Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ফের সন্ত্রাসের নালিশ বামেদের

পঞ্চায়েতের পর লোকসভা। ফের শাসকদলের নামে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলল বামেরা। খুনের মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা, লোকসভা ভোটের সময় এলাকায় ‘ভয়ের পরিবেশ’ তৈরি করছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে সিপিএম।

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪৭
Share: Save:

পঞ্চায়েতের পর লোকসভা। ফের শাসকদলের নামে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলল বামেরা। খুনের মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা, লোকসভা ভোটের সময় এলাকায় ‘ভয়ের পরিবেশ’ তৈরি করছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে সিপিএম। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

সিপিএমের অভিযোগ, দু’টি খুনের মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা শুকদেবপুর, বেলবাড়ি-টু, দমদমা, নন্দনপুর, গঙ্গারামপুর-সহ ১৯ এলাকায় দলের কর্মীদের নানা ভাবে ভয় দেখানো, হুমকি দিচ্ছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরীর অভিযোগ, “প্রত্যক্ষভাবে ২০-২৫ জন হুমকি দিচ্ছে। পরোক্ষভাবেও অনেকে হুমকি দিচ্ছে।” পুলিশ সুত্রের খবর, ২০১২-এর ২২ অক্টোবর গঙ্গারামপুর থানার হোসেনপুরে সিপিএম কর্মী কৃষকসভার স্থানীয় নেতা আজিজুল ইসলামকে (৩২) খুনের ঘটনা ঘটে। নিহতের বাবা মনিরুদ্দিন মিঁয়া ছেলেকে খুনের অভিযোগে তৃণমূল কর্মী সমর্থক ৬৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। ২০০৯ সালে ১৭ মার্চ গঙ্গারামপুর থানার নন্দনপুরের হাপুনিয়া এলাকায় সিপিএম সমর্থক মাছ ব্যবসায়ী আনসারউদ্দিন খুন হন। নিহতের বাবা আবসার আলি ৯৫ জন তৃণমূল কর্মী সমর্থকের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ, অস্ত্র রাখা সহ একাধিক অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। সে ক্ষেত্রেও অভিযুক্তরা অধরাই থেকে গিয়েছে বলে সিপিএমের দাবি। তারাই এলাকায় ‘ভয়ের পরিবেশ’ তৈরি করছে বলে দাবি মানবেশবাবুর।

সিপিএমের দাবি, জেলা প্রশাসন তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিককে জানালেও কাজ হয়নি। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে ওই এলাকায় বামেদের বেশ কিছু প্রার্থীর মনোনয়ন হুমকি দিয়ে প্রত্যাহার করানোর অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। লোকসভা ভোটেও ওই এলাকাগুলি নিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে বামেরা। জেলার নির্বাচন আধিকারিক তথা জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “নির্বাচন সংক্রান্ত সব অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরা হয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক দিন আগে দু’টি মামলাতেই কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”

গঙ্গারামপুর এলাকার ওই ১৯টি জায়গার উল্লেখ করে অভিযুক্তদের তালিকা দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা নির্বাচন আধিকারিককে জমা দিয়েছে সিপিএম। অভিযোগ, গঙ্গারামপুরের অন্তত ২০০-র বেশি দাগি আসামির নামের তালিকা দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়। সেই তালিকায় নাম থাকা একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ।

সিপিএমের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিপ্লব মিত্র। তাঁর কথায়, “যে খুনের কথা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নেই। জমি জায়গা সংক্রান্ত গ্রাম্য বিবাদ থেকে ঘটনাগুলি ঘটেছিল। ভোটের মুখে মিথ্যে রাজনীতির রং দিয়ে ভুয়ো অভিযোগ তুলে সিপিএম এখন অপপ্রচারে নেমেছে।”

মানবেশবাবুর কটাক্ষ, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে গঙ্গারামপুরের দমদমা কৃষি সমবায় সমিতির নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের হামলায় জয়ী নেতা অচিন্ত্য চক্রবর্তী জখম হন। প্রতিবাদে পথ অবরোধ হয়। উল্টে পুলিশ আমাকে ও প্রাক্তন সিপিএমমন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাসকে একাধিক মামলায় অভিযুক্ত করে। বাড়ি এবং পার্টি অফিসে হানা দেয়। অচিন্ত্যকে গ্রেফতার করে। গঙ্গারামপুর পুর চেয়ারম্যান, প্রাক্তন চেয়ারম্যান, জোনাল সম্পাদককে গ্রেফতার করে। অথচ আমাদের দলের কর্মীদের খুনের মামলায় তৎপরতা দেখাচ্ছে না পুলিশ।”

বাহিনী এল। দক্ষিণ দিনাজপুরের দূরবর্তী বুথগুলিতে আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ কর্মীরা বুথে এলেন মঙ্গলবার। আজ, বুধবার ভোট কর্মীরা বুথে পৌঁছোনোর আগে পুলিশ কর্মীরা বুথে পৌঁছে যাবেন বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন আধিকারিক তাপস চৌধুরী। বালুরঘাটের সাতটি বিধানসভা এলাকায় ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। ১৪৮৭টি বুথের মধ্যে অতি স্পর্শকাতর ১৯৩টি বুথের প্রতিটিতে ৪ জন করে আধাসামরিক বাহিনী থাকছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE