পুলিশি প্রহরা আইন কলেজে। আসেনি পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।
মাত্র এক দিন আগে সেলুনে চুল কাটার সময় কটূক্তিকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার লেগে গিয়েছিল বালুরঘাট আইন কলেজে। শুক্রবার লুকোচুরি খেলা নিয়ে মারপিট লেগে গেল বালুরঘাট কলেজে। আগের দিনের মতো এ দিনও গণ্ডগোলে নাম জড়িয়েছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দুই গোষ্ঠীর। জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নীলাঞ্জন রায়ের বক্তব্য, ‘‘টিএমসিপি-র একটি গোষ্ঠী মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর অনুগামী। অন্যটি তাদের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের অনুগামী। রোজ রোজ এই দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে জেলা শহরের পড়াশোনাই শিকেয় উঠছে।’’
আইন কলেজের গণ্ডগোল নিয়ে এমনিতেই শহর তেতে ছিল। তার উপরে এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ বালুরঘাট কলেজেও গণ্ডগোলের খবর ছড়িয়ে পড়তে শহর জুড়েই অভিভাবকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বালুরঘাট কলেজের মারপিটও কলেজ চত্বর থেকে বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপ্লববাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত টিএমসিপির তিন নেতা এ দিন দুপুরে কলেজে ঢুকে অভিযোগ করেন, দলেরই অন্য গোষ্ঠীর এক ছাত্র নেতা শুভ্র সাহা চার ছাত্রীর সঙ্গে লুকোচুরি খেলছেন। ওই তিন ছাত্র নেতা নিজেদের ছাত্র সংসদের পর্যবেক্ষক বলেও দাবি করেন। তাঁরা লুকোচুরি খেলার প্রতিবাদ করেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মারামারি শুরু হয়ে যায়। শুভ্রবাবু পরে দাবি করেন, ‘‘লুকোচুরি খেলার অভিযোগ মিথ্যা। ওই ছাত্রীরা মার্কশিট পাননি বলে ঘরে বসে আবেদন পত্র পূরণ করে দিচ্ছিলাম।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সে সময় ওরা চড়াও হয় আমাদের মারধর করে কলেজ থেকে বার করে দেয়।’’
অভিযোগ উঠেছে, এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন বহিরাগত টিএমসিপি নেতাও জড়িয়ে পড়েন। যে তিন ছাত্র নেতা নিজেদের পর্যবেক্ষক বলে দাবি করেছেন, তাঁরা কেউই কলেজের ছাত্র নন। শুভ্রবাবু ও এই চার ছাত্রীও বহিরাগত বলে কলেজ সূত্রেই জানা গিয়েছে। বালুরঘাট কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ কুণ্ডুর দাবি, ‘‘পরিচয়পত্র বিলি করা এখনও শুরু হয়নি। সে কারণেই বহিরাগতরা ঢুকে যাচ্ছে। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’ তিনি বলেন ‘‘লুকোচুরি খেলার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত হবে।’’
এই কলেজটিও টিএমসিপিরই দখলে। কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ভীম হালদারের অভিযোগ, ‘‘মন্ত্রী অনুগামী বলে পরিচয় দিয়ে তৃণমূল নেতা সুবোধ দাস কলেজে নিজের গোষ্ঠী তৈরির চেষ্টা করছেন। সুবোধবাবুরই ঘনিষ্ঠ শুভ্রবাবু।’’ যদিও, সুবোধবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের নানা সমস্যায় আমরা সহায়তা করছি দেখে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে অন্য গোষ্ঠী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে।’’
মুখে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে না চাইলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলের কোন্দল থামছে না দেখে উদ্বিগ্ন তৃণমূল নেতারাও। বালুরঘাটের সাংসদ অর্পিতা ঘোষ জানান, শিক্ষাঙ্গনে দলবাজি মানা হবে না। তৃণমূল জেলা সভাপতিরও দাবি, ‘‘অনেক হয়েছে। কলেজে যারা গোলমাল করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সময় হয়েছে।’’ পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীও জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে তিনি বলেছেন।
বৃহস্পতিবার আইন কলেজের সংঘর্ষের ঘটনায় এদিন মন্ত্রী শঙ্করবাবুর ঘনিষ্ঠ সুভাষ চাকীর অনুগামী ছাত্রদের পক্ষ থেকে বিপ্লববাবুর অনুগামী গোষ্ঠীর ১০ ছাত্রের বিরুদ্ধে বালুরঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি বিপ্লবগোষ্ঠীও পাল্টা ১১ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। ডিএসপি (সদর) সৌম্যজিত বরুয়া জানান, উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে মারপিট, ভাঙচুর এবং খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
আইন কলেজে সংঘর্ষে গুরুতর জখম তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অভিজিৎ সাহাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিজিৎবাবু সুভাষবাবুর অনুগামী বলে পরিচিত। বিপ্লববাবুর অনুগামী বিতান পালেরও বাঁ হাতের হাড় কয়েক টুকরো হয়ে যাওয়ায় তাঁকেও রায়গঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এদিন বালুরঘাট আইন কলেজের পরিস্থিতি ছিল থমথমে। কলেজে বসেছে পুলিশ পিকেট। টিএমসিপির জেলা সভাপতি অতনু রায় এদিন ল কলেজে গিয়ে ছাত্র সংসদের ইউনিট ভেঙে দেওয়া হলো বলে ঘোষণা করেন। অতনু বলেন, ‘‘রাতেই খবর পেয়ে রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বালুরঘাট আই কলেজের টিএমসিপি ইউনিট ভেঙে দিয়েছেন। এদিন তা সকলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy