাতে তৃণমূল নেতা জাকির শেখের ঘনিষ্ঠ সাদেক মৌমিনকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ উঠেছে দলেরই বহিষ্কৃত নেতা বকুল শেখের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নওদা যদুপুর এলাকা।

রাস্তায় সাদেক মৌমিনের দেহ রেখে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

রাস্তায় সাদেক মৌমিনের দেহ রেখে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২০
Share: Save:

তৃণমূলের জাকির শেখ বনাম বকুলের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াই ফের খুন হল মালদহের কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে। বুধবার রাতে তৃণমূল নেতা জাকির শেখের ঘনিষ্ঠ সাদেক মৌমিনকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ উঠেছে দলেরই বহিষ্কৃত নেতা বকুল শেখের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নওদা যদুপুর এলাকা। সেই সঙ্গে পুলিশের ভুমিকা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূল একাংশ নেতৃত্বের অভিযোগ, পুলিশের মদতেই এলাকায় সন্ত্রাস অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ কোনও গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে না পারায় খুন পাল্টা খুনের ঘটনা ঘটছে।

নওদা যদুপুরের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘‘এলাকায় পরপর খুনের ঘটনা ঘটছে। তবুও পুলিশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে। পুলিশ বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা বকুলকেও গ্রেফতার করতে পারছে না। এই বিষয়ে আমরা জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত সাদেক মৌমিনের বিরুদ্ধে খুন-সহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার খোঁজে তল্লাশিও চালানো হচ্ছিল। এই বিষয়ে মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। আর দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করারও চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’’

সপ্তাহ দেড়েক আগে কালিয়াচকের নওদাযদুপুরের খিকিরবনা গ্রামে দিবালোকে ইলিয়াস হক নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে খুন করা হয়। সেই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছিল তৃণমূলের গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য জাকির শেখের বিরুদ্ধে। ইলিয়াস হক ছিল বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা বকুল শেখের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ইলিয়াস খুনের ঘটনায় কালিয়াচক থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনায় রেশ কাটতে না কাটতেই ফের খুনের ঘটনা ঘটল কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে। পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাদেক মৌমিন নওদা যদুপুরের খোট্টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় দিন মজুরি করেন বলে দাবি পরিবারের। তাঁর তিন ছেলে এবং তিন মেয়ে। এ দিন রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হন সাদেক মৌমিন। তারপর থেকে তাঁর কোনও হদিশ পাননি পরিবারের লোকেরা। রাত দুটো নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দারা গুলি শব্দ শুনতে পান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচটি গুলির শব্দ শোনা যায়। বৃহস্পতিবার ভোরে গ্রামের এক আমবাগান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাদেকের মৃতদেহ দেখতে পান পরিবার-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রায় ৫০০ মিটার দূর থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, সাদেকের বুকে দুটি গুলি রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে খুন, বোমা বাজি, ছিনতাই-সহ একাধিক মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ফেরার ছিল সাদেক বলে দাবি পুলিশের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাদেক তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য জাকির শেখের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। মৃতের স্ত্রী ফরিদা বিবি বলেন, ‘‘আমার স্বামীকে তেমহনিপুর এলাকা থেকে বকুল শেখ তার দলবল নিয়ে তুলে নিয়ে যায়। আমার স্বামীকে বকুল গুলি করে খুন করেছে। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল। আমরা থানাতে অভিযোগ করেছি। আমরা চাই পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করুক।’’

কালিয়াচকের নওদাযদুপুরে এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাদ চলছে বকুল ও জাকির শেখের সঙ্গে। এলাকায় তোলাবাজি নিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দু’পক্ষের দুষ্কৃতীরা একাধিক বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সংঘর্ষের মাঝে পরে সাধারণ মানুষও আহত হচ্ছেন। এ ছাড়া দুপক্ষের হামলা পাল্টা হামলায় একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে কালিয়াচকে। এ দিনের ঘটনায় পাল্টা খুন বলেই মত স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের বক্তব্য, জাকিরের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল বকুলের অনুগামী। পুলিশ কোনও কিনারা করতে না পারায় এ দিন পাল্টা খুন হল বলে মত গ্রামবাসীদের।

তবে খুনের ঘটনায় বকুল শেখ জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা বহিষ্কৃত নেতার ভ্রাতৃবধূ ফারহানা বিবি। তিনি বলেন, ‘‘এখানে আমাদের কেউ জড়িত নয়। তাদের নিজেদের মধ্যে গোলমাল। এখন আমাদের নামে দোষ দিচ্ছে। আর এমন ঘটনার জন্য পুলিশই দায়ী। পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করলে এলাকায় এত খুনোখুনি হতো না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE