Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বাজার আগুন, বন্ধের মুখে সব্জি ব্যবসা

পুজোর মুখে আকাশ ছোঁয়া সব্জির দামে পুড়ছে বাজার। লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলা দামে এক দিকে ক্রেতাদের ঘাম ছুটছে, অন্য দিকে পুঁজির অভাবে নিরুপায় ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা দোকানের ঝাঁপ গুটিয়ে পেশা পাল্টাতে শুরু করেছেন। শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি দিনবাজারেই অন্তত পঞ্চাশ জন সব্জি বিক্রেতা অন্য কাজে চলে গিয়েছেন। একই ছবি ময়নাগুড়ি বাজারের। যে ব্যবসায়ীরা টিকে আছেন, বিক্রি কমে যাওয়ায় তাঁদের মাথায় হাত পড়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

পুজোর মুখে আকাশ ছোঁয়া সব্জির দামে পুড়ছে বাজার। লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলা দামে এক দিকে ক্রেতাদের ঘাম ছুটছে, অন্য দিকে পুঁজির অভাবে নিরুপায় ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা দোকানের ঝাঁপ গুটিয়ে পেশা পাল্টাতে শুরু করেছেন। শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি দিনবাজারেই অন্তত পঞ্চাশ জন সব্জি বিক্রেতা অন্য কাজে চলে গিয়েছেন। একই ছবি ময়নাগুড়ি বাজারের। যে ব্যবসায়ীরা টিকে আছেন, বিক্রি কমে যাওয়ায় তাঁদের মাথায় হাত পড়েছে।

দোকানে থরেথরে সাজানো সবুজ সব্জির দেখা মেলা যেন বিরল হয়ে যেতে বসেছে। যা সামান্য কিছু মিলছে, দাম শুনে থমকে দাঁড়াতে হচ্ছে খদ্দেরকে। শীতের বেগুন থেকে পালং ছুঁয়ে দেখা সম্ভব হচ্ছে না অনেকেরই। ভেন্ডি, গাজর, বরবটি, বিনসের কেজি প্রতি দাম ৮০ টাকায় পৌঁছেছে। একটি লাউ ডগার দাম ১০ টাকা। শীতের বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা কেজি দামে। ঝিঙা, পটল ও ফুলকপির দাম ৬০ টাকা কেজির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। পালং ৮০ টাকা কেজি। কুমড়ো ৩০ টাকা, শসা ও মুলা ৪০ টাকা, পুই শাক ৩০ টাকা কেজি দামের নিচে নামছে না কিছুতে। একমাত্র সস্তা স্কোয়াশ। ১৬ টাকা কেজি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে সামান্য কিছু আনাজপাতি কিনতে পাঁচশো টাকায় কুলাচ্ছে না। পরিমাণ অর্ধেক করে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমতা আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু হচ্ছে কোথায়! পেশায় শিক্ষক সমাজপাড়ার বাসিন্দা অরূপ বিশ্বাস দিনবাজারের করলা সেতুতে দাঁড়িয়ে বলেন, “পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে সবজি কেনার চেয়ে মাছ খাওয়া ভাল। না কিনলে নয় এমন কিছু সব্জি কিনছি।”

শুধু অরূপবাবু নয়। বেড়ে চলা আনাজের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে বেশির ভাগ খদ্দের কৌশল পাল্টে নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। দিনভর বসে থেকে ২০ কেজি বেগুন বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। অন্য সব্জিরও একই দশা। এত দিন দোকানগুলিতে যে ভাবে থরেথরে সব্জি সাজানো থাকত, তা গত অগস্ট মাস থেকেই আর নেই। সামান্য কিছু পটল, মুলো, স্কোয়াশ, পটল, লঙ্কা নিয়ে বেশির ভাগ বিক্রেতা বসে আছেন খদ্দেরের আশায়।

বাজারের এমন পরিস্থিতি কেন?

দিনবাজার সব্জি ব্যবসায়ী সমিতির সকারী সম্পাদক হরিবালা রায় জানান, একে সব্জির যোগান নেই। যতটুকু আসছে দামের জন্য কিনতে ব্যবসায়ীদের কালঘাম ছুটছে। তার পরে বাজারে নিয়ে যাওয়া হলে দাম শুনে ক্রেতা চলে যাচ্ছেন। এক দিকে যেমন অনেক ব্যবসায়ী দামের জন্য পাইকারি বাজার থেকে সব্জি কিনতে পারছে না। অন্য দিকে যাঁরা কিনছেন, চটজলদি বিক্রি না হওয়ায় তাঁদের লোকসান বাড়ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে দোকান তুলে দিয়ে অন্য কাজ খুঁজে নিচ্ছেন।

সবজি ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে দিনবাজারের অন্তত ৫০ জন সবজি বিক্রেতা অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। রণজিৎ সাহা, দেবল দাসের মত কয়েকজন পেশা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। ময়নাগুড়ি পুরাতন বাজারের সবজি ব্যবসায়ী পরিমল রায় জানান, অনেক খোঁজ করে চড়া দামে সবজি কিনে আনার পরেও দামের জন্য বিক্রি হচ্ছে না। এক মাস আগে দিনে ৪০ কেজি বেগুন বিক্রি হত। এখন দিনে ১০ কেজি বিক্রি করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন এমনটা হবে না। পরিমলবাবু বলেন, “বেশিরভাগ ক্রেতা আড়াইশো গ্রাম পেঁয়াজ, এক কেজি আলু, সামান্য লঙ্কা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ওই পরিস্থিতিতে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের অনেকে দোকান খুলে রাখতে পারছেন না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE